দুই দফা আন্দোলনে নেমে খালি হাতে ঘরে ফেরা বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাজপথেই ফয়সালা করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বলেছেন, তাদের দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তি ও গণতন্ত্র ‘ফিরিয়ে আনা হবে’ আন্দোলনের মাধ্যমেই।
শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিএনপি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের তৃতীয় বার্ষিকীতে দলটির এক প্রতিবাদ সমাবেশে এই ঘোষণা দেন ফখরুল। এই দিনটিকে দলটি ‘৩০ ডিসেম্বর নিশিরাতে ভোটের তৃতীয় বার্ষিকী’ হিসেবে পালন করছে দলটি।
তিন বছর আগের সেই নির্বাচনে বিএনপি তার জন্মের পর সবচেয়ে বাজে ফল করেছে। ২০ দলীয় জোটের পাশাপাশি আরেক নতুন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট করে ভোটে যায় দলটি। কিন্তু ৩০০ আসনের মধ্যে তারা পায় কেবল ৭টি।
বিএনপির অভিযোগ, সেই নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। আগের রাতেই সিল মেরে বাক্স ভর্তি করা হয়- এমন অভিযোগ করেন নেতারা।
আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সেই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও এবার আর নির্দলীয় সরকার ছাড়া ভোটে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দলটি। আগের দুইবার নির্বাচন কমিশন গঠন রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ নিলেও এবার সেই সংলাপ বর্জনের সিদ্ধান্তও নিয়েছে বিএনপি।
এই নির্বাচনকে সামনে রেখে আন্দোলনের অংশ হিসেবে কর্মসূচি বাড়িয়েছে দলটি। তাতে দলের নিষ্ক্রিয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের অংশগ্রহণে জোর দিচ্ছে তারা। মির্জা ফখরুল আগের দিন বলেছেন, এখন যেসব হচ্ছে, সেগুলো হলো ওয়ার্ম আপ। আসল আন্দোলন আসছে।
এর জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আবার বলেছেন, ওয়ার্ম আপে কাজ হবে না। আগেও বিএনপি কিছুই করতে পারেনি, এবারও পারবে না।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তৃতীয় বছর পূর্তির সমাবেশে ফখরুল বলেন, তার দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ করে দিতে চলমান কর্মসূচি শিগগির গণ-আন্দোলনে রূপ নেবে।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সব সময় বলে উন্নয়ন। কিন্তু আমরা রাজনৈতিক স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেছি। এই স্বাধীনতাকে ফিরিয়ে আনতে, সার্বভৌমত্বকে সুসংগঠিত করতে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে, বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে আন্দোলনের বিকল্প নেই। আসুন এই মুহূর্ত থেকে আমরা এগিয়ে যাই, ঐক্য সৃষ্টি করি। রাজপথে দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে সবকিছুর ফয়সালা হবে।’
বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমরা তো লড়াই করে যাচ্ছি। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আমাদের এই লড়াই এখন বেগবান হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, এই লড়াই অতি অল্প সময়ের মধ্যে একটা দুর্বার গণ-আন্দোলনে পরিণত হবে।
‘এই গণ-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে সক্ষম হব, আমরা আমাদের গণতন্ত্রকে উদ্ধার করতে সক্ষম হব।’
ফখরুল বলেন, ‘১/১১ পরে যে স্লোগানটা ছিল, মাইনাস টু। পরে শেখ হাসিনা তাদের সঙ্গে (সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার) আঁতাত করে মাইনাস ওয়ানে নিয়ে এসেছেন। দেশে যেন রাজনীতি না থাকে। যে সংসদটা আছে, সেই সংসদে বিরোধী দল বলতে কিছু নেই। ছাত্র সংসদে এখন কোনো নির্বাচন হয় না, ডাকসুতে একবার হয়েছে, আবার বন্ধ হয়ে গেছে।’
‘আমলারা আকাশে উঠে গেছে’
আওয়ামী লীগের আশকারা পেয়ে আমলারা ‘আকাশে উঠে গেছে’ বলেও মন্তব্য করেন ফখরুল। বলেন, ‘রাজনৈতিক ও আওয়ামী লীগের নেতাদের কোনো মূল্যই নেই।
“একজন ওসি সরাসরি বলেন, ‘আপনারা কে? আপনাদের তো আমরাই বানিয়েছি।’ অর্থাৎ রাজনীতিটা পুরোপুরিভাবে সরিয়ে দিয়ে সামরিক আমলাতান্ত্রিক একটা ব্যবস্থা এখানে চালু করার ব্যবস্থা হয়েছে।
“২০১৮ সালে প্রধান ভূমিকা কে পালন করেছেন? এইচ টি ইমাম। তিনি পুরোপুরিভাবে একজন আমলা। আমরা খুব ভালো করে জানি, ওই নির্বাচনে প্রধান ভূমিকা, মাঠে যারা কাজ করেছে- সেটা হচ্ছে পুলিশ।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান এম শাহজাহান ওমর, নিতাই রায় চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেত্রী অপর্ণা রায়, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েলও বক্তব্য রাখেন। বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।