বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জীবনের পরোয়া নয়, উন্নয়নই লক্ষ্য: প্রধানমন্ত্রী

  •    
  • ২ জানুয়ারি, ২০২২ ১২:৫৬

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেকোনো সময় আমি জানি অনেক বুলেট, বোমা, গ্রেনেড আমার জন্য অপেক্ষা করছে, আমি কখনও সেগুলো পরোয়া করি না। আমি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করি।’

বুলেট, বোমা, গ্রেনেড অপেক্ষায় থাকলেও জীবনের পরোয়া করেন না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনই তার লক্ষ্য।

তাই উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণকে টেকসই করতে ‘জাতীয় মসৃণ উত্তরণ কৌশল’ নামের একটি জাতীয় দলিল তৈরির কথা জানালেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। দলিলটিতে সম্ভাবনা কাজে লাগানোর পাশাপাশি ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সব ধরনের দিক-নির্দেশনাসহ কার্যকর কৌশল রাখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন সরকারপ্রধান।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রোববার সকালে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের দেয়া স্বীকৃতি আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন তিনি।

জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে তার কন্যা বলেন, ‘আমি জানি স্বাধীনচেতা হলে পরে অনেক বাধা আসে। দেশকে ভালোবেসে, শুধু দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে যারা পথ চলে, তাদের পথ চলা কখনও সহজ হয় না। অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয়।’

সব বাধা বিপত্তি অতিক্রম এগিয়ে যাওয়ার সংকল্পের কথা জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘চলার পথ যত অন্ধকারাচ্ছন্ন হোক না কেন, যত বন্ধুর হোক না কেন, যত কণ্টকাকীর্ণ হোক সেখানে আমরা থেমে থাকব না।

‘অন্তত আমি এই প্রতিজ্ঞা করছি, থেমে থাকব না। চলার পথ যত কণ্টকাকীর্ণ হোক, যত রক্তক্ষরণ হোক, সব পদদলিত করে বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে এগিয়ে যাব। এটাই হচ্ছে আমার প্রতিজ্ঞা।’

এসময় আবেগঘন কণ্ঠে রবার্ট ফ্রস্টের কবিতা পাঠ করে শোনান প্রধানমন্ত্রী।

‘দ্য উডস আর লাভলি, ডার্ক অ্যান্ড ডিপ

বাট আই হ্যাভ প্রমিসেস টু কিপ

অ্যান্ড মাইলস টু গো বিফোর আই স্লিপ

অ্যান্ড মাইলস টু গো বিফোর আই স্লিপ।’

কবিতা পাঠ শেষে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘যেকোনো সময় আমি জানি অনেক বুলেট, বোমা, গ্রেনেড আমার জন্য অপেক্ষা করছে, আমি কখনও সেগুলো পরোয়া করি না। আমি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করি।’

‘জোরসে চলো বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই আয়োজনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণকে টেকসই করতে একটি জাতীয় মসৃণ উত্তরণ কৌশল বা স্মুথ ট্রানজিশান স্ট্যাটেজি প্রণয়নের কাজ হাতে নিয়েছি। এই জাতীয় দলিলে উত্তরণের সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সব ধরনের দিক-নির্দেশনাসহ কার্যকর কৌশল থাকতে হবে।

‘সম্যক গবেষণা ও সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে একটি প্রমাণনির্ভর সময়োপযোগী কার্যকর কৌশল প্রণয়নে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানাই।’

বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় দেশের নতুন ও তরুণ প্রজন্মকে হাল ধরার আহ্বান জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘চিরদিন কেউ বাঁচে না, কিন্তু যে কাজ আমরা করে গেলাম সে গতি যেন হারিয়ে না যায়, চলার গতি যেন অব্যাহত থাকে। বাংলাদেশ যেন এগিয়ে যায়, সেটাই আমরা চাই।

‘আর নতুন প্রজন্মের কাছে এটাই আমাদের দাবি। অন্তত আমি তাদের এইটুকু আহ্বান করব, দেশকে ভালোবাসবে, মানুষকে ভালোবাসবে, দেশের মানুষের জন্য কাজ করবে- সেখানেই শান্তি, সেখানেই অগ্রগতি, সেখানেই উন্নতি, সেখানেই স্বস্তি।’

‘এই উত্তরণ হঠাৎ নয়’

জনগণের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং আওয়ামী লীগ সরকারের ১৩ বছরের অপ্রতিরোধ্য উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশ করেছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আজকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ। এটা হঠাৎ করে আসে না। সুষ্ঠু পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি। প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করেছি। আশুকরণীয় মধ্যমেয়াদি, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছি। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করেছি। আমরা পরিকল্পিতভাবে এগিয়েছি বলেই আজকে আমাদের এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। এটা আমরা ধরে রাখতে চাই। কারণ বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাব।’

এই অর্জনের জন্য দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি এই অর্জনে বন্ধুপ্রতীম যেসব দেশ পাশে থেকে সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশকে সেসব দেশের প্রতিও ধন্যবাদ জানান সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে বাংলাদেশ প্রথম স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছিল। প্রকৃতপক্ষে ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংক আমাদের নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি দিয়েছিল। সেখানে আমরা থেমে থাকিনি, এগিয়ে চলেছি। আমরা সব শর্ত পূরণ করে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছি যাতে চূড়ান্ত স্বীকৃতি পাই। ২০২১-এর ২৪ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে।’

২০০৯ সাল থেকে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা ও সরকারের ধারাবাহিকতার কারণে উন্নয়ন দৃশ্যমান হয়েছে বলেও মনে করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

তিনি বলেন, ‘এ সাফল্যের জন্য আমি সবাইকে বাহবা দিই। সবাইকে ধন্যবাদ দিই। কারণ সবার সহযোগিতা না পেলে এই উত্তরণ সম্ভব হতো না। ১৩ বছরে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছি। বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ও মাথাপিছু আয় গত ১৩ বছরে প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।’

বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩১তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৫৪ ডলার। আইএমএফ-এর হিসাব মতে ২০২৬ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতিতে পরিণত হবে। ১৩ বছর সময়কালে আমাদের গড় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬.৩ শতাংশ, যেখানে উন্নয়নশীল দেশগুলোর গড় প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৫.১ শতাংশ।’

২০০৮-০৯ অর্থ বছরের তুলনায় রপ্তানি আয় এবং প্রবাস আয় বেড়েছে প্রায় আড়াই গুণ বেড়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি, এতে ৯ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। বাংলাদেশ বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক সূচকের উন্নয়নে প্রতিবেশী দেশগুলোকেও ছাড়িয়ে গেছে। আমরা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়িয়েছি।’

দেশের দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৫ সালে দরিদ্র ও হতদরিদ্রের হার ছিল যথাক্রমে ৪০ ও ২৫.১ শতাংশ, যা কমে বর্তমানে যথাক্রমে ২০.৫ ও ১০.৫ শতাংশ।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। চাষ উপযোগী জমি সীমিত। তাই আমরা গবেষণায় সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। আজকে গবেষণার মাধ্যমে আমি বলতে পারি বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।’

করোনামহামারিতে দেশের অর্থনীতি সচল রাখা হয়েছে বলেও জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘মানুষকে নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছি। ১ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছি। মানুষকে বিনামূল্যে টিকা দিচ্ছি। ইতোমধ্যে প্রায় ১৩ কোটি ডোজ দেয়া সম্পন্ন হয়েছে। বুস্টার ডোজ প্রদানও শুরু করেছি।’

শেখ হাসিনার দৃঢ় বিশ্বাস, বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জন, ২০৩১-এর মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ এ উচ্চ আয়ের উন্নত-সমৃদ্ধ মর্যাদাশীল দেশে পরিণত হবে।

এ বিভাগের আরো খবর