২০১০ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকার বিনা মূল্যে বই বিতরণের যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, তা এবার ৪০০ কোটির ঘর ছাড়াতে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে সংখ্যাটি দাঁড়াচ্ছে ৪০০ কোটি ৫৪ লাখ ৬৭ হাজার ৯১১টি।
২০২০ সাল পর্যন্ত দেশে বই বিতরণ করা হয়েছিল ৩৬৫ কোটি ৮৪ লাখ ৪৫ হাজার ৭৮১টি।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন, এবার নতুন শিক্ষাবর্ষের জন্য সারা দেশে ৪ কোটি ১৭ লাখ ২৬ হাজার ৮৫৬ শিক্ষার্থীর মাঝে ৩৪ কোটি ৭০ লাখ ২২ হাজার ১৩০ কপি বই বিতরণ করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এসএসসির ফল প্রকাশ ও বিনা মূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এ তথ্য জানান।
এবার যে বই বিতরণ করা হচ্ছে, তার মধ্যে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল পাঠ্যপুস্তক ও পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষায় প্রণীত পাঠ্যপুস্তক রয়েছে।
বিনা মূল্যের বই প্রথমে কেবল প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের দেয়া হতো। পরে মাধ্যমিকেও বই দেয়া হতে থাকে।
প্রতি বছর ১ জানুয়ারি দেশের প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উৎসবের আয়োজন করে বই তুলে দেয়া হতো, যার নাম দেয়া হয় বই উৎসব। তবে করোনার কারণে গত বছরের মতো এবারও উৎসব হচ্ছে না।
প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পর শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দিচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে বই বিতরণের কাজ উদ্বোধন করেছেন। শিক্ষার্থীদের জড়ো না করেই স্কুলে স্কুলে আলাদা বই তুলে দেয়া হবে।
পাঠ্যক্রমে আসছে আমূল পরিবর্তন
শিক্ষামন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে রূপকল্প ২০৪১ ঘোষণা করেছেন, তা বাস্তবায়ন করতে শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনা হচ্ছে। পরিবর্তনশীল বিশ্বের শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘সরকার জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার পরিবর্তে দক্ষতা ও প্রায়োগিক শিক্ষায় গুরুত্বারোপ করছে। সে লক্ষ্য অর্জনে নতুন পাঠ্যক্রম প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে।’
মন্ত্রী জানান, ২০২২ সালে ৬০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন কারিকুলাম পাইলটিং হবে এবং ২০২৩ সাল থেকে নতুন পাঠ্যক্রমের ভিত্তিতে শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করা হবে। শিক্ষাব্যবস্থার সব পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধিতে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
রাজধানীর সেগুনবাগিচা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে আসা নতুন বই দেখছে শিক্ষার্থীরা
কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্দিষ্ট করার কথাও বলেন শিক্ষামন্ত্রী। বলেন, দেশে দক্ষ জনসম্পদ সৃষ্টি করতে সরকার কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার ২০৩০ সাল নাগাদ ৩০ শতাংশ এবং ২০৪০ সাল নাগাদ ৫০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। সরকারের গৃহীত নানা কার্যক্রমের ফলে বর্তমানে কারিগরি শিক্ষায় অংশগ্রহণের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
সরকার চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী শিক্ষাক্রম প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী। বলেন, ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী শিক্ষাক্রম প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বাড়ানো হচ্ছে কারিগরি শিক্ষার পরিধি।
‘দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ১০০টি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। ৩২৯টি টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপন প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। আটটি বিভাগীয় শহরে আটটি মহিলা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ স্থাপন করা হবে।’
এই উদ্যোগ চাকরির বাজারে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করে তাদের ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলেও আশাবাদী মন্ত্রী।