প্রতি বছরই শেষ সূর্যাস্ত দেখতে কক্সবাজারের সৈকতে ঢল নামে পর্যটকদের। থার্টিফার্স্ট নাইট ও নতুন বছরকে বরণে বরাবরই এটি দেশের মানুষের অন্যতম পছন্দের স্পট।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এবার বছর বিদায়ের দিন হওয়ায় শুক্রবার গোধূলীকালে সৈকতের লাবনী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পর্যন্ত দেখা গেছে পর্যটকদের ভিড়। সূর্যাস্তের সময় তারা মেতে ওঠেন আনন্দ-উল্লাসে; হাত নেড়ে বিদায় জানান সূর্যকে।
সৈকতে কথা হয় পর্যটক দম্পতি সাদিকুল ইসলাম ও রুমানা ইসলামের সঙ্গে। মানিকগঞ্জ থেকে আসা এই দম্পতি নিউজবাংলাকে জানান, সাগরপাড়ে দাঁড়িয়ে বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখার অনুভূতি অন্যরকম। এত লোকের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়ার আনন্দও কম নয়।
রাজধানীর মালিবাগ থেকে সপরিবারের এসেছেন মতিয়ার রহমান। তিনি জানান, সমুদ্রের বিশালতার সামনে দাঁড়িয়ে অতীতের গ্লানি মুছে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে এসেছেন। হোটেলে রুম নিয়ে কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। বাড়তি টাকা দিয়ে দুটি কক্ষ নিতে পেরেছেন।
হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির নেতারা বৃহস্পতিবার বলছিলেন, বছরের এ সময়ে বেশির ভাগ কক্ষ বুকিং হয়নি। অথচ অতীতে আগেভাগেই বুকিং হয়ে যেত শতকরা ৯৫ ভাগ কক্ষ।
এ অবস্থার জন্য দুটি বিষয়কে সামনে এনেছেন তারা। এর একটি খাবারের দাম নিয়ে অপপ্রচার এবং এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ।
শহরের কলাতলী, সুগন্ধা বা লাবনীতে রয়েছে ৫১৬টি হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট।
কলাতলী-মেরিনড্রাইভ হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুুকিম খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অতিরিক্ত দাম রাখা ভুল মেসেজ। আর সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা পর্যটন সংশ্লিষ্টদের বড় ক্ষতি করে ফেলল। করোনার কারণে টানা লোকসানে ছিল ব্যবসায়ীরা। তার মধ্যে এমন ঘটনায় এখন এতো বড় একটা দিনে ৫০ শতাংশ বুকিংও পাইনি। যা কক্সবাজারের ইতিহাসে নজিরবিহীন।’
নিরাপত্তার বিষয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মাঠে রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশের ২০৮ সদস্য। যারা নিয়মিত টহলের পাশাপাশি বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন। এছাড়াও গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে বিষয়টি তদারকি করা হচ্ছে।’
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘থার্টিফার্স্ট উপলক্ষ্যে এখন পর্যন্ত তিনটা বৈঠক করেছি। যেখানে পর্যটন সেবার মান উন্নয়নের জন্য সাত দফা পদক্ষেপ নিয়েছি। দফায় দফায় বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল শুধু থার্টিফার্স্টে পর্যটকদের সমাগমে নিরাপত্তার বিষয়টি। কোথাও যেন কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা না ঘটে সে জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যাতে আগত পর্যটকরা নিরাপদে আনন্দ করতে পারে।’
তবে এত সব শঙ্কা ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নের মধ্যে বৃহস্পতিবার বিকেলে সৈকতের লাবনী পয়েন্টে চার রাশিয়ান নাগরিককে দেখা গেছে। নেচেগেয়ে সূর্যাস্ত উপভোগ করেছেন তারা।
তাদের একজন নাজিরা। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ খুবই সুন্দর। এখানকার নিরাপত্তা আমাদের ভালো লেগেছে। সার্বক্ষণিক পুলিশ ছিল।’