পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পাবনার বেড়া উপজেলার রূপপুর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী আবুল হাশেম উজ্জলের প্রধান নির্বাচনি এজেন্ট ইমরান হোসেন সাদ্দামকে পিটিয়ে গুরুত্বর জখম করেছে প্রতিপক্ষ।
রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দেড় বছরের শিশুসন্তানকে নিয়ে বাড়ির পাশের মাঠে ঘুরতে যান সাদ্দাম। এ সময় আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম মোহনের সমর্থকরা তার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।
হামলার সময় কোলে থাকা সন্তানকে দূরে ছুড়ে ফেলে দিয়ে সাদ্দামকে রড ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পালিয়ে যায় প্রতিপক্ষ।
বেড়া উপজেলার ঢালারচর ও চাকলা ইউনিয়নেও ঘটেছে সংঘাত। বহিরাগতদের সশস্ত্র মহড়া আতঙ্ক ছড়াচ্ছে সাধারণের মনে। গত কয়েক দিনে নির্বাচনি প্রচারে বাধা দেয়ার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ছাড়াও নির্বাচনি কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে এসব ইউনিয়নে।
সর্বশেষ রূপপুর ইউনিয়নে নৌকার এজেন্টের ওপর হামলার ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
রূপপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আসন্ন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী আবুল হাশেম উজ্জল বলেন, ‘জনগণের সমর্থন না পেয়ে আনারসের প্রার্থী মোহন ও তার সমর্থকরা আমার কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে। আমি এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ধরে রাখতে তাদের উসকানিকে তেমন গুরুত্ব দিইনি।
‘রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আনারসের সমর্থক সুজন, শফিক, শিহাব ও তিতাসের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা আমার ভাগ্নে ও প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট সাদ্দামকে হত্যার উদ্দেশ্যে নৃশংস আক্রমণ করেছে। তার দেড় বছরের শিশুসন্তানকে কোল থেকে কেড়ে নিয়ে তাকেও আঘাত করেছে।’
হামলার ঘটনায় গুরুতর আহত সাদ্দামকে স্বজনরা উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।
সাদ্দামের সঙ্গে হাসপাতালে অবস্থান করা তার স্ত্রী তিশা বলেন, ‘নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করায় আমার স্বামীকে হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে। আমার শিশুপুত্র তাসিনকেও তারা মেরেছে। বাবাকে মার খেতে দেখে সেও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। কিছুতেই তার কান্না থামাতে পারছি না।’
পাবনা সদর হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের কনসালট্যান্ট জাহেদী হাসান রুমী জানিয়েছেন, সাদ্দামের মাথা ও পুরো শরীর থেঁতলে দেয়া হয়েছে। তার আঘাত গুরুতর। সিটিস্ক্যানের পর প্রকৃত অবস্থা বোঝা যাবে।
আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রওশন আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। জড়িতদের আটকে অভিযান চলছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনও করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
তবে এ ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন আনারস প্রতীকের প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম মোহন।
তিনি বলেন, ‘সাদ্দামের ওপর কারা হামলা করেছে আমার জানা নেই।’
এই হামলার সঙ্গে নির্বাচনের সম্পর্ক নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
এদিকে পঞ্চম দফা ইউপি নির্বাচন ঘিরে অশান্ত হয়ে উঠছে একসময়ের চরমপন্থিদের অভয়ারণ্য আমিনপুর থানার ঢালারচর ইউনিয়নও। দূরবর্তী ও গহিন চরে রাজবাড়ী জেলার সীমান্তবর্তী এই ইউনিয়নে অতীতে প্রায় প্রতিটি ইউপি নির্বাচনেই প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচন সামনে রেখে সশস্ত্র মহড়াও চলছে সেখানে।
সহিংসতার অভিযোগ উঠেছে নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধেও। শনিবার ঢালারচর ইউপির কাজীপাড়া ও রামনারায়ণপুরে ভোট চাওয়ার সময় স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মোমিনুর রহমানের সমর্থকদের হাতুড়ি, রড ও পাইপ দিয়ে পিটিয়ে আহত করে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী কোরবান আলী সরদারের ছেলে নাসিমের নেতৃত্বাধীন বহিরাগত অস্ত্রধারীরা।
মোমিন দাবি করেছেন, ঢালারচরের মানুষ নৌকার প্রার্থীকে প্রত্যাখ্যান করেছে। জনগণের সাড়া না পেয়ে তাই তিনি চরমপন্থি সন্ত্রাসীদের দিয়ে ভোট ডাকাতির পরিকল্পনা করেছেন। তারা নৌকা ছাড়া কোনো প্রতীকে ভোট দিতে দেয়া হবে না বলে প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে।
তবে প্রচারে বাধা দেয়ার অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী কোরবান আলী সরদার। তিনি বলেন, ‘মোমিন নির্বাচনে জনসমর্থন না পেয়ে বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছে।’
আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রওশন আলী জানিয়েছেন, বহিরাগত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান বাড়ানো হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সব ব্যবস্থা নেয়া হবে।