বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আন্দোলনের প্রস্তুতিতে কর্মসূচি বাড়াচ্ছে বিএনপি

  •    
  • ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৩:৫১

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সবুর করে ছিলাম। সবুরে মেওয়া ফলে। সবকিছুর একটি নির্দিষ্ট সময় আছে। বিএনপির গণজাগরণ শুরু হয়েছে। এটাকে সিনেমার ট্রেইলার মনে করতে পারেন। পুরো সিনেমা এখনও বাকি। গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন বিএনপির একমাত্র লক্ষ্য।’

নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সংলাপে বিএনপির না যাওয়ার সিদ্ধান্ত সরকারের প্রতি একটি স্পষ্ট বার্তা হিসেবেই বলছে বিএনপি। ২০১৫ সালের ব্যর্থ আন্দোলনের পর প্রথমবারের মতো টানা ৯ দিনের কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। প্রতিটি কর্মসূচিতেই জমায়েত ছিল চোখে পড়ার মতো।

বিএনপির সাম্প্রতিক এই কর্মসূচির প্রধান দাবি দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া।

তবে নেতারা নিউজবাংলাকে বলছেন, নির্দলীয় সরকারের দাবিতে নেতা-কর্মীদের আন্দোলনে সম্পৃক্ত করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। গত কয়েক বছর ধরে নানা কারণে রাজনীতি থেকে দূরে চলে যাওয়া নেতা-কর্মীদের আবার দলের কর্মসূচিতে আনা হচ্ছে।

বিএনপির নেতা ও মাঠের কর্মীদের তথ্য বলছে, দলটির এই সক্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে একটি অনুসঙ্গ হচ্ছে বাংলাদেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি পদক্ষেপ। বাহিনী হিসেবে র‌্যাব ও এর ছয় কর্মকর্তা ও পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে বিএনপি বিশেষভাবে আগ্রহী হয়েছে।

দলটি মনে করে, তারা ২০১৩ ও ২০১৫ সালে যে আন্দোলন করেছিল, সে সময় সরকার যে কঠোর ভূমিকা নিয়েছিল, এই পরিস্থিতিতে এসে তারা তা পারবে না।

প্রতিবাদ সভাকে কেন্দ্র করে ২২ ডিসেম্বর হবিগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় বিএনপি। ফাইল ছবি/নিউজবাংলা

২০১৩ থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এবং পরে ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে টানা কয়েক মাস বিএনপির আন্দোলনে সহিংসতা ছিল ব্যাপক। সে সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকাও ছিল কঠোর। বিএনপির অভিযোগ, সে সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তাদের অনেক নেতা-কর্মীকে তুলে নেয়া হয়েছে, যাদের সিংহভাগই পরে আর ফেরেনি, অনেককে গুলি করা হয়েছে। এতে কর্মসূচিতে অংশ নেয়া নেতা-কর্মীর সংখ্যা ক্রমেই কমেছে। এর পর্যায়ে ২০১৫ সালে বিএনপির ডাকা অবরোধ কর্মসূচি অকার্যকর হয়ে যায়। তখন থেকেই বড় ধরনের কোনো কর্মসূচিতে আর যাচ্ছে না দলটি।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের পর নেতারা মনে করছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাঁধন এবার কিছুটা হলেও আলগা থাকবে। আর এই ধারণায় সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির নানা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণও বেশি দেখা যাচ্ছে।

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সোজাসাপ্টাই বলেছেন, তাদের এখন যে কর্মসূচি সেটি বৃহত্তর আন্দোলনের ওয়ার্মআপ।

এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন খেলার আগে ফুটবলাররা ওয়ার্মআপ করে। ঠিক তেমনি সারা দেশে আন্দোলনের ওয়ার্মাপ শুরু হয়েছে। যতদিন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসা নিশ্চিত না হয় এবং তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত এ আন্দোলন-সংগ্রাম চলবে। আন্দোলন থামবে না।‘

২০০৮ সালের ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে ভরাডুবির পরে বিএনপি জোরালো কর্মসূচি শুরু করে ২০১২ সালের শেষের দিকে। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা উচ্চ আদালতের রায়ে বাতিলের পরও দলটি এই ধরনের সরকারের দাবি করতে থাকে। আওয়ামী লীগ সরকার থাকে অটল।

দুই পক্ষের অনড় মনোভাবের মধ্যে শুরু হয় সহিংস আন্দোলন। পেট্রল বোমা, সড়ক কেটে দেয়া, রেললাইন উপড়ানো, পুলিশের গুলিসহ নানা ঘটনার মধ্যে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপি এবং মিত্রদের অংশগ্রহণ ছাড়াই হয় ভোট।

এই ধরনের একতরফা নির্বাচন এর আগেও দেখেছে বাংলাদেশ। কিন্তু সেই ভোটের পর সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ টিকতে পারেননি দুই বছর, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সরকার টিকতে পারেনি তিন মাসও।

কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার পাঁচ বছর টিকে থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে যখন জাতীয় নির্বাচন দেয়, তার আগে আগে বিএনপি আন্দোলনের হুমকি দিয়েও মাঠে নামেনি। বরং তারা ২০ দলীয় জোটের বাইরে আরও একটি জোট গঠন করে।

লালমনিরহাটে সমাবেশ ঘিরে একপর্যায়ে বিএনপি নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষে জড়ালে গুলি চালায় পুলিশ। ফাইল ছবি

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে ওই জোট এবং ২০ দলীয় জোট সম্মিলিতভাবে ভোটে গিয়ে ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে গিয়ে ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে ফল করে তারা। ভোট শেষে ফলাফল মেনে না নেয়ার ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনের হুমকি দিয়েও পরে সংসদে যায়।

এবার আবার নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি সামনে এনেছে বিএনপি। বলছে, এই সরকার ছাড়া তারা ভোটে যাবে না। এর অংশ হিসেবেই নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপ বর্জনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে বিএনপির জেলা সমাবেশগুলোতে ব্যাপক লোক সমাগমের পাশাপাশি পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষেও জড়াচ্ছেন নেতা-কর্মীরা। হবিগঞ্জে কয়েক ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষের সময় বিএনপির নেতা-কর্মীরা অবস্থান ছাড়তে চাননি।

লালমনিরহাটেও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন নেতা-কর্মীরা। সেখানে পুলিশ গুলি ছুড়লেও তারা জমায়েত ছাড়তে চাননি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সবুর করে ছিলাম। সবুরে মেওয়া ফলে। সবকিছুর একটি নির্দিষ্ট সময় আছে। বিএনপির গণজাগরণ শুরু হয়েছে। এটাকে সিনেমার ট্রেইলার মনে করতে পারেন। পুরো সিনেমা এখনও বাকি। গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন বিএনপির একমাত্র লক্ষ্য।’

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সেলিমা ইসলাম একই ইঙ্গিত করে বলেন, ‘লক্ষ্য অর্জনে বিএনপি এখন সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছে। এখন লড়াই হবে সামনাসামনি। চুপ থাকার দিন শেষ। দমিয়ে রাখা যাবে না। ১৯৭১ সালের যুদ্ধে তরুণরা এগিয়ে গিয়েছিল। আমাদের দলে এখন তরুণ নেতৃত্ব। এবার আর দমানো যাবে না।’

বিএনপির নির্দেশনা এরই মধ্যে সহযোগী সংগঠনকে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে আন্দোলনের অন্যতম শক্তি যুবদল ও ছাত্রদল। বিএনপির পক্ষ থেকে তাদেরকে যেকোনো নির্দেশের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

ছাত্রলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হাসান শ্যামল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এক দফা আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। সাংগঠনিকভাবেও আমরা দলটিকে একটি কাঠামোতে নিয়ে এসেছি। স্বল্প সময়ের মধ্যে আন্দোলনের সাইরেন শুনতে পাবেন।’

জেলা পর্যায়ের যে সমাবেশ, বিক্ষোভ সেটিকে ‘নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন একটি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্যে আছি। এই আন্দোলনের বারুদ ওপরে ওঠার, আন্দোলন তুঙ্গে যাওয়ার দিন ঘনিয়ে আসছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে আমরা সেই গণ-আন্দোলনে যাব। এখন আর নেতাকর্মীরা মার খায় না, তারা রুখে দাঁড়ায়।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একটা আন্দোলন হুট করে হয় না। আমরা নির্বাচনে যাব না। আমরা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চেয়েছি। হাজারটা সংলাপ হলেও সেটা করতে দেবে না। তাই আমাদের কাছে রাস্তা একটাই। আন্দোলন, আন্দোলন, আন্দোলন।’

সংঘর্ষে পিছপা নয়

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে গত ২২ ডিসেম্বর থেকে জেলা পর্যায়ে সমাবেশ শুরু করে বিএনপি, যা চলে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই কর্মসূচিতে বিএনপির জমায়েত ও মনোভাবে এটা স্পষ্ট যে আগামী দিনের রাজনীতিতে রাজপথে তাদের উপস্থিতি থাকবে সরব।

টানা ৯ দিন দেশের জেলা ও বিভাগীয় শহরে এসব দলের স্থায়ী কমিটি, সিনিয়র নেতাসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা অংশগ্রহণ করেছেন।

১৪৪ ধারা ভেঙে গত সপ্তাহে ফেনীতে সমাবেশের তোড়জোড় করে বিএনপি। ফাইল ছবি/নিউজবাংলা

প্রথম দিন ডিসেম্বর হবিগঞ্জের শায়েস্তানগরে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে সকাল থেকে জড়ো হতে থাকেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। সমাবেশে যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরাও সমবেত হন।

শহরের প্রবেশমুখের সড়কে সমাবেশ করতে চাওয়ায় বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় নেতা-কর্মীদের ব্যারিকেড দিয়ে রাখে পুলিশ।

দুপুর দেড়টার দিকে ব্যারিকেড ভেঙে যুবদল নেতা-কর্মীরা প্রধান সড়কে আসতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে হাতাহাতির একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন তারা।

এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুটতে থাকেন নেতা-কর্মীরা। এতে শায়েস্তানগর পয়েন্ট রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়লে পিছু হটেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। কিছুক্ষণ পরে আবারও এগিয়ে এসে ইট-পাটকেল ছুড়লে দ্বিতীয় দফায় সংঘর্ষ বাধে।

সংঘর্ষে পুলিশসহ শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘৯ দিনে টানা প্রায় ৩০টি জেলায় এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হচ্ছে ধারবাহিকভাবে। নেতাকর্মীদের ‘গ্রুমিং’ করার দরকার রয়েছে। সিনিয়র নেতারা সেই চেষ্টাই করছেন। আর খুব শিগগিরই গণ-আন্দোলন দেখতে পাবেন। জনগণের জোয়ার সরকার সামলাতে পারবে না।’

এ বিভাগের আরো খবর