রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে নিয়োগ পাওয়ার পর নিয়োগপত্র পেতে ৫০০ টাকা করে দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চাঁদা না দিলে নিয়োগপত্র মিলছে না।
নিয়োগ পাওয়া একাধিক প্রার্থী ও তাদের অভিভাবক এ অভিযোগ তুলেছেন। তারা জানান, নিয়োগপত্র পেতে জনপ্রতি ৫০০ টাকা করে দিতে হচ্ছে।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে সম্প্রতি ৯টি পদের বিপরীতে ১০৪ জন নিয়োগ পেয়েছেন।
জেলা পরিষদে গিয়ে এসব অভিযোগের চিত্র দেখতে পেয়েছে নিউজবাংলা।
সোমবার সেখানে দেখা যায়, নিয়োগপ্রাপ্তদের নিয়োগপত্র বিতরণ করছেন জাফর আহম্মদ নামের এক কর্মচারী। নিয়োগপত্র বাবদ প্রার্থীদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। এ সময় পাশে ছিলেন জেলা পরিষদের শুভ শংকর চাকমা নামে আরেক কর্মচারী।
এই প্রতিবেদক সরাসরি সেখানে উপস্থিত হলে টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন জাফর। পরে নিয়োগ পাওয়া এক প্রার্থীসহ তার অভিভাবককে সঙ্গে নিয়ে অফিস থেকে বের হওয়ার সময় টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি।
এ বিষয়ে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সহকারী আনন্দ তিষ্য চাকমার সঙ্গে কথা বলতে বলেন শুভ শংকর ও জাফর।
তবে আনন্দ তিষ্য চাকমা দাবি করেন, এ বিষয়ে তিনি জানেন না এবং জেলা পরিষদ থেকে টাকা নেয়ার জন্য কোনো নির্দেশনাও দেয়া হয়নি।
এদিকে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের দায়িত্বশীল সূত্রের দাবি, জাফর পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মচারী। তিনি জেলা পরিষদের কেউ নন।
রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৯ সালে পার্বত্য তিন জেলাতে গঠিত হয় স্থানীয় সরকার পরিষদ। পরে ১৯৯৮ সালে তিন জেলায় স্থানীয় সরকার পরিষদ বদলে পার্বত্য জেলা পরিষদ নামকরণ হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির শর্তানুযায়ী, এ তিন জেলা পরিষদে হস্তান্তরিত হয় পরিবার পরিকল্পনাসহ মোট ৩০টি বিভাগ।
জেলা পরিষদের বর্তমান পর্ষদের পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের প্রথম নিয়োগ ছিল এটি। এসব নিয়োগ স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত হয়েছে বলে নিয়োগ কমিটি দাবি করলেও নিয়োগপত্র বিতরণে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ ওঠে।
পরিবার পরিকল্পনা সহকারী পদে নিয়োগ পাওয়া নিউনিকা চাকমা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জেলা পরিষদের তৃতীয় তলায় নিয়োগপত্র নিতে গেলে এক ব্যক্তি ৫০০ টাকা দিতে হবে বলেন। টাকা দেয়ার ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও তাদের দিতে হয়েছে। তবে আমি শুনেছি, কয়েক জন থেকে তারা নাকি এক হাজার টাকাও নিয়েছেন।’
দুই চাকরি প্রার্থীর অভিভাবক রূপেশ চাকমা বলেন, ‘নিয়োগপত্র ডাকযোগে পাঠালে ভাল হতো। আমার ভাগিনাসহ দুই প্রার্থী থেকে এক হাজার টাকা চাইছিল। আমার পকেটে টাকা না থাকায় দিতে পারিনি। পরে তারা ৫০০ টাকা জমা দিয়ে নিয়োগপত্র সংগ্রহ করে।’
চাঁদা নেয়া বিষয়ে জাফর আহম্মদ বলেন, ‘আমরা তাদেরকে জোর করছি না। যারা দিতে ইচ্ছুক, তারা দিবে। যারা দিবে না, আমরা জোর করে নিচ্ছি না।
‘আমাদের মিষ্টি মুখ করানোর জন্য যাদের ইচ্ছে তারা টাকা দিচ্ছে। যারা টাকা দিতে অনিচ্ছুক, তাদের নিয়োগপত্র দিয়ে দিচ্ছি।’
আনন্দ তিষ্য বলেন, ‘নিয়োগপত্রের জন্য প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়ে পরিষদ থেকে কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। এসব সত্যি হলে যাদের থেকে টাকা নেয়া হয়েছে, তাদের ডেকে টাকা ফেরত দেয়া হবে’।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত হয়েছে। নিয়োগপত্র প্রদানে টাকা লেনদেনের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’