মাঝ নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চ থেকে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে স্ত্রীকে নিয়ে ঝাঁপ দেন মাসুদুর রহমান; ২ ঘণ্টা সাঁতরে পাড়ে ওঠেন তারা। সে সময় জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করেও সাড়া পাননি এই দম্পতি।
শুক্রবার বরগুনায় নিউজবাংলাকে এসব কথা জানান মাসুদুর রহমান।
ঝালকাঠির পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দেউরী এলাকায় সুগন্ধা নদীতে গত ২৩ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে বরগুনাগামী লঞ্চটিতে আগুনে পুড়ে মারা যায় অন্তত ৪৪ জন। আহত হয়েছেন আরও অনেকেই।
দুর্ঘটনার পর লঞ্চমালিক হামজালাল দাবি করেছিলেন, তার নৌযানে অগ্নি নির্বাপক সব সরঞ্জাম ছিল। এমনও দাবি করেন, আগুন লাগে ক্যান্টিনে। পরে তা ছড়ায় ইঞ্জিন রুমে।
তবে লঞ্চযাত্রী মাসুদুরের তথ্য বলছে ভিন্ন কথা।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘অভিযান-১০ লঞ্চের যাত্রী ছিলাম আমি আর আমার স্ত্রী। ঢাকা ছাড়ার পর থেকে প্রচণ্ড জোরে ইঞ্জিন চলছিল। আমার কাছে বিষয়টি অস্বাভিক মনে হওয়ায় ইঞ্জিন রুমে গিয়ে দেখি দুটো ইঞ্জিনই ফুল স্পিডে। ধোঁয়া বের করার যে পাইপটা থাকে, সেটার ওপর কোনো হিট নিরোধক কিছু নেই। ফলে লোহার পাইপ গরম হয়ে লাল হয়ে গিয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘এ অবস্থা দেখে আমি ইঞ্জিন রুমের লোকটাকে ডেকে গতি কমাতে বলি। ওই লোক তখন আমাকে বলেন, কী করতে হবে না হবে আমি বুঝব, আপনি বেশি বুইঝেন না। এক পর্যায়ে তার সঙ্গে তর্ক হয়। রাত ১টার দিকে আবার ইঞ্জিন রুমে যাই। শীতের মধ্যে মনে হয়েছিল ইঞ্জিন রুম তপ্ত কড়াইয়ের মতো।
‘ওই সময় ধোঁয়া নির্গত হওয়ার দুটো পাইপ রীতিমতো টকটকে লাল ও মাঝে মাঝে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ বের হয়ে ছিটকে পড়ছিল আশপাশে। তখন কিছু সময় আমি দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। মনে যে শঙ্কা ছিল তাই ঘটেছিল সেদিন।
‘লঞ্চটি ঝালকাঠি শহর থেকে একটু দক্ষিণ দিকে নামার পর ডান পাশের ইঞ্জিনটি বিকট শব্দে একটি অংশ ওপরে ছিটকে যায় এবং ইঞ্জিন রুমে থাকা ডিজেলের ব্যারেলসহ রান্নাঘরের গ্যাস সিলিন্ডার ও সঙ্গে থাকা কয়েকটি বাইক একসঙ্গে দগ্ধ হয়। এতে লঞ্চের নিচের তলায় আগুন লেগে যায়। লঞ্চের চারপাশে বাতাস নিরোধক ঝোলানো মোটা পর্দা ও লঞ্চে নতুন রং করানোর কারণে মুহূর্তের মধ্যে পুরো লঞ্চটি জ্বলে ওঠে।’
মাসুদুর রহমান বলেন, ‘দুঃখজনক ঘটনা হলো- আমিসহ অনেকে তখন ৯৯৯ নম্বরে কল করে বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্ত প্রতিকার পাইনি। আমি ও আমার স্ত্রী এক পর্যায়ে জীবন বাঁচাতে লঞ্চের সামনের দিক থেকে লাফ দিয়ে নদীতে পড়ে যাই। ২ ঘণ্টা নদীতে সাঁতার কাটার পর কিনারায় উঠেছিলাম আমরা।’
তিনি বলেন, ‘ঝালকাঠির উপকণ্ঠে লঞ্চটি ঘুরল আর পুড়ল, প্রশাসনের কোনো লোক ফিরেও তাকায়নি। লঞ্চ যখন দিয়াকুল গ্রামের কাছে ভাসতে ভাসতে কিনারায় থামে; তখন ফায়ার সার্ভিস গিয়ে আগুন নেভায়।
মাসুদুর বলেন, ‘ঢাকা থেকে কমপক্ষে ৭০০ মানুষ লঞ্চে ওঠে আর চাঁদপুর থেকে ৫০০ লোক ওঠে। শুরু থেকেই অনেক জোরে ইঞ্জিন চালানো হয়েছিল। গোটা লঞ্চ কাঁপছিল। যাত্রীরা সাবধান করেছেন, আমি নিজে গিয়ে ইঞ্জিনচালকের সঙ্গে ঝগড়া করেছি, কার কথা কে শোনে।’