আমলাতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদের কারণে দেশের উন্নয়নের গতি থমকে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। রাজনীবিদদের চেয়ে আমলাতন্ত্রে কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা বেশি বলেও মনে করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের (ডিজেএফবি) আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
আলোচনা সভা ছাড়াও অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধু ও উন্নয়ন দর্শন’ শীর্ষক প্রকাশনার উন্মোচন এবং ‘ডিজেএফবি বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড-২০২১’ প্রদান করা হয়।
এম এ মান্নান বলেন, ‘আমরা বিদেশিদের এখানে বিনিয়োগের আহ্বান জানাই। কিন্তু তারা বিমানবন্দরে নেমেই হয়রানিতে পড়েন। তারা চান দ্রুত ইমিগ্রেশন শেষ করে লাগেজ ফেরত পেতে। কিন্তু এসব কাজে এখানে অনেক দেরি হয়। বিনিয়োগ করতে গিয়েও আমলাতন্ত্রের মধ্যে পড়ে যান তারা। এই অঞ্চলে রাজনীতিবিদদের তুলনায় আমলারা অনেক বেশি কর্তৃত্ববাদী। একই অবস্থা আমাদের দেশেও।
‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিনিয়োগকারীদের বলেন- আসুন, বিনিয়োগ করুন। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা এসে আমলাতন্ত্রের কাছে মার খান।’
পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, ‘জ্বালানি তেল ও অস্ত্রের বাজার বড় বাজার। এ বাজারের ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করে। তাই মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি বা কম শুধু অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়। এটি আন্তর্জাতিক বিষয়ও। আমাদের দক্ষতা ও শ্রমিকের মান বাড়াতে হবে। দারিদ্র্য নিরসনে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।’
ডিজেএফবি সভাপতি হুমায়ন কবীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম ও পরিকল্পনা সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী।
‘এলডিসি উত্তরণ: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান।
আলোচনায় অংশ নেন পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মামুন-আল-রশীদ, শরিফা বেগম ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব আব্দুল বাকী।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডিজেএফবি সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান।
পরে দুই ক্যাটাগরিতে চার সংবাদ কর্মীকে ডিজেএফবি বেস্ট রিপোর্টি অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়। তারা হলেন- সময়ের আলো’র এম আর মাসফি, বিজনেস পোস্টের রফিকুল ইসলাম, এনটিভির হাসানুল শাওন ও যমুনা টিভির তৌহিদ পাপন।
মূল প্রবন্ধে ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এলডিসি থেকে উত্তরণের পথে প্রধানত তিনটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গুরুত্ব দিতে হবে। এগুলো হলো- বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও পরিবহন অবকাঠামোর উন্নয়ন। উত্তরণের পর বাজার সুবিধা হারানো, স্বল্প সুদে ঋণ প্রাপ্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুযোগ হাতছাড়া হবে। তাই মধ্য আয়ের জার্নিতে সচেতন থাকতে হবে।
‘আমাদের আঞ্চলিক বাজারের দিকে নজর দিতে হবে। প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। শিক্ষা ক্ষেত্রে সংস্কার আনতে হবে। বর্তমান বাজার সুবিধানির্ভর প্রতিযোগিতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে শোভন কর্মসংস্থান বাড়ানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। মাথাপিছু আয়ের সুষম বণ্টন করতে হবে। সব স্তরে বৈষম্য কমানো না গেলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।’
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ‘এলডিসি-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দর কষাকষির সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অনেক বেশি কাজ করতে হবে। ভিয়েতনামকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। বাণিজ্য ক্ষেত্রে তাদের কাছে অনেক কিছুই শেখার আছে। এখানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে মূল ভূমিকা নিতে হবে।
‘ধনী হওয়ার একমাত্র পথ রপ্তানি বাড়ানো। আমাদের এফটিএ, পিটিএসহ নানা রকম বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে। ইতোমধ্যে এগুলো নিয়ে কাজও শুরু হয়েছে। আমাদের আমদানি শুল্ক অনেক বেশি। এগুলো কমাতে হবে। সেসঙ্গে বাণিজ্য অবকাঠামো সুবিধা বাড়াতে হবে।’
পরিকল্পনা সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘তথ্য-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। চতুর্থ শিল্প-বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নিজেদের প্রস্তুতি ঠিক রাখতে হবে।’
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘পোশাক খাতে শুধু কাপড় আমদানি করে তা কেটে পোশাক বানানো থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদেরকে রিসাইক্লিংয়ে যেতে হবে। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর অন্যতম ইস্যু হচ্ছে প্রতিযোগিতা। কোনও দেশ থেকে বাণিজ্য সুবিধা নিতে গেলে তাদেরকেও কিছু না কিছু সুবিধা দিতে হবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের শুল্ক অনেক বেশি। সেগুলো কমানো দরকার।’