অসুস্থ মূল্য প্রতিযোগিতা ঠেকাতে পোশাকের সর্বনিম্ন দর নির্ধারণ করে দেবে পোশাক শিল্পমালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ। এই দরের নিচে কোনো রপ্তানিকারক কোনো পোশাকের অর্ডার নিতে পারবে না; রপ্তানি করতে পারবে না।
আর এই ‘বেঞ্চমার্ক’ দাম ঠিক করতে দুই সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১৫ সদস্যের কমিটির প্রধান করা হয়েছে বিকেএমইএর সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসানকে।
নতুন বছরের প্রথম দিন শনিবার রাজধানীর গুলশানে বিজিএমইএ অফিসে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ নেতাদের এক বৈঠকে এই কমিটি গঠন করা হয়।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসানের সভাপতিত্বে সভায় বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম, মিরান আলী, পরিচালক আসিফ আশরাফ, বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান, আকতার হোসেন অপূর্ব এবং পরিচালক ইমরান কাদের তুর্য উপস্থিত ছিলেন।
বিজিএমইএর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এই কমিটি উৎপাদন (ম্যানুফ্যাকচারিং) ব্যয়, শিল্পের প্রয়োজনীয় যোগানের (ইনপুট) ব্যয় এবং তৈরি পোশাকের রপ্তানি মূল্য পূঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষন করবে। কমিটি ইয়ার্ন, ফেক্সিস, ডাইং, প্রসেসিং, এমব্রয়ডারি এবং এক্সেসরিজ প্রস্তুতকারীসহ বৃহত্তর পরিধিতে ষ্টেকহোল্ডারদের সাথে পরামর্শ করে সকলের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট সকল ব্যয়, লিড টাইম এবং একটি পোশাক তৈরির সামগ্রিক ব্যয়ের ক্ষেত্রে উপরোক্ত উপাদানগুলোর কি প্রভাব পড়ে, তা খুঁজে বের করবে।
রাজধানীর গুলশানে বিজিএমইএ অফিসে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ নেতাদের এক বৈঠকে এই কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির কার্যক্রমে পণ্যের উৎপাদন প্রক্রিয়াসহ নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডার্ড মিনিট ভ্যালু, দক্ষতা এবং তৈরি পোশাক পণ্যের নূন্যতম মূল্য এবং উৎপাদন ব্যয় নির্ধারণে অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কারণগুলো অন্তর্ভূক্ত থাকবে। মূল উদ্দেশ্য হলো প্রধান প্রধান গার্মেন্টস আইটেমগুলোর সামগ্রিক উৎপাদন ব্যয় এবং সেগুলোর নূন্যতম মূল্যের যৌক্তিকতার বিষয়ে একটি সার্বিক চিত্র তুলে ধরা।
কমিটিকে আগামী ৩ মাসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তারপর বিজিএমইএ ও বিকেএমই র পরিচালনা পর্ষদের সভায় আলোচনার বিশেষ সাধারণ সভায় সর্বনিম্ন বা বেঞ্চমার্ক দর অনুমোদন করা হবে।
তারপর থেকে আর কোনো রপ্তানিকারক সেই দামের কমে কোনো অর্ডার নিতে পারবে না; পোশাক রপ্তানিও করতে পারবে না।
আন্তর্জাতিক খুচরা বিক্রেতা এবং বায়ারদের কাছ থেকে নৈতিক মূল্য নিশ্চিত করা এবং স্থানীয় পর্যায়ে অসুস্থ মূল্য প্রতিযোগিতার অবসান ঘটানো এই পদক্ষেপের লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
শনিবার রাতে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সর্বনিম্ন দর নির্ধারণ করার পর আর কোনো রপ্তানিকারক ওই দামের কমে অর্ডার নিতে পারবে না। এতে অসুস্থ প্রতিযোগিতা আর থাকবে না। বায়াররা আমাদের পোশাকের নায্য দাম দিতে বাধ্য হবে।’
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘ধরা যাক একজন রপ্তানিকারক ১ ডলার ৫০ সেন্টে একটি পোশাকের অর্ডার নিয়েছে। সেই একই পোশাক আরেকজন রপ্তানিকারক অন্য কোনো বায়ারের কাছে ১ ডলার ৪০ সেন্টে দিচ্ছে। তখন সব বায়ার যে কম দামে অর্ডার নিচ্ছে, তার কাছে ছুটছে।’
এই অসুস্থ মূল্য প্রতিযোগিতার দূর করতেই বিজিএমইএ ও বিকেএমই একমত হয়ে সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণের জন্যই কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান মোহাম্মদ হাতেম।
‘এতে আমাদের রপ্তানি আয় বাড়বে। রপ্তানিকারকরা বেশি দাম পাবে; বায়াররা যৌক্তিক মূল্য দিতে বাধ্য হবে।’
হাতেম বলেন, ‘কম দামে আর পোশাক রপ্তানি না করতে আমরা একমত হয়েছি। আমাদের পোশাক শিল্পের জন্য ভালো সময় এসেছে। অর্ডার বাড়ছে; রপ্তানি বাড়ছে। বিশ্ববাজারে চাহিদা বাড়ায় বায়াররা (ক্রেতা) এখন পোশাকের বেশি দাম দিচ্ছে। এটা ধরে রাখতে হবে। সে কারণেই আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি।’
করোনা মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে সুবাতাস বইছে। প্রতি মাসেই বাড়ছে রপ্তানি আয়; এমনকি লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অনেক বেশি আয় দেশে আসছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের পাঁচ মাসের (জুলাই-নভেম্বর) প্রায় ২০ বিলিয়ন (১ হাজার ৯৮০ কোটি) ডলার রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪ দশমিক ২৯ শতাংশ বেশি। আর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ১৩ দশমিক ২৭ শতাংশ।
গত ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য ও সেবা মিলিয়ে ৫১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ধরেছে সরকার। এর মধ্যে পণ্য রপ্তানি থেকে আয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৪৩ বিলিয়ন ডলার।
সার্বিক রপ্তানি পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে আমাদের রপ্তানি ৫২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। যা হবে একটি মাইলফলক। বাংলাদেশের ৫০ বছরের বড় অর্জন।’