বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

৫৭-তে এসএসসি, আরও পড়বেন ইউপি সদস্য

  •    
  • ২ জানুয়ারি, ২০২২ ১১:০১

রফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত ৫ বছর ধরে মেম্বার থাকার পর আমি বুঝতে পারি জীবনে শিক্ষার প্রয়োজন আছে। নিজে শিক্ষিত না হলে মানুষের সেবা করা কঠিন। এসব চিন্তা থেকেই স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম। কলেজে ভর্তি হয়েও লেখাপড়া চালিয়ে যাব।’

বয়সকে হার মানিয়ে ৫৭ বছর বয়সে এসএসসি পাস করেছেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম।

পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৪৬ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে তিনি গ্রামবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তার এ সাফল্যে খুশি স্ত্রী-সন্তানও।

জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদের চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে সদস্য পদে ২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তালা প্রতীকে ৪৭৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন রফিকুল। এর আগে ২০১৬ সালেও তিনি সদস্য পদে নির্বাচিত হন।

দ্বিতীয়বারের মতো দায়িত্ব পালনের শপথ অনুষ্ঠান চলাকালে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। শপথ নেয়ার অনুষ্ঠানে বসেই জানতে পারেন তিনি পাস করেছেন।

রফিকুলের পরিবার থেকে জানা যায়, রফিকুল ইসলাম ৪৫ বছর বয়সে অষ্টম শেণিতে পড়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। বার্ষিক পরীক্ষা শেষে তার শারীরিক কিছু অসুবিধা দেখা দেয়। এরপর আর লেখাপড়া করতে পারেননি তিনি।

তবে এখন বাবার সাফল্যে খুশি রফিকুলের সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া একমাত্র ছেলে আব্দুল্লাহ আল মারুফ।

মারুফ বলেন, ‘পড়াশোনায় বাবা ব্যাপক মনযোগী ছিলেন। যখনই সময় পেয়েছেন, তখনই পড়তে বসেছেন। আমিও বাবার সঙ্গে বসে এক টেবিলে পড়াশোনা করেছি। কিন্তু বাবা বিন্দুমাত্র লজ্জা পাননি। আমরা একে অপরকে সহপাঠী ভেবেছি।’

রফিকুল ইসলামের স্ত্রী আমেনা খাতুন বলেন, ‘ইচ্ছা থাকলে সবই সম্ভব, তা আমার স্বামী প্রমাণ করছেন। অনেকে অনেক কাজে বাড়িতে আইছে, তাদের সময় দিয়া আবারও পড়তে বইছে। অনেকে হাসিতামাশা করে আলোচনা করত, মেম্বার এই বয়সে স্কুলে পড়তাছে। কিন্তু আমার স্বামী কখনও এসব কথায় কান দেয়নি। সে তার ইচ্ছাশক্তি দিয়া পাস করছে।’

স্থানীয় জয়লান আবেদিন, ফজলুল হক ও আরমান আলীসহ কয়েকজন জানান, রফিকুল ইসলাম একজন সহজ সরল জনপ্রতিনিধি। তিনি কারও সঙ্গে কখনও অন্যায় আচরণ করেননি৷ বাড়িতে পড়াশোনার সময়ও কেউ কোনো কাজে গেলে তাৎক্ষণিক সে কাজটি করতে চেষ্টা করেছেন।

তার এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার বিষয়টি সবাই জানে। তবে এত ভালো ফলাফল করে পাস করবেন সেটা কেউ ভাবেনি। গ্রামবাসী তার এমন সাফল্যে আনন্দিত।

ছাত্রের এমন সাফল্যে খুশি আছিম বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবুল কালাম।

তিনি বলেন, ‘রফিকুল সবসময় বলত সে আরও পড়তে চায়। আমি তাকে স্কুলে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেই। এরপর সে বয়সের কথা চিন্তা না করে স্কুলে ভর্তি হয়ে নিয়মিত পড়াশোনা করেছে।

‘আমি চাই, সে কলেজেও ভর্তি হয়ে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে শিক্ষিত জনপ্রতিনিধি হবে।’

একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে এই বয়সে কেন ফিরলেন বিদ্যালয়ে? এমন প্রশ্নের জবাবে রফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি নিজে শিক্ষিত না হয়ে অন্যদের যদি পড়াশোনা করতে বলি তাহলে তো অনেকে মানবে না। বলবে, নিজে অশিক্ষিত হয়ে আবার অন্যকে পড়াশোনা করতে বলে।

‘এছাড়া গত ৫ বছর ধরে মেম্বার থাকার পর আমি বুঝতে পারি জীবনে শিক্ষার প্রয়োজন আছে। নিজেই যদি শিক্ষিত না হই তাহলে মানুষের সেবা করাও কঠিন। এসব চিন্তা থেকেই স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম। কলেজে ভর্তি হয়েও লেখাপড়া চালিয়ে যাব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি একটি কথাই বলব, শিক্ষার কোনো বয়স নেই, শিক্ষা ছাড়া উপায় নেই। এই কথাটি মাথায় রাখলেই বাংলাদেশে শিক্ষার হার বাড়বে।’

এ বিভাগের আরো খবর