বরগুনার হাফসা আক্তার স্থানীয় মাদ্রাসা থেকে অংশ নিয়েছিল দাখিল পরীক্ষায়। বৃহষ্পতিবার প্রকাশিত ফলে সে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্ত এ ফলে আনন্দ নেই, বরং বেদনায় নীল হাফসা।
সুগন্ধা নদীতে অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে নিখোঁজ তার বাবা হাকিম শরীফ, মা পাখি বেগম ও ছোট ভাই নাসরুল্লাহ। ছোট বোন-ভাইকে নিয়ে কঠিন সময় পার করছে এ শিক্ষার্থী।
ভালো রেজাল্টের সংবাদ পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে সে। আহাজারি করে বলতে থাকে, ‘এই রেজাল্ট দিয়া মুই কি হরমু, মোর মা-বাপ-ভাইর লাশটাও পাইনায় এহনো। কারে দেহামু এই রেজাল্ট। মোর মা-বাপের সন্ধান দেন। তারা কি পুইড়া ছাই, নাকি ডুইব্বা মরছে। রেজাল্ট দিয়া কি অইবে, মোরে আর কেডা পড়াইবে!’
হাফসার কথা শুনে বেদনার্ত হয়ে পড়েন স্বজন-প্রতিবেশীরাও। সন্তানের সাফল্য উদযাপনে বাড়িতে যখন উৎসব হওয়ার কথা, তখন সেখানে চলছে মাতম।
বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের দক্ষিণ বড় লবনগোলা মানিকখালী গ্রামে হাফসাদের বসবাস। বাবা হাকিম শরীফ ঢাকার একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। হাকিমের সঙ্গে দেখা করতে কয়েকদিন আগে ঢাকায় যান স্ত্রী পাখি বেগম। সঙ্গে ছিল ছোট ছেলে নাসরুল্লাহ।
মেয়ের পরীক্ষার ফল ঘোষণা হবে জেনেই ২৩ ডিসেম্বর বাড়ি ফেরার জন্য স্ত্রী-সন্তানসহ ঢাকা থেকে রওনা দেন হাকিম। এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের যাত্রী ছিলেন তারা। এরপর আর বাড়ি ফেরা হয়নি। লঞ্চে অগ্নকাণ্ডের পর তারা সাত দিন ধরে নিখোঁজ আছেন।
তাদের মরদেহের সন্ধান না পেলেও শোকের সাগরে ভাসছে পরিবারটি। ছোট বোন সুমাইয়া আর ভাই ফজলুলকে নিয়ে কেঁদেই কাটছে হাফসার দিনরাত।
ভয়াবহ দুর্ঘটনায় থমকে গেছে জীবনের সব আনন্দ। অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে এখন চরম উৎকণ্ঠায় হাফসা। স্বজনদের প্রবোধ তাকে শান্ত করতে পারছে না।
সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে আগুন
২৩ ডিসেম্বর রাত ৩টার দিকে ঝালকাঠির পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দেউরী এলাকায় সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে বিস্ফোরণের পর আগুন ধরে যায়। এতে ৪৫ জনের প্রাণহানির তথ্য জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
পুড়ে যাওয়া লঞ্চটিতে কত যাত্রী ছিলেন, তার সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বলছে, লঞ্চটিতে অন্তত ৪০০ যাত্রী ছিলেন। তবে লঞ্চ থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের অনেকের দাবি, যাত্রী ছিলেন ৮০০ থেকে এক হাজার।