২০২১ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের ৯ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ নানা সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
কর্তৃপক্ষ বলছে, এদের মধ্যে কেউ অস্বাভাবিকভাবে মারা গেছেন। কারও মৃত্যু হয়েছে রোগে, সড়ক ও নৌযান দুর্ঘটনা এবং মানসিক হতাশা থেকে। শিক্ষার্থীদের মানসিক হতাশা কাটাতে কাজ করার কথা জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
সর্বশেষ ২২ ডিসেম্বর রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকার এক বাসা থেকে সদ্য ভর্তি হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের মেহেবুল্লাহ তৌসি নামে এক ছাত্রের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
স্বজনরা জানান, মেহেবুল্লাহ মানসিক হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। এটা আত্মহত্যা হতে পারে বলেই তাদের ধারণা।
ওই ঘটনার মাত্র চার দিন আগে ১৮ ডিসেম্বর নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলায় ইটবাহী ট্রাকচাপায় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সাবরিনা আক্তার মিতু নিহত হন।
২০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া মেহজাবিন স্বর্ণার ফাঁস দেয়া মরদেহ উদ্ধার করেন স্বজনরা।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পলাশপোল মধুমাল্লার ডাঙ্গী গ্রামে বাড়ি স্বর্ণার। স্বর্ণা পড়াশোনা নিয়ে চরম হতাশায় ছিলেন বলে জানান স্বজনরা। সে হতাশা থেকে শিক্ষকদের প্রতি ক্ষোভ থেকে আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি স্বজনদের।
২৯ সেপ্টেম্বর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী অমিতোষ হালদার ‘আত্মহত্যা’ করেছেন বলে খবর পাওয়া যায়৷ অমিতোষের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের পাটিকেলবাড়ি পূর্বপাড়া গ্রামে। অবশ্য পুলিশ ও স্বজন কেউ ‘আত্মহত্যা’ কি না, কিংবা কেন ‘আত্মহত্যা’ তার কোনো কারণ জানতে পারেনি৷
একই মাসের ৯ তারিখে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আল আমিন লেবু মারা যান। তিনি কয়েক দিন ধরে জ্বর-কাশিতে ভুগছিলেন। পরে হঠাৎ জ্বরের মাত্রা বেড়ে গেলে তার মৃত্যু হয়। ২৮ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরীর আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার থেকে পড়ে গুরুতর আহত হওয়ার চার দিন পর ১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় আকবর হোসেন খানের মৃত্যু হয়।
আকবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাড়ি সিলেটের মৌলভীবাজারে। এটি মৃত্যু, হত্যা, নাকি আত্মহত্যা তা নিশ্চিত করতে পারেননি পুলিশ বা তার স্বজনরা।
এ ঘটনার মাত্র সপ্তাহখানেক আগে ২২ আগস্ট রাজধানীর উত্তরার একটি কোচিং সেন্টার থেকে মেজবাহ উল আজিম নামে এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
আজিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের জেনেটিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন৷ সহপাঠীদের ধারণা, প্রেমঘটিত সমস্যার কারণে ‘আত্মহত্যা’ করেছেন। তবে পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে। এখনও সে সম্পর্কে কোনো কূলকিনারা হয়নি।
সে ঘটনার আগের মাসে ১২ জুলাই জ্বর ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাহাত আরা রিমির মৃত্যু হয়।
তার আগে লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২০ মে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রবিন হালদারের মৃত্যু হয়।
বিষয়টি নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যেসব শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে তাদের বেশির ভাগই আত্মহত্যা বলা হচ্ছে। আমরা শিক্ষার্থীদের মানসিক চিকিৎসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারে দুটি রুম বরাদ্দ নিয়েছি। কাজ শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীরা পরামর্শ নিচ্ছেও। অফিশিয়ালি নতুন বছরের শুরুতেই এটি উদ্বোধন করা হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও মানসিক স্বাস্থ্য সহায়ক আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সারা বিশ্বের কোথাও আত্মহত্যাপ্রবণতা শূন্য করা সম্ভব নয়৷ তবে শিক্ষার্থীদের কাউন্সিলের মাধ্যমে একটা কমিটমেন্টে নিয়ে আসা যায়। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কাউন্সিলিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। যেখানে খুব অল্প সময়ে ২০ জনের মতো শিক্ষার্থীকে কাউন্সিলিং করা হয়েছে।’