রাজধানীর গুলিস্তানে পুলিশের এএসআইয়ের চালানো বাসের চাপায় নিহতদের একজন হচ্ছেন আমেরিকা প্রবাসী। ৫৮ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির নাম শুকুর মাহমুদ। অন্যজন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন।
গুলিস্তানে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারসংলগ্ন সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্সের বিপরীত পাশের সড়কে বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
রোড ডিভাইডার ভেঙে পথচারীকে চাপা দেয়ার এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে দুই। আহত তিনজনের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) মৃত্যু হয়েছে শুকুর মাহমুদ ও মোহাম্মদ তুষারের।
ঢাকা মেডিক্যালে দুজনের মৃতদেহ শনাক্ত করেছেন স্বজনরা।
বিকেল সোয়া ৫টায় আমেরিকা প্রবাসী শুকুর মাহমুদের মরদেহ শনাক্ত করেন তার স্ত্রী হাসিনা বেগম কেয়া।
তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী শুকুর মাহমুদ ব্যক্তিগত কাজে দুই মাস আগে বাংলাদেশে আসেন।’ ঢাকায় শপিং শেষে বাসায় ফেরার সময় আজ বিকেল ৪টার দিকে আমার স্বামী সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন। খবর পেয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে আমার স্বামীর মরদেহ দেখতে পাই।’
তিনি আরও জানান, ‘আমার শ্বশুরবাড়ি কুমিল্লা দাউদকান্দির গৌরীপুর এলাকা। নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা এলাকায় আমরা সপরিবারে থাকতাম। তিনি দুই ছেলের বাবা ছিলেন। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ছোট।’
বাসচাপায় আহত মোহাম্মদ তুষার চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢামেকে সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় মারা যান।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় নিহতের বাবা কামাল উদ্দিন চৌধুরী ছেলের মরদেহ শনাক্ত করেন। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিল। ওর মুঠোফোন থেকে জানতে পারি গুলিস্তানে বাসচাপায় আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি আছে। দ্রুত আমরা ঢামেকে এসে দেখতে পাই আমার ছেলের মৃতদেহ চাদর দিয়ে ঢাকা অবস্থায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বাসা ৩৮৮/৪ খন্দকার রোড পশ্চিম জুরাইন শ্যামপুর ডাক্তার গলিতে। এক বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সে ছিল ছোট।’
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘দুটি মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে রাখা হয়েছে। থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আসার পর কী সিদ্ধান্ত নেন পরে জানা যাবে।’
পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন মিয়া জানান, শ্রাবণ পরিবহনের বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রোড ডিভাইডারের ওপর উঠে যায়। এতে রাস্তার পাশে থাকা পথচারীদের অন্তত তিনজন আহত হন।
পল্টন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সেন্টু মিয়া জানান, শ্রাবণ পরিবহনের একটি বাসের চাপায় আহতদের ঢাকা মেডিক্যালে নেয়ার পর একজন মারা যান।
গত মঙ্গলবার রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় এনা পরিবহনের একটি বাস রোড ডিভাইডার ভেঙে অন্য পাশে থাকা মাইক্রোবাসের ওপর পড়ে। এতে মাইক্রোবাসটির চালক আহত হন।
কী বলেন প্রত্যক্ষদর্শীরা
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশের পোশাক পরা অবস্থায় বাসটি চালিয়ে নিতে এমদাদকে দেখেছেন তারা।
কাপ্তানবাজার মার্কেটের সামনে সড়ক দিয়ে বাসটি চালিয়ে সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্সের দিকে যাওয়ার পথে ডানে মোড় নেয়ার সময় দুর্ঘটনা ঘটে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যবসায়ী জানান, গাড়িতে তখন কোনো যাত্রী ছিল না। পুলিশ সদস্য এমদাদ কোথা থেকে বাসটি চালিয়ে আনেন, তা জানাতে পারেননি তিনি।
শ্রাবণ পরিবহনের বাসটি পুলিশ সদস্য চালাচ্ছিলেন বলে অন্তত ১০ প্রত্যক্ষদর্শী নিউজবাংলাকে বলেছেন। তারা প্রত্যেকেই স্থানীয় ব্যবসায়ী। তবে পরবর্তী সময়ে ঝামেলা হবে এমন ভয়ে তারা কেউই নিজেদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনামতে, ১০০ গজের মধ্যেই ডানে মোড় নিতে গিয়ে পথচারীদের ওপর বাস তুলে দেন এমদাদ। বাসের ধাক্কায় পথচারীরা আহত হন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় একজনের। কয়েকটি রিকশা ও মোটরসাইকেলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মদনপুর থেকে গুলিস্তানে চলাচল করে শ্রাবণ পরিবহন। কাপ্তানবাজার কমপ্লেক্স ভবনের সামনে দিয়ে শ্রাবণ পরিবহনের বাসগুলো এসে তাদের যাত্রী নামিয়ে দেয়। এরপর সামনের রাস্তা ঘুরে গুলিস্তান সেন্ট্রাল জামে মসজিদের সামনে যাত্রী উঠিয়ে আবার মদনপুরের উদ্দেশে রওনা হয়।
‘একটু সামনে যাওয়ার পরই ডানে মোড় নিতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন পুলিশের ওই সদস্য। গাড়িটি উঠিয়ে দেন পথচারীদের ওপর। ধাক্কা দেন কয়েকটি মোটর সাইকেল ও কয়েকটি রিকশাকে।’
এক পথচারীর ওপর দিয়ে বাসের চাকা চলে যায় বলে জানান আরেক পথচারী। তিনি বলেন, ‘পুলিশের সদস্য যে গাড়িটি চালাচ্ছিলেন তা ওই এলাকায় দায়িত্ব পালন করা পুলিশ সদস্যরা কেউ স্বীকার করছেন না।’
এ বিষয়ে জানতে সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্সে গেলে অতিরিক্ত পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়। তবে পুলিশ বক্সে প্রবেশমুখে গেট আটকে রাখেন পুলিশের সদস্যরা। গেটে থাকা পুলিশ সদস্যরা জানান, ভেতরে তাদের স্যারদের কেউ নেই। সবাই মেডিক্যাল গেছেন।
পুলিশ ফাঁড়ির সামনেই আহত এক রিকশাচালককে পাওয়া যায়। তার নাম রমজান আলী। হাত ও পায়ে আঘাত পেয়েছেন তিনি। ওই রিকশাচালক বলেন, ‘আমার নিজের অবস্থাই খারাপ, কেডা চালাইছে দেহি নাই। শুনছি পুলিশ চালাইছে। এ জন্য এইখানে আইসি।’