র্যাব ও তার কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র সরকার যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তাতে আওয়ামী লীগ সরকারের দিন শেষ হয়ে এসেছে বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘ঘণ্টা বেজে গেছে, আমাদের কথা নয়। ওই দেখেন পশ্চিমা বিশ্ব গণতন্ত্রের প্রধান যাদের বলা হয়, সেই আমেরিকা তাদের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দিয়েছে। কাদের দিয়েছেন? যারা আমাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি বাধা সৃষ্টি করেছে।
‘হত্যা করেছে, নির্যাতন করেছে, তুলে নিয়েছে, গুম করে দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেই কিন্তু এই সাজা এসেছে। সুতরাং ঘণ্টা বেজে গেছে।’
শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আর সময় নাই। এখন উল্টাপাল্টা এদিক-সেদিক করে কথা বলে কোনো লাভ হবে না। সোজাসুজি এখনও সময় আছে- এই মুহূর্তে পদত্যাগ করুন, পদত্যাগ করে একটা নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দেন। এবং তাদের অধীনে নির্বাচন কমিশন দিয়ে নির্বাচন দিয়ে একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করুন। অন্যথায় পালাবার পথ খুঁজে পাবেন না।’
‘খালেদাকে বিদেশ না পাঠালে নিজেরা যাবেন’
দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি না দিলে সরকারদলীয় নেতাদেরকেই বিদেশে পালাতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘আর টালবাহানা করে লাভ নেই। পদত্যাগ করেন এবং খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। অথবা আপনারা নিজেরা যাওয়ার জন্য তৈরি হন।’
বিএনপি নেতা জানান, তারা জানতে পেরেছেন, অনেক মন্ত্রীরা বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বলেন, ‘আমরা অনেক কথা শুনতে পাই, মন্ত্রীরা নাকি পাসপোর্ট তৈরি করে ফেলেছেন। কে কোথায় যাবেন সেই ব্যবস্থাও নাকি হয়ে গেছে। তাহলে এত দেরি করে লাভ কী? তাড়াতাড়ি যান, দেশের মানুষ রেহাই পাক, স্বস্তি পাক।’
দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে দেয়ার আইনি সুযোগ নেই বলে সরকারের পক্ষ থেকে আসা বক্তব্য নিয়েও কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। বলেন, ‘আইন নেই? তাহলে ১/১১ পর শেখ হাসিনা কীভাবে কান দেখাতে আমেরিকা গিয়েছিলেন? কীভাবে মোহাম্মদ নাসিম জেল থেকে সোজা সিঙ্গাপুর চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন?
‘জাসদ নেতা আ স ম আব্দুর রবকে জিয়াউর রহমান কীভাবে চিকিৎসার জন্য জার্মানি পাঠিয়েছিলেন। আসলে আইন কোনো ব্যাপার নয়- ৪০১ ধারায় পরিষ্কার বলা আছে, সরকার যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’
পদ্মা সেতু করেন, কিন্তু মোটা ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থাও করেন
পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ দেখতে গিয়ে স্থাপনার ওপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার ছবি তোলা নিয়েও কথা বলেন বিএনপি নেতা। বলেন, ‘কালকে পদ্মা সেতুর ওপরে পোজ দিয়ে ছবি তুলেছেন। ভালো কথা, আমাদের আপত্তি নাই। ছবি আপনারা তোলেন। পদ্মা সেতু নির্মাণ করেন। কিন্তু আমার সাধারণ মানুষের মোটা ভাত, মোটা কাপড়ের ব্যবস্থা করেন।’
তিনি বলেন, ‘খুব বড় করে কথা বলেছিলেন, ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াব। অথচ আজ ৭০ টাকাতেও চাল পাওয়া যায় না।’
ফখরুলের অভিযোগ, ফাইভ স্টার হাসপাতাল তৈরি হয়, কিন্তু সাধারণ মানুষ চিকিৎসাসেবার সুযোগ পায় না। শ্রমিকরা তার মজুরি পায় না। কৃষক তার ফসলের ন্যায্যমূল্য পায় না।
জ্বালানি তেলের দাম ও দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে অসহনীয় অসম্ভব হয়ে পড়েছে মন্তব্য করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘অথচ তারা বলছে, উন্নয়নের রোল মডেল হয়ে গেছে বাংলাদেশ।’
প্রধান বিচারপতি নিয়োগে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে আপিল বিভাগে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘যে দেশের প্রধান বিচারপতিকে বন্দুকের নল ধরে বিদেশে চলে যেতে বাধ্য করা হয়, যে দেশে সুপারসিড করে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়, সে দেশে বিচারের স্বাধীনতা কতটুকু আছে, ন্যায়বিচার কতটুকু পাওয়া যাবে তা আমরা সবাই জানি।’
ফখরুল বলেন, ‘বিচার বিভাগ যেখানে মানুষ শেষ মুহূর্তে যায় ভরসা পাবে বলে। সেখানেও আজ পুরোপুরি দলীয়করণ করা হয়েছে।’
ভোট করে সরকারি কর্মকর্তারা
এই দাবি করে ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নির্বাচন করতে হয় না। তারা নির্বাচন করলে হয় আগের রাতে করে দেয় নতুবা ওই দিনেই বিশেষ পদ্ধতিতে প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা করে দেয়। যা তারা এখন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে করছে।’
শেখ হাসিনার সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ’৭১ সালের স্বপ্নকে ধ্বংস করে দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। জাতি বাঁচাতে, গণতন্ত্রকে বাঁচাতে সবাইকে আত্মত্যাগ করার পরামর্শও দেন বিএনপি মহাসচিব।
ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকনের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বর্তমানে বিএনপির ও সাবেক ছাত্রনেতা শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, আমান উল্লাহ আমান, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, এ বি এম মোশাররফ হোসেন ও আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল।
সভাটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল।