বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভোটের প্রচারে সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা

  •    
  • ১ জানুয়ারি, ২০২২ ১৫:১০

আনারস প্রতীকের আবদুর রশিদ বলেন, ‘স্থানীয় নির্বাচনে আত্মীয়-স্বজন থাকলে একটু আধটু কাজ করেই থাকে। এই এলাকায় শুধু আমার পক্ষে না, সব প্রার্থীর পক্ষেই তাদের আত্মীয়-স্বজনরা ( সরকারি চাকরিজীবী) প্রচার চালাচ্ছেন। আমারটা হয়তো আপনাদের সামনে পড়েছে।’

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পঞ্চম ধাপে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলায় সরকারি বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ফেসবুকে ও সরাসরি ভোটের প্রচারে কাজ করছেন।

তারা বলছেন, প্রার্থীরা আত্মীয় হওয়ায় প্রচার চালাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ বিষয়টি অস্বীকারও করেছেন।

তবে নির্বাচনের বিধি অনুযায়ী, সরকারি চাকরিজীবীরা ভোটের প্রচারে অংশ নিতে পারেন না।

ইউনিয়ন পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬-এর ২২ ধারায় বলা হয়েছে, সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী নির্বাচন পূর্ব সময়ে নির্বাচনি এলাকায় প্রচার বা নির্বাচনি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।

অষ্টগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে আগামী ৫ জানুয়ারি ভোট হবে। ২০ ডিসেম্বর প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে শুরু হয় প্রচার।

ফেসবুকে দেখা যাচ্ছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রার্থীদের প্রচারে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন। সেসব ছবি ফেসবুকে শেয়ার করছেন। প্রার্থীদের পক্ষে-বিপক্ষে শিক্ষকরা সেখানে কমেন্টও করছেন।

উত্তর আব্দুল্লাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশীদ। তিনি খয়েরপুর-আব্দুল্লাপুর ইউনিয়নে আনারস প্রতীকের আবদুর রশিদের হয়ে কাজ করার কথা স্বীকার করেছেন। আবদুর রশিদ তার চাচা।

হারুন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নিজেদের আত্মীয়-স্বজন। তাই প্রচারে অংশ নিয়েছিলাম।’

সরকারি চাকরিজীবী হয়ে প্রচারে অংশ নিতে পারেন কি না সে প্রশ্নে বলেন, ‘বিষয়টা আগে ওইভাবে চিন্তা করিনি। যখন বুঝতে পেরেছি তখন থেকে আর যাই না। আপনি চাইলে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। আমার ফেসবুকেও আর কোনো পোস্ট পাবেন না।’

আদমপুর ইউনিয়নের বালুচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোকন উদ্দিনকেও মামা আবদুর রশিদের প্রচারে দেখা গেছে। তবে তিনি দাবি করেন, ‘এগুলো অন্যরা করেছে। আমি না।’

এ বিষয়ে আবদুর রশিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্থানীয় নির্বাচনে আত্মীয়-স্বজন থাকলে একটু আধটু কাজ করেই থাকে। এই এলাকায় শুধু আমার পক্ষে না, সব প্রার্থীর পক্ষেই তাদের আত্মীয়-স্বজনরা সরকারি চাকরিজীবী হলেও প্রচার চালাচ্ছেন। আমারটা হয়তো আপনাদের সামনে পড়েছে।

‘আর আমার হয়ে শিক্ষকরা কাজ করলেও ভোটে কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ তারা তো অন্য ইউনিয়নের ভোটের দায়িত্বে থাকবেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘নির্বাচনে আমার নিকটতম একজন আত্মীয় প্রার্থী হয়েছেন। তিনি প্রায়ই আমাকে তার প্রচারে যেতে বলেন। তাকে আমি বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে আমার তার প্রচারে যাওয়া নিষেধ।

‘তখন তিনি আমাকে অন্য শিক্ষকদের উদাহরণ দেন। বাধ্য হয়েই যেতে হয়েছে। বিষয়টা নিয়ে আমি খুবই বিব্রত।’

এই ইউনিয়নের ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মুক্তার খান বলেন, ‘যেসব সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা নির্বাচনের প্রচার করছেন তারা স্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের দিয়ে তাদের অভিভাবকদের ভোট দেয়ার কথা বলছেন। আজকে স্কুলে নতুন বই বিতরণের সময়ও ভোট চেয়েছেন। শিক্ষকদের কাছ থেকে আমরা এমনটা আশা করিনি।’

বিভিন্ন প্রার্থীর হয়ে সরকারি চাকরিজীবীদের ভোটের প্রচার এই এলাকায় নতুন কিছু নয় বলে জানান পশ্চিম আলীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিক। তিনি নিজেও দেওঘর ইউনিয়নের রজনীগন্ধ্যা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী কাওসার আলমের হয়ে প্রচার চালাচ্ছেন। কাওসার তার চাচা শ্বশুর।

শিক্ষকদের এভাবে প্রচারে অংশ নেয়ায় ভোট প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে বলে মনে করেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুব্রত কুমার বণিক।

তিনি বলেন, ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নির্বাচনে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, পোলিং এজেন্টসহ বিভিন্ন পদে কাজ করেন। তারা যদি ভোটের আগে কোনো প্রার্থীর হয়ে কাজ করেন তাহলে তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। নির্বাচনও প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

‘আমি বিষয়টা নিয়ে খোঁজ নিচ্ছি। ভোটের প্রচারে শিক্ষকদের সংশ্লিষ্টতা পেলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

শুধু শিক্ষকরাই প্রচারে কাজ করছেন তা না। এক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধেও এ ধরনের অভিযোগ উঠেছে।

দেওঘর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী সুজন খান জানান, সাইফুল ইসলাম মহসিন নামের এক পুলিশ সদস্য ছুটি নিয়ে এসে চশমা প্রতীকের প্রার্থী তাহের উদ্দিন পাঠানের হয়ে কাজ করছেন।

এ বিষয়ে অষ্টগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মাঈনুল ইসলাম জানান, কেউ যদি অভিযোগ করে তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

একই কথা জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘এখনও কোনো অভিযোগ পাইনি। তারপরও আপনি যেহেতু বিষয়টি জানিয়েছেন আমরা এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।’

এ বিভাগের আরো খবর