দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন আপিল বিভাগের বিচারক বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়টি অনুমোদন দিয়েছেন।
শুক্রবার বিকাল ৪টায় বঙ্গভবনে শপথ নেবেন প্রধান বিচারপতি। তাকে শপথ পাঠ করাবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। আইন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তাও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের শেষ কর্মদিবস ছিল বৃহস্পতিবার। আজ তার ৬৭ বছর পূর্ণ হলো।
সংবিধান অনুযায়ী নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগে অনুমোদন দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে কে নিয়োগ পাচ্ছেন তা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে আলোচনা চলছিল।
আইনজীবীদের মধ্যে অনেকে ধারণা করেছিলেন যে জ্যেষ্ঠতা ও যোগ্যতা অনুযায়ী পরবর্তী প্রধান বিচারপতি হতে পারেন বিচারপতি ইমান আলী। তবে কেউ কেউ মনে করেছিলেন, সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আপিল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে পরবর্তী প্রধান বিচারপতি করা হতে পারে।
আইনজীবীরা বলেছিলেন, আপিল বিভাগে চার বিচারপতির তিনজনেরই অবসরের মেয়াদ ২০২৩ সালের মধ্যে। এ ক্ষেত্রে একটু বেশি সময় পাবেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী উচ্চ আদালতে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগে একজন সফল আইনজীবী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। আইনজীবী হিসেবে তিনি খুলনা সিটি করপোরেশন, কুষ্টিয়া পৌরসভা, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন সংস্থা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান আইন উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ৩০ এপ্রিল ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
আবদুর গফুর মোল্লা ও নূরজাহান বেগম দম্পতির সন্তান হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর জন্ম ১৯৫৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার রমানাথপুর গ্রামে।
তিনি ১৯৭২ সালে খোকসা জানিপুর পাইলট হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন ১৯৭৪ সালে সাতক্ষীরার সরকারি পিসি কলেজ থেকে। এরপর বিএ পাস করেন সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ থেকে। তিনি এমএ পাস করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে। এলএলবি পাস করেন ধানমণ্ডি ল’ কলেজ থেকে।
আইনজীবী হিসেবে হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের তালিকাভুক্ত হন ১৯৮১ সালে। জেলা আদালতে প্র্যাকটিস শুরু করেন ১৯৮১ সালের ২১ আগস্ট। ১৯৮৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের সনদ লাভ করেন। আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন ১৯৯৯ সালের ২৭ মে।
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ২০০১ সালে হাইকোর্টে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২০০৯ সালের ২৫ মার্চ হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে এবং ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। বিচারপতি হিসেবে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও ভারতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি। এছাড়াও তিনি সৌদি আরব সফর করেছেন।
বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর বড় ভাই বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি থেকে অবসরে গেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম দুই ভাই সুপ্রিমকোর্টের উভয় বিভাগে বিচারক পদে আসীন হওয়ার নজির স্থাপন করেছেন।