বাড়ির পাশে পড়ে থাকা ককটেলকে বল ভেবে খেলতে গিয়ে দুই চোখ ও এক হাতের কব্জি হারানো মহরমীকে নিয়ে সংগ্রামী দিন কাটছে তার মায়ের।
গত পহেলা ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের গনকা বিদিরপুর মহল্লার ওই ঘটনায় ভেঙে যায় একটি পরিবারের স্বপ্ন। তবে মেয়েকে নিয়ে আজও সংগ্রাম করে চলেছেন মানসুরা বেগম।
কষ্ট হলেও মেয়েকে পড়ালেখা করাতে চান এই মা। কিন্তু চাঁপাইনবাবগঞ্জে দৃষ্টিহীন মহরমীর পড়ালেখার কোনো সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন তারা।
ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ককটেলকে খেলনা ভেবে খেলার সময় বিস্ফোরণে দুই চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয় মহরমীর; উড়ে যায় ডান হাতের কব্জি। ওই সময় গনকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণিতে পড়তো সে।
বৃহস্পতিবার মহরমীর বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার মা মাসকুরা বেগম ও দাদি আকলিমা বেগমের সঙ্গে।
মহরমীর দাদি আকলিমা বেগম বলেন, ‘আর্থিক অসঙ্গিতর কারণে আর ডাক্তারের কাছে লিয়্যা যাতে পারেনি। বড় কোনো ডাক্তার দেখ্যাতে পারলে চোখটা ফির্যা প্যাতক কি না জানি না, তারপরও হামরা তো লিয়্যাই যাতে পারেনি। এখনও ঠিকমত ঔষধ কিনতে পারি না, এখন চোখের মাঝে মধ্যে সমস্যার কথা বলে, কিন্তু ডাক্তারের কাছে লিয়্যা যাতে পারি না।’
দুর্ঘটনার বর্ণণা দিয়ে মহরমীর মা মানসুরা বেগম বলেন, ‘নতুন বই লিয়্যা সেদিন অ্যাসাছিলো, সেদিন খুব খুশি ছিল। কিন্তু বিকালে বাড়ির বাইরে না যায়, আর না এ ঘটনা ঘটে। জীবনটায় এখন তচনচ হয়্যা গেছে। তখন ফাইভে পরছিল, আজই সিক্সে উঠত। কিন্তু এখন ওর দিকে যখন তাকাই তখনই বুকটা ফ্যাটা যায়, ওর ভবিষ্যই কি হবে। ওই চিন্তা করে পড়ালেখাটা করাতে চাহছি, পড়ালেখার জন্য যে যেখানে য্যাতে কহ্যাছে, সেখানেই গেছি। তবে হয়নি। চাঁপাইনবাবগঞ্জে কোনো সুযোগ নাই।’
তিনি বলেন, ‘এখানে সুযোগ থাকলে হারঘে ল্যাগা ভাল হত। হামার মেয়েও চাই লেখাপড়াটা করতে, বাড়িতে বসে থ্যাক থ্যাকা এখন আরো কষ্ট পাই। পড়ালেখাটা করতে প্যালে, বা আরো কারো সাথে একটু কথা বলতে প্যাত, তখন ওর একটু ভাল লাগত। কিন্ত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য কোন পড়ার সুযোগ নাই এখানে।’
মায়ের পাশে বসে থাকা মহরমী এখনো মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে, হয়তো তার অন্তত একটা চোখে সে দেখতে পাবে। সে বলে, ‘আমার বাবার অবস্থা খুব একটা ভাল নাই, যদি আমার একটা চোখ ভালো করে দিতেন, তাহলে আমি আবারো পড়ালেখা করতাম। ’
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক উম্মে কুলসুম বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মেয়েদের পড়ালেখার কোনো সুযোগই নেই। তবে মহরমীর বিষয়টি, আমরা তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেশের অন্য কোথাও পড়ালেখার সুযোগ করে দেয়া যায় কি না দেখব।’