দেশেই একদিন বিমান, হেলিকপ্টারের পাাশাপাশি যুদ্ধবিমান নির্মাণ করা সম্ভব হবে বলে বিশ্বাস করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ ও গবেষণা খাতে জোর দেয়ার কথা বলেছেন তিনি।
যশোরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে বিমান বাহিনীর শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন সরকারপ্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মহাকাশ গবেষণা, বিমান বাহিনীর উন্নয়ন এবং বেসামরিক বিমান চলাচল সেক্টরকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়, যেটা লালমনিরহাটে আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার মাধ্যমে আমাদের দেশেই একদিন বিমান, হেলিকপ্টার, যুদ্ধবিমান আমরা নিজেরা তৈরি করতে পারব। সেই বিশ্বাস আমার আছে। সেই হিসাবে আমরা এখন থেকে প্রশিক্ষণ নিতে চাই, গবেষণা করতে চাই। আকাশ গবেষণার ওপর আমরা সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিই।’
বাংলাদেশের আকাশসীমায় ‘আকাশ প্রতিরক্ষা শনাক্তকরণ এলাকা’ নির্ধারণ করে ‘এয়ার ডিফেন্স নোটিফিকেশন সেন্টার’ চালু করা দেশের আকাশ প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তায় যুগান্তকারী ভূমিকা রাখছে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
দীর্ঘ তিন বছর কঠোর প্রশিক্ষণ শেষে কমিশন পাওয়া বিমান বাহিনীর নবীন কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের দিনটি তোমাদের জন্য যেমন আনন্দের, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখবে, তোমাদের কর্মক্ষেত্র শুধু বাংলাদেশই না, জাতিসংঘ শান্তি মিশনেও কিন্তু আমাদের বিমান বাহিনী বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে। অনেক ক্রিটিক্যাল জায়গা, যেখানে অন্য কোনো দেশ যেতে সাহস পায় না, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা সেসব জায়গায় দায়িত্ব পালন করছে। কাজেই আমি মনে করি, ভবিষ্যতের জন্য তোমাদের সেইভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।’
দায়িত্ব পালনকালে নবীন কর্মকর্তাদের সবসময় দেশ ও দেশের মানুষকে ভালবাসতে হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ দায়িত্ব পালনকালে সততা এবং কর্তব্যবোধ যেন তোমাদের মাঝে থাকে সে বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দেবে। আজ শপথ গ্রহণের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার যে বিরাট দায়িত্ব তোমাদের কাঁধে অর্পণ করা হলো, তা নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সঙ্গে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে পালন করবে বলে আমি আশা করি।’
জাতির পিতার অমিয় বাণী বুকে ধারণ করে নিজেদের দেশ ও জাতির প্রত্যাশা পূরণে সচেষ্ট থাকতে বলেছেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘তোমাদের পূর্বসূরিদের দূরদর্শিতা, পেশাদারত্ব ও কঠোর পরিশ্রমে বিমান বাহিনী আজ যে পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, তাকে তোমাদের মেধা, পেশাদারত্ব ও দেশপ্রেম দিয়ে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে আমরা উন্নত বিশ্বের বিমান বাহিনীর সমপর্যায়ে দেখতে চাই।’
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর বিমান বাহিনীকে শক্তিশালী করতে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সরকারের আসার পর ৯৬ সালে মিগ ২৯ ক্রয় করি। যদিও এটা ক্রয় করায় পরবর্তী সরকার আমার বিরুদ্ধে মিগ কেন কিনলাম তার জন্য দুইটা মামলা দেয়। যা হোক, ওটা আমি পরোয়া করি না। এই মামলায় কোনো কিছু প্রমাণ করতে পারেনি।’
আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন বিমান বাহিনী গড়ে তোলা সরকারের লক্ষ্য বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের বিমান, রাডার ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জামের সুষ্ঠু, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী রক্ষণাবেক্ষণ এবং ওভারহলিংয়ের লক্ষ্যে নির্মাণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু অ্যারোনটিক্যাল সেন্টার। এই সেন্টারের তত্ত্বাবধানে বর্তমানে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী নিজস্ব প্রযুক্তি ও জনবলের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের বিমান ও হেলিকপ্টার ওভারহলিং করছে।’
উন্নততর এবং যুগোপযোগী উড্ডয়ন প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে অত্যাধুনিক ফ্লাই-বাই-ওয়্যার এবং ডিজিটাল ককপিট সংবলিত ইয়াক-১৩০, কমব্যাট ট্রেইনার, কে-এইট ডব্লিউ, জেট ট্রেইনার, এল-ফোর ওয়ান জিরো, ট্রান্সপোর্ট ট্রেইনার, এডব্লিউ-ওয়ান ওয়ান নাইন কেএক্স হেলিকপ্টার ট্রেইনার এবং বিভিন্ন ধরনের সিমুলেটর বিমান বাহিনীতে সংযোজন করা হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর জন্য ‘সার্টিফায়েড টায়ার-থ্রি ডেটা সেন্টার’ কেনা হয়েছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে এর স্থাপন কাজ চলমান। এই ডেটা সেন্টারের মাধ্যমে বিমান বাহিনীর বিভিন্ন কার্যক্রম প্রথাগত পদ্ধতির পরিবর্তে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পাদন করা সম্ভব হবে। অতি সম্প্রতি বিমান বাহিনীর জন্য ক্রয় করা হয়েছে ভিস্যাট হাব ও টার্মিনাল স্টেশন। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর সহায়তায় এই ভিস্যাট হাব ও টার্মিনাল স্টেশনের মাধ্যমে বিমান বাহিনীর ঘাঁটি ও ইউনিটসমূহের মধ্যে স্যাটেলাইটভিত্তিক যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হবে।’
এ ছাড়াও শিগগিরই বিমান বাহিনীতে যুক্ত বিভিন্ন ধরনের অত্যাধুনিক বিমান, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এয়ার ডিফেন্স রাডার ও সিমুলেটর, এটিএস সিমুলেটর, লেজার গাইডেড বোম এবং অ্যান্টি-শিপ মিসাইল যুক্ত করা হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘নতুন এসব সরঞ্জাম সংযোজনের মাধ্যমে বিমান বাহিনীর প্রতিরক্ষামূলক সক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’