দুর্নীতিকে ক্যানসার উল্লেখ করে সদ্য নিয়োগ পাওয়া প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, দুর্নীতির বিষয়ে নো কম্প্রোমাইজ।
তিনি বলেন, ‘আঙুলে ক্যানসার হলে যেমন কেটে ফেলতে হয়, দুর্নীতিও তেমনি।’
রোববার এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে এমন কথা বলেন।
এ সময় তিনি মামলার জট কমানো, বিচার বিভাগ থেকে দুর্নীতি দূর করা, বার ও বেঞ্চের মধ্যে সমন্বয়ে কাজ করার কথা বলেন।
দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে কে নিয়োগ পাচ্ছেন, তা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনা চলছিল। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের বিষয়টি অনুমোদন দেন রাষ্ট্রপতি।
পরের দিন শুক্রবার দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন আপিল বিভাগের এই বিচারক।
তাকে শপথ পড়ান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ ছাড়া ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী উচ্চ আদালতে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগে একজন সফল আইনজীবী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। আইনজীবী হিসেবে তিনি খুলনা সিটি করপোরেশন, কুষ্টিয়া পৌরসভা, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন সংস্থা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান আইন উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
আবদুর গফুর মোল্লা ও নূরজাহান বেগম দম্পতির সন্তান হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর জন্ম ১৯৫৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার রমানাথপুর গ্রামে।
তিনি ১৯৭২ সালে খোকসা জানিপুর পাইলট হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন ১৯৭৪ সালে সাতক্ষীরার সরকারি পিসি কলেজ থেকে। এরপর বিএ পাস করেন সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ থেকে। তিনি এমএ পাস করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে। এলএলবি পাস করেন ধানমন্ডি ল’ কলেজ থেকে।
আইনজীবী হিসেবে হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের তালিকাভুক্ত হন ১৯৮১ সালে। জেলা আদালতে প্র্যাকটিস শুরু করেন ১৯৮১ সালের ২১ আগস্ট। ১৯৮৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের সনদ লাভ করেন। আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন ১৯৯৯ সালের ২৭ মে।
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ২০০১ সালে হাইকোর্টে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২০০৯ সালের ২৫ মার্চ হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে এবং ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। বিচারপতি হিসেবে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও ভারতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি। এ ছাড়া তিনি সৌদি আরব সফর করেছেন।
বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর বড় ভাই বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি থেকে অবসরে গেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম দুই ভাই সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে বিচারক পদে আসীন হওয়ার নজির স্থাপন করেছেন।