স্থানীয়দের আর্জি ছিল আফস্পা আইন প্রত্যাহারের। কিন্তু তা পাশ কাটিয়ে নাগাল্যান্ডকে উপদ্রুত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে বিতর্কিত আইনটি বলবৎ রাখার মেয়াদ বাড়িয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পীযূষ গোয়েল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘গোটা নাগাল্যান্ড এমন একটি বিপর্যস্ত ও বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে যে জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে বিশেষ ক্ষমতা দেয়া হচ্ছে। আইন মোতাবেক কেন্দ্রীয় সরকার পুরো নাগাল্যান্ড রাজ্যকে ৬ মাসের জন্য অশান্ত এলাকায হিসেবে চিহ্নিত করছে। এই আইন ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ থেকে কার্যকর হবে।’
এর আগে নাগাল্যান্ডের অংশবিশেষে আফস্পা আইন বলবৎ থাকলেও এখন থেকে তা গোটা রাজ্যে বলবৎ থাকবে।
জঙ্গি সন্দেহে ভারতীয় নিরাপত্তা রক্ষীর গুলিতে নাগাল্যান্ডের ওটিংয়ে ১৩ গ্রামবাসীর মৃত্যুতে বিতর্কিত আফস্পা আইন প্রত্যাহারের দাবি জোরদার হয়। এ নিয়ে স্থানীয়দের বিক্ষোভ-প্রতিবাদ চলছে। মনিপুর সরকার কেন্দ্রের কাছে আফস্পা প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছে। নাগাল্যান্ড বিধানসভায়ও আফস্পা আইন প্রত্যাহারের দাবিতে সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব পাস হয়েছে।
রাজ্যে ব্যাপক প্রতিবাদের পরও কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এসব পাশ কাটিয়ে আগামী ৬ মাসের জন্য নাগাল্যান্ডকে উপদ্রুত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে আফস্পা আইন বলবৎ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলো থেকে সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা প্রত্যাহারের দাবি দীর্ঘদিনের। নিরাপত্তার নামে সাধারণ নাগরিকদের ওপর সেনাবাহিনী অকথ্য অত্যাচার করে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে। তারপরও প্রতি ৬ মাস অন্তর বিতর্কিত এই আফস্পা আইনের মেয়াদ বৃদ্ধি করে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
সেনাবাহিনীর গুলিতে নিরীহ ১৩ গ্রামবাসী নিহত হওয়ার ঘটনায় আফস্পা প্রত্যাহারের দাবি জোরালো হলে আফস্পার প্রয়োজনীয়তা খতিয়ে দেখতে ৪৫ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অবশেষে বৃহস্পতিবার জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে আফস্পা প্রত্যাহারের সম্ভাবনা খারিজ হয়ে গেছে।
আফস্পা আইনে সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ ক্ষমতায় শুধু সন্দেহের বশে কাউকে গুলি করে হত্যা করতে পারে। এছাড়াও কারও বাড়ি উড়িয়ে দেয়া, ওয়ারেন্ট ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার বা হত্যা করতে পারে সেনাবাহিনী।
বর্তমানে ভারতের জম্মু-কাশ্মীর, মনিপুর, আসাম, নাগাল্যান্ড এবং ইম্ফল ও অরুণাচল প্রদেশের কিছু অংশে বিতর্কিত এই আফস্পা আইন বলবৎ রয়েছে।