বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সেই চেচুয়া বিলে শাপলার রাজত্ব

  •    
  • ২ জানুয়ারি, ২০২২ ১৩:১২

ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজের শিক্ষক আ শ ম হেফজুল করিম বলেন, ‘লাল শাপলার সঙ্গে ভাসমান কচু ফুলের সাদা আভা বিলের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে বহুগুণ। জলের ওপর বিছানো সবুজ পাতা ভেদ করে হাসছে একেকটি শাপলা। দেখলে মনে হয় লাল শাপলা যেন রঙের গালিচা বিছিয়ে দিয়েছে বিলজুড়ে।’

ময়মনসিংহের ত্রিশালের রামপুর ইউনিয়নের চেচুয়া বিলে মাথা উঁচু করে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে শাপলা। যত দূর চোখ যায় রক্তিম আভার হাতছানি।

সাদা ও বেগুনি শাপলাও রয়েছে। প্রায় ২০ একর আয়তনের এই বিলে শাপলা দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে নানা বয়সী লোকজন এসেছেন। কেউ বিলের পাড়ে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছেন, আবার কেউ নৌকা নিয়ে বিল ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অনেকে ফুল তুলে বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন।

ভালুকা থেকে পাঁচ বন্ধু বিলের সৌন্দর্য দেখতে এসেছেন। নৌকায় উঠে ঘোরার আগে কথা হয় তাদের সঙ্গে।

আদনান নামের একজন বলেন, ‘আমরা ময়মনসিংহ শহরের জয়নুল আবেদীন পার্কে এসেছিলাম ঘুরতে। এ সময় এক বন্ধু চেচুয়া বিলে শাপলা দেখার কথা বলল। এ জন্য সবাই মিলে চলে এসেছি। ফুটন্ত শাপলার এমন দৃশ্য স্মৃতি হয়ে থাকবে।’

ফয়সাল নামের আরেকজন বলেন, ‘শুধু মুখে শুনেছি শাপলার জন্য বিখ্যাত এই বিল। নিজে এসেও তার প্রমাণ পেলাম। চোখ জুড়ানো সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছি। কেউ একবার এ বিলে এলে, বারবার আসতে চাইবে।’

হালুয়াঘাট থেকে আসা জাহাঙ্গীর নামের এক যুবক বলেন, ‘ফেসবুকে এ বিলে লাল শাপলার ছবি দেখে এলাকার তিনজন মোটরসাইকেলে এসেছি। এ যেন নয়নাভিরাম সৌন্দর্য। তবে এ সৌন্দর্য নষ্ট করছে অনেকে।

‘শাপলাগুলো ছিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছে বাড়িতে। কেউ কেউ শাপলা ছিঁড়ে ছবি তুলে কিছুক্ষণ পর আবার ওই বিলেই ফেলে দিচ্ছে। এমন আনন্দ করতে গিয়ে সুন্দর পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে।’

স্থানীয়রা জানান, সারা দেশের মানুষ এই বিলকে প্রথমে চিনেছে একটি গুজবকে কেন্দ্র করে। ২০১৮ সালের অক্টোবরের শুরুতে কিছু লোক দেখতে পান সেখানে থাকা জমাটবাঁধা কচু হঠাৎ সরে গিয়ে অনেকটা জায়গা ফাঁকা হয়েছে।

এটাকে অলৌকিক ভেবে কয়েকজন এখানে গোসল করেন এবং এর পানি খেয়ে রোগ থেকে মুক্ত হয়েছেন বলে দাবি করেন। পরে এটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

এরপর সারা দেশের হাজার হাজার মানুষ কাদামাখা পানিতে গোসল, গড়াগড়ি ও কাদাযুক্ত পানি সংগ্রহ করতে এখানে ভিড় করেন। এভাবেই পরিচিতি ঘটে এ বিলের।

আফজালুল হক, শাকিল আহমেদ ও জয়নাল আবেদীন নামে স্থানীয় কয়েকজন বলেন, ‘সূর্য প্রখর হওয়ার পর আস্তে আস্তে বুজে যায় শাপলা, ফোটে আবার রাতের বেলা। এমন ঘটনার সাক্ষী হতে পর্যটকরাও অনেক সময় অপেক্ষা করেন বেশ রাত পর্যন্ত।

‘শুক্র-শনিসহ সরকারি ছুটির দিনে দর্শনার্থীর ঢল নামে। তারা পরিবার-বন্ধু-স্বজন নিয়ে বিলে নৌকায় বেড়িয়ে আনন্দ করেন।’

তারা জানান, শিশির ভেজা রোদমাখা সকালের জলাশয়ে চোখ পড়লে রং-বেরঙের শাপলার বাহারি রূপ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। দর্শনার্থীদের পদচারণে বিলটি যেন পর্যটনকেন্দ্র হয়ে উঠেছে।

ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আ শ ম হেফজুল করিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রকৃতির অপরূপ রূপে সজ্জিত এই বিল।

‘লাল শাপলার সঙ্গে ভাসমান কচু ফুলের সাদা আভা বিলের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে বহুগুণ। জলের ওপর বিছানো সবুজ পাতা ভেদ করে হাসছে একেকটি শাপলা। দেখলে মনে হয় লাল শাপলা যেন রঙের গালিচা বিছিয়ে দিয়েছে বিলজুড়ে।’

তিনি বলেন, ‘বিলের মধ্যে না নেমে যদি এর আশপাশের আইল দিয়ে ফুলের সৌন্দর্য দেখার সুযোগ থাকত তাহলে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পেত অনেক ফুল। এ ছাড়া ফুল তোলা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘সৌন্দর্য রক্ষায় এরই মধ্যে স্থানীয়ভাবে এই বিলে ফুল তুলে বিক্রি করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের প্রকৃতি উপভোগে সব ধরনের সহযোগিতা ও পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

এই বিলে যেতে হলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ডে নামতে হবে। এরপর বালিপাড়া রোডে অটোরিকশা করে জনপ্রতি ১০ টাকা ভাড়া দিয়ে পৌঁছাতে হবে রামপুরার ঠাকুরবাড়ি মোড়ে। পরে চেচুয়া বিল পর্যন্ত ভ্যান কিংবা হেঁটে দুইভাবে যাওয়া যায়। ভ্যানে যেতে সময় লাগবে পাঁচ মিনিটের মতো। এরপর সাত-আটটি ধানক্ষেতের আইল ধরে হেঁটে যেতে হবে শাপলা বিলে।

এ বিভাগের আরো খবর