আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী দল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার মতে, ক্ষমতাসীন দলটির সন্ত্রাসী কার্যক্রমের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে রোববার সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব মন্তব্য করেন। সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সমাবেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলার প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলন করেন দলটির মহাসচিব।
ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বেসিক্যালি একটি সন্ত্রাসী দল। দলটির জন্ম থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সন্ত্রাস ছাড়া কোনো দিন টিকে থাকতে পারেনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার চেয়ে ১৭৩ দিন হরতাল পালন করেছিল আওয়ামী লীগ। তখন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে তারা গান পাউডার দিয়ে বাস পুড়িয়ে দেয়। এই ঘটনায় ১১ জনকে হত্যা করেছিল তারা।
‘এটা নতুন কোনো ব্যাপার না। সেই পাকিস্তান আমলে অ্যাসেমব্লির মধ্যে ডেপুটি স্পিকার শাহেদ আলীকে পিটিয়ে হত্যা করার মধ্য দিয়ে শুরু। তারপর সবকিছুর মধ্যে তাদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সব থেকে বড় হাতিয়ার।’
সিরাজগঞ্জে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে বিএনপির সমাবেশ ঘিরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের শতাধিক আহত হন।
এ ঘটনায় চারটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আট শতাধিক জনের নামে এবং অজ্ঞাতপরিচয় এক হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মামলার কারণে বিএনপির নেতাকর্মীরা বাড়িতে থাকতে পারছেন না। শনিবার চারজন নেতাকর্মীকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে গেছে।
এসব নেতাকর্মীর অবিলম্বে মুক্তি চেয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই যে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের যে প্রক্রিয়া আমরা শুরু করেছি, তাতে ভীত হয়ে আওয়ামী লীগ এবং অগণতান্ত্রিক ও অনির্বাচিত সরকার আক্রমণের পর আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে।
‘এসব দেখে আমার একটি বিশ্বাস জন্মেছে, এই সরকার আর একবারের জন্যও ক্ষমতায় আসুক বা থাকুক, সেটা এ দেশের জনগণ চায় না।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে সিরাজগঞ্জের সমাবেশে হামলার ঘটনা তুলে ধরেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
তিনি জানান, প্রকাশ্য দিবালোকে একডালা মাথাপাড়ার বায়েজিদ, দত্তবাড়ির সুজয়, কোলগয়লার সুমন ও কোলগয়লার জনি চারটি পিস্তলসহকারে হামলা চালায়। পিস্তলধারীদের হামলার দৃশ্য প্রায় সব টিভি মিডিয়ায় ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে এবং প্রিন্ট মিডিয়ায় ছবি প্রকাশিত হয়েছে।
টুকু বলেন, প্রথমেই কাজীপুর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক জুয়েল রানা চাপাতির কোপে আহত হয়। উপস্থিত সিরাজগঞ্জের নির্যাতিত, নিপীড়িত জনতা ও আমাদের নেতাকর্মীরা এ সময় আত্মরক্ষার্থে খালি হাতেই প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে জেলায় জেলায় সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এসব জেলা সমাবেশে হবিগঞ্জ, পটুয়াখালী, ঝিনাইদহ ও সিরাজগঞ্জে বড় ধরনের হামলা হয়েছে। ফেনী ও যশোরে ১৪৪ ধারা ভেঙে সমাবেশ করে বিএনপি। নওগাঁয় সমাবেশ করতে পারেনি এবং মহাসচিবের নিজ জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশি বাধার কারণে সমাবেশ বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মশিউর রহমান, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, বিদেশবিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন, তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন নসু, চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান ও শামসুদ্দিন দিদার।