বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রাজমিস্ত্রি থেকে সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান

  •    
  • ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৬:২১

র‌্যাব জানায়, ২০১০ সালে ‘গাংচিল’ নামের সন্ত্রাসী বাহিনীতে যোগ দেন কবির। পরবর্তী সময়ে র‌্যাবের অভিযানে বাহিনীটি ঝিমিয়ে পড়লে নিজের নামে সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন তিনি।

রাজমিস্ত্রি বাবার সঙ্গে ১৯৯০ সালে বরগুনা থেকে ঢাকায় এসেছিলেন কবির হোসেন। এসে বাবার সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে গাড়ি চালানো, আবাসিক এলাকায় চাকরিসহ বিভিন্ন পেশায় যুক্ত ছিলেন তিনি।

২০১০ সালে ‘গাংচিল’ নামের সন্ত্রাসী বাহিনীতে যোগ দেন কবির। পরবর্তী সময়ে র‌্যাবের অভিযানে বাহিনীটি ঝিমিয়ে পড়লে নিজের নামে সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন তিনি।

রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে শুক্রবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে কবির বাহিনীর প্রধান কবির হোসেন ও তার সাত সহযোগীকে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-২।

গ্রেপ্তার আটজন হলেন কবির হোসেন ওরফে জলদস্যু কবির ওরফে দস্যু কবির, তার সহযোগী মো. রুবেল ওরফে পানি রুবেল, আমির হোসেন ওরফে আব্দুল হামিদ, মো. মামুন, মো. রিয়াজ, মেহেদী হাসান, মো. মামুন ওরফে পেটকাটা মামুন ও মো. বিল্লাল।

র‌্যাব জানায়, আটজনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও গুলিভর্তি ম্যাগাজিন, একটি ছোরা, একটি চাকু, একটি স্টিলের গিয়ার হোল্ডিং ছুরি, একটি লোহার পাইপ, চারটি চাপাতি, ৪১৭টি ইয়াবা বড়ি ও সাতটি মোবাইলফোন উদ্ধার করা হয়।

বাহিনীটি জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দেয়।

যেভাবে গ্রেপ্তার

র‌্যাব কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ২৩ নভেম্বর মোহাম্মদপুর থেকে ‘ভাইব্বা ল কিং’ নামের একটি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তারাসহ কয়েকজন ভুক্তভোগীর দেয়া ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধ সম্পর্কিত তথ্যের ভিত্তিতে মোহাম্মদপুর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছায়া তদন্ত শুরু করে র‌্যাব। একই সঙ্গে বাড়ানো হয় গোয়েন্দা নজরদারি। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাতে কবিরসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

কবির যেভাবে সন্ত্রাসী বাহিনীতে

জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‌্যাব জানায়, বিভিন্ন পেশায় কাজ করে ২০১০ সালে ‘গাংচিল বাহিনী’তে যোগ দেন কবির। এ বাহিনীর মাধ্যমে অপরাধ জগতে বিচরণ শুরু হয় তার। তিনি ওই বাহিনীর সঙ্গে তুরাগ ও বুড়িগঙ্গা নদীতে মালবাহী নৌকা ও ট্রলারে চাঁদাবাজি শুরু করেন। এর একপর্যায়ে তিনি ‘জলদস্যু’ হিসেবে পরিচিত পান।

র‌্যাব কমান্ডার আল মঈন জানান, র‌্যাবের অভিযানে গাংচিল বাহিনী অস্তিত্ব সংকটে পড়ে। এরপর ২০১৬ সাল থেকে ‘কবির বাহিনী’ নামে দুর্ধর্ষ বাহিনী গড়ে তোলেন কবির। তিনি বখে যাওয়া ছেলেদের বাহিনীতে নিতেন।

কবির ২০১৮ সালে প্রথম গ্রেপ্তার হন। হত্যা, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, চাঁদাবাজি, মারপিটসহ ২৪টি মামলার আসামি তিনি।

কবিরের রাজনৈতিক পরিচয় আছে কি না জানতে চাইলে খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘কবির কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ের কথা বলেনি। সে মূলত মোহাম্মদপুর এলাকায় ভাড়ায় কাজ করে থাকে। কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করার তথ্য পাওয়া যায়নি।

‘সে মূলত ভাড়ায় জমি দখল, জমি কেনা ও বাড়ি করতে গেলে চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। কবিরের বিরুদ্ধে হত্যা ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মামলা রয়েছে।’

কবিরের পেছনে কেউ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কবির নিজেই তার দলের প্রধান। তারা বিভিন্ন মানুষের প্রয়োজনে খাটে।’

বাহিনীর অন্য সদস্যদের ভূমিকা

জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‌্যাব কমান্ডার আল মঈন জানান, কবির বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ২০ থেকে ২২। তারা দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে হত্যা, সন্ত্রাস, মাদক কেনাবেচা, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি চালিয়ে আসছে।

তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃত কবির বাহিনীর সদস্যরা ক্ষুদ্র ব্যবসা, গাড়ি চালানো, দিনমজুরসহ বিভিন্ন পেশার আড়ালে বর্ণিত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত।’

র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত রুবেলের নামে সাতটি, মামুনের নামে পাঁচটি, পেটকাটা মামুনের নামে চারটি, আমির হোসেনের নামে তিনটিসহ অবশিষ্ট সদস্যদের নামে একাধিক মামলা রয়েছে।

বাহিনীটির ভাষ্য, গ্রেপ্তার সদস্যরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, তারা টিকটকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও বানিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে চেয়েছেন। পানি রুবেল ও পেট কাটা রুবেল নিজেদের আধিপত্য জানান দিতে ভিডিও বানাতেন। তারা টাকার বিনিময়ে ভাড়াটে হিসেবে কাজ করতেন।

র‌্যাব আরও জানায়, কবির তার দলে এমন ছেলেদের ভেড়াতেন, যাদের এলাকায় প্রভাব আছে; যাদের দিয়ে স্বার্থ হাসিল হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব কমান্ডার বলেন, ‘গ্রেপ্তার কবির গ্রুপের কেউই মোহাম্মদপুরের স্থানীয় না। তারা সবাই ভোলা, বরিশাল, বরগুনা জেলার, তবে সবাই জন্মসূত্রে মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা। ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে তারা এই এলাকায় বাস করছে।

‘গ্রেপ্তার কবিরের বিরুদ্ধে সাভার থানায় মামলা রয়েছে। বসিলা, আমিনবাজার এলাকায় তাদের আধিপত্য বেশি পেয়েছি। বসিলা, মোহাম্মদপুর এলাকায় জমি নিয়ে অনেক সমস্যা রয়েছে। তারা এসব কাজে ভাড়া খাটে। আর গ্রুপের সদস্যরা বিভিন্ন পেশার আড়ালে থেকে কাজগুলো করে।’

এ বিভাগের আরো খবর