বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য সুখবর। করোনা মহামারির মধ্যেও দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ছে। বিদায়ী বছরের এক মাস বাকি থাকতেই দেশটিতে ৫০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছেন রপ্তানিকারকরা।
বর্তমান বিনিময়হার হিসাবে (৮৫ টাকা ৮০ পয়সা) টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। ডিসেম্বর মাসের তথ্য যোগ হলে ২০২১ সালে কোরিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি ৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন রপ্তানিকারকরা।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো এবং কোরিয়া ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি এক দশকে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে, অন্যদিকে ওই দেশ থেকে আমদানি কিছুটা কমেছে।
দশ বছর আগে ২০১১ সালে বাংলাদেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় মোট ২৪ কোটি ৪০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল। ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সেই রপ্তানি বেড়ে ৪৯ কোটি ৮০ লাখ ডলারে উঠেছে। ডিসেম্বর মাসের তথ্য যোগ হলে রপ্তানির অঙ্ক ৬০ কোটি ডলারে গিয়ে ঠেকবে বলে জানিয়েছেন দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সহসভাপতি সহিদুল্লাহ আজিম।
অন্যদিকে আমদানির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১১ সালে কোরিয়া থেকে ১৬২ কোটি ৭০ লাখ (১.৬২ বিলিয়ন) ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছিল বাংলাদেশ। ২০২০ সালে তা ১০৩ কোটি ৩০ লাখ ডলারে নেমে আসে। আর ২০২১ সালের ১১ মাসে (জানুয়ারি-নভেম্বর) আমদানি করা হয়েছে ১৫১ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য। ডিসেম্বর মাসের আমদানি যোগ হলেও ২০১১ সালের ১৬২ কোটি ৭০ লাখ ডলারের কমই থাকবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, গত ১০ বছরে কোরিয়ায় বাংলাদেশেল রপ্তানি বেশ ভালোই বেড়েছে। আমদানি বাড়েনি; উল্টো কমেছে।
তবে দু দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক কোরিয়ার অনুকুলেই রয়ে গেছে। তবে রপ্তানি বাড়ায় খানিকটা কমেছে। ২০১১ সালে ব্যবধান ছিল ১৩৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার। ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত তা কমে ১০১ কোটি ৮০ ডলারে নেমে এসেছে। বাকি এক মাসের তথ্য যোগ হলেও ব্যবধানটা ২০১১ সালের কমই থাকবে।
বৃহস্পতিবার কোরিয়ান দুতাবাস থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এ বছর কোরিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছবে বলে আশা করা যাচ্ছে। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ২০১ কোটি ৪০ লাখ (২ দশমিক ০১ বিলিয়ন) ডলারে উঠেছে। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫৪ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি।
২০২০ সালের এই ১১ মাসে দুদেশেল মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৩০ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২০১১ সালে ১৮৭ কোটি ২০ লাখ ডলারে উন্নীত হওয়ার পর প্রায় এক দশক ধরে ১৬০ কোটি ডলারের নিচে স্থবির ছিল। কোরিয়াতে বাংলাদেশের রপ্তানি ২০০৭ সালে ১০ কোটি ডলার ছিল। ২০১১ সালে তা বেড়ে ২০ কোটি ডলার হয়। ২০১৩ সালে তা আরও বেড়ে ৩০ কোটি ডলারের উপরে উঠঅর পর স্থবির হয়ে ছিল; ৩০ থেকে ৩৫ কোটি ডলারের মধ্যে ছিল।
তবে করোনা মহামারির মধ্যেও ২০২০ সালে কোরিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি ৪০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। সেই ধারাবাহিকতা ২০২১ সালেও অব্যাহত থাকতে দেখা যায়।
‘২০২১ সালে কোরিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে ৬০ কোটি ডলারে পৌঁছবে আশা করা হচ্ছে,’ বলঅ হয়েছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
কোরিয়ায় বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য হচ্ছে পোশাক, খেলাধুলা ও অবকাশ যাপনের সামগ্রী এবং ব্রোঞ্জ স্ক্র্যাপ। কোরিয়ায় মোট রপ্তানির ৮১ শতাংশই হয় তৈরি পোশাক। ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত দেশটিতে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ। খেলাধুলা ও অবকাশ যাপনের সামগ্রী রপ্তানি বেড়েছে ৯২ শতাংশ।
বাংলাদেশ কোরিয়া থেকে বিভিণ্ন ধরনের যন্ত্রপাতি, পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য, ইস্পাত ও কীটনাশক আমদানি করে থাকে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং-গুন বলেন, ‘এই বছরটি কোভিড-১৯ মহামারির চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দশন রাখবে। আশা করি আগামী বছরগুলোতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও জোরদার হবে।’
বিজিএমইএ সহসভাপতি সহিদুল্লাহ আজিম বলেন, ‘কোরিয়ায় আমাদের রপ্তানি বাড়া একটি ভালো খবর। সার্বিকভাবে আমাদের রপ্তানিতে যে উল্লম্ফন ঘটেছে, এটা তারই একটা প্রভাব। করোনা পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হলে কোরিয়ায় আমাদের রপ্তানি আরও বাড়বে আমি আশা করি।’
আর এর মধ্য দিয়ে বাণিজ্য ব্যবধান কমবে বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।