মাত্র পাঁচ বছর বয়সে টাইফয়েডে আক্রান্ত হন চাঁদপুরের হাইমচরের রুহুল আমিন ছৈয়াল। অর্থ সংকটে চিকিৎসা না পাওয়ায় বিকল হয়ে যায় তার দুই পা। ২০ বছর ধরে পা না চললেও অচল হননি তিনি। হুইলচেয়ারে বসেই এবার নেমেছেন ভোটের লড়াইয়ে।
পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হাইমচরের আলগী দুর্গাপুর উত্তর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য পদ পেতে প্রতিদ্বন্দ্বীদের টেক্কা দিচ্ছেন রুহুল। হুইলচেয়ারে বসে ভোট চাইতে ছুটে বেড়াচ্ছেন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি।
এলাকায় চায়ের দোকান আছে রুহুলের। সদস্য পদে ভোটে দাঁড়ানোর পেছনে এক অভিমানের গল্প তিনি শোনালেন নিউজবাংলাকে।
রুহুল বলেন, ‘প্রায় ২০ বছর ধরে আমি শারীরিক প্রতিবন্ধী। চলাফেরার জন্য একটি হুইলচেয়ার পেতে আমি মেম্বার ও চেয়ারম্যানদের কাছে অনেক ঘুরেছি, কিন্তু পাইনি।
‘চিন্তা করে দেখলাম আমি প্রতিবন্ধী হয়েও যেহেতু সহায়তা পাইনি, সমাজে এমন অনেক অবহেলিত মানুষ আছে যারা সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার যোগ্য হলেও পাচ্ছে না। এসব বিষয় ভেবে ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে আমি নিজেই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার চিন্তা করলাম। এলাকাবাসীও আমাকে সাহস ও সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।’
তিনি জানান, প্রতিবেশী এক ব্যক্তিও প্রতিবন্ধী ছিলেন; হুইলচেয়ার ব্যবহার করতেন। ওই ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার পরিবারের কাছ থেকে হুইলচেয়ারটি চেয়ে নিয়েছেন।
রুহুল আরও জানান, নির্বাচিত হলে এলাকার অসহায় ও গরিব মানুষের পাশে দাঁড়াবেন। শারীরিকভাবে অক্ষম মানুষের সাহায্য করবেন।
এলাকার ভোটার আবুল কাসেম বলেন, ‘শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হলেও রুহুল মানুষ হিসেবে অনেক ভালো। আমাদের কাছে ভোটের জন্য এসেছেন। তার জন্য আমাদের ভোটারদের সহানুভূতি আছে।’
আরেক ভোটার কামরুল হোসেন বলেন, ‘জয়-পরাজয় যাই হোক, প্রতিবন্ধী হয়েও নির্বাচনে অংশ নেয়াটা সাহসের বিষয়। যে কারণেই হোক, তিনি নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তাই তাকে সাধুবাদ জানাই। আমরা মনে করি তিনি নির্বাচিত হলে এলাকার গরিব অসহায় মানুষের পাশে থাকবেন।’
তবে এই ওয়ার্ডের আরেক প্রার্থী ও বর্তমান মেম্বার নজির আহমেদ দেওয়ান অভিযোগ করে বলেন, ‘একটি মহল এলাকার উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে এবং নির্বাচনে আমার ক্ষতি করার জন্য রুহুলকে প্রার্থী হিসেবে উৎসাহ-উদ্দীপনা দিচ্ছে।’
চাঁদপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ তোফায়েল হোসেন জানান, নির্বাচন একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। এই দেশের প্রত্যেক নাগরিক নিয়ম মেনে নির্বাচন করতে পারে।
তিনি বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে একজন প্রতিবন্ধী প্রার্থী হয়েছেন, বিষয়টি আনন্দের। সব প্রার্থীই আমাদের কাছে সমান। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি আমরা।’
পঞ্চম ধাপে হাইমচরে ভোট হবে আগামী ৫ জানুয়ারি।