স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ বাংলাদেশের জন্য এক অনন্য মাইলফলক বলে জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনি বলেছেন, মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সন্ধিক্ষণে এই অর্জন যুক্ত করেছে এক নতুন গৌররোজ্জ্বল অধ্যায়।
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ উদযাপন অনুষ্ঠানে রোববার এ কথা বলেন স্পিকার। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ।
গত ২৪ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রস্তাবে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।
এর আগে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণে যোগ্যতা অর্জনে সুপারিশ লাভ করে।
জাতিসংঘের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি লাভের পর এই অর্জন জাতির সামনে তুলে ধরতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সরকার। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, স্পিকার শিরীন শারমিনও।
বাংলাদেশের অগ্রগতি নিয়ে প্রমাণ্যচিত্র এবং সাধারণ জনগণের অনুভূতি তুলে ধরা হয় অনুষ্ঠানে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকাসহ বাংলাদশের উন্নয়ন সহযোগীর প্রতিনিধিরা ভিডিওবার্তা দেন। এ অর্জনে সরকারকে আন্তরিক অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি উন্নয়নের সবক্ষেত্রে বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে আশ্বস্ত করেন তারা।
অনুষ্ঠানে স্পিকার বলেন, ‘স্বাধীনতা-পরবর্তী যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গঠনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পান। জাতির পিতা বিশ্বাস করতেন, এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে, যদি বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না খেতে পারে।
‘সংবিধান প্রণয়ন, প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিককরণ, শিক্ষা কমিশন গঠন, ভারতের সঙ্গে স্থল সীমানা চুক্তিসহ বহুবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, যা সোনার বাংলা গড়ে তোলার ভিত রচনা করেন। পিতার অপূর্ণ স্বপ্ন সোনার বাংলা গড়ে তোলার পক্ষে কাজ করছেন তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’
শিরীন শারমিন বলেন, ‘একসময় তলাবিহীন ঝুড়ি বলে যে কটাক্ষ করা হতো, সুবর্ণজয়ন্তী পালনের এই লগ্নে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে ভিন্ন মর্যদার আসন স্থান করে নিয়েছে।’
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের উদ্ধৃতি দিয়ে শিরীন শারমিন বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ও সিঙ্গাপুরের পর বাংলাদেশ হবে এশিয়ার পরবর্তী উদীয়মান ব্যাঘ্র।
তার মতে, বাংলাদেশের উত্তরণের ক্ষেত্রে আরেকটি অন্যতম সোপান হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সেবা প্রত্যন্ত অঞ্চলে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়েছে।
স্পিকার বলেন, ২০০৯ সালে দ্রারিদ্র্যের হার শতকরা ৪০ থেকে বর্তমানে শতকরা ২১ ভাগে হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে। হতদরিদ্র যারা সমাজে সর্বাধিক ঝুঁকিতে রয়েছে তাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতির কাঠামোর আওতায় আনায় দারিদ্র্য বিমোচেনে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে।’
শিরীন শারমিন তার বক্তব্যে বর্তমান সরকারের কল্যাণমুখী কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন। এসবের মধ্যে রয়েছে সর্বজনীন শিক্ষা, জনমুখী স্বাস্থ্যসেবা, কমিউনিটি ক্লিনিক, বিনা মূল্যে ওষুধ বিতরণ, বিনা মূল্যে পাঠ্যপুস্তক বই বিতরণ, উপবৃত্তি প্রদান, ১০ টাকায় কৃষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট চালু।