রাঙ্গামাটির প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র বনরূপা বাজার। সেই বাজারের সড়ক ও ফুটপাত দখল করে ইট-বালুর ব্যবসার অভিযোগ উঠেছে দুই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
শুধু ইট, বালু, পাথর ও সিমেন্ট রেখে সড়ক দখল নয়, বাজারের সঙ্গে কাপ্তাই হ্রদের সমতাঘাটেও বড় বড় ট্রলার রাখার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এতে অন্য নৌকা ও ট্রলারগুলো ঠিকমতো ঘাটে ভিড়তে পারে না।
এভাবে সড়ক ও ঘাট দখলে রাখায় প্রতিদিন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বাজারে আসা ক্রেতা-বিক্রেতা ও সাধারণ মানুষকে। এ নিয়ে বাজার সমিতি একাধিকবার সতর্ক করলেও লাভ হয়নি, উল্টো সমিতির সভাপতি ও অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ওই দুই প্রতিষ্ঠানের মালিকরা।
এ ছাড়া অবৈধভাবে রাস্তা দখল নিয়ে দুই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলেও অভিযোগ করেছেন বনরূপা উত্তর বাজার ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি ও রাঙ্গামাটি সদর আওয়ামী লীগের সভাপতি দীপক বিকাশ চাকমা।
অভিযোগ ওঠা ব্যবসায়ীরা হলেন সমতাঘাট এলাকার লুক হুদুম এন্টারপ্রাইজের দেবর্ষী চাকমা ও প্রতুল বিকাশ চাকমা এবং কর্ণফুলী এন্টারপ্রাইজের সমর কান্তি চাকমা ও শান্ত চাকমা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বনরূপা বাজারসংলগ্ন সমতাঘাটে নামার মুখ থেকেই রাস্তার দুই পাশে রাখা হয়েছে ইট, বালু, পাথর ও সিমেন্ট। এগুলো পরিবহনে সড়কের পাশ ঘেঁষেই রাখা হয়েছে ছোট লরি। তার মধ্য দিয়ে কোনো রকমে যাতায়াত করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। রাঙ্গামাটি পৌর ট্রাক টার্মিনাল ও জেলা শিল্পকলা একাডেমিসহ শহরের বিভিন্ন স্থানেও রাখা হয়েছে ইট ও পাথর।
বাজারের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, এ বাজারে হাট বসে শনি, মঙ্গল ও বুধবার। এখানে লংগদু, বাঘাইছড়ি, নানিয়ারচর, বিলাইছড়ি, বরকল ও সদর উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে আসেন ক্রেতা-বিক্রেতা। সড়ক দখল ও ইট-বালু বোঝাই লরিগুলোর কারণে হাজারও মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন।
নানিয়ারচর থেকে আসা এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বনরূপা বাজারে কোনো ট্রলার ঢোকানো সম্ভব হয় না। বড় বড় ট্রলারে ইট, বালু, পাথর ও সিমেন্ট বিক্রি করা হয়।
ট্রাক ভর্তি ইট-বালু ফেলা হয়েছে সড়কের ওপর। ছবি: নিউজবাংলা
‘এ ভোগান্তি যেন বললেও শেষ হবে না। রাস্তায় হাঁটাচলাও তো ঝুঁকিপূর্ণ। রাস্তা দখল করে অনেক বছর ধরে এ ব্যবসা করে আসছেন সমর কান্তি গ্রুপ ও দেবর্ষী গ্রুপ। প্রশাসন যদি এসব বিষয় দেখত তাহলে নিরাপদে চলাচল করতে পারতাম।’
সবজি ব্যবসায়ী দিদারুল আলম বলেন, ‘স্যার, আমরা গরিব মানুষ। হাটবাজারের দিনে বনরূপা বাজার থেকে কাঁচামাল কিনতে হয়। কিন্তু এ রাস্তা দিয়ে ঝুঁকিতে হাঁটাচলা করতে হয়। কখন যে দুর্ঘটনা ঘটে, তা কেউ বলতে পারবে না।
‘ইট বহন করার সময়ে মাথায় পড়ে কেউ যদি মারা যায়, তখনও প্রশাসন নজরে দিবে কি না সন্দেহ রয়েছে। প্রশাসনের তো ব্যবস্থা নেয়ার কথা, কিন্তু চুপ কেন?’
এই বিষয়ে লুক হুদুম এন্টারপ্রাইজের মালিক দেবর্ষী চাকমা ও প্রতুল বিকাশ চাকমা নিউজবাংলার কাছে দাবি করেন, তারা আগে রাস্তায় ইট-বালু রাখতেন না। কর্ণফুলী এন্টারপ্রাইজের সমর কান্তি চাকমা ও শান্ত চাকমা রাস্তা দখল করে ইট, বালু রাখে। ঘাটে তারাই অবৈধভাবে বড় বড় ট্রলার রেখে জনগণকে ভোগান্তিতে রেখেছে।
তারা জানান, বাজার সমিতি কর্ণফুলী এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। শুধু তাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ করা হয়। ব্যবসা বন্ধ করতে হলে সবারটাই বন্ধ করতে হবে।
অন্যদিকে সমর চাকমা ও শান্ত চাকমার দাবি, তারা ১০-১২ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে ব্যবসা করছেন। লুক হুদুম এন্টারপ্রাইজের মালিকরাই প্রথম সরকারি নলকূপ, রাস্তা, ড্রেন ভরাট ও রাস্তার ফুটপাত দখল করে ইটের ব্যবসা শুরু করেন।
তাদের অভিযোগ, গত বছর তাদের কর্মচারীদের ওপর দেবর্ষী ও প্রতুলের পক্ষ হামলা করেছিল। তারাই সমিতির কোনো নিয়ম না মেনে ব্যবসা করছেন। সমিতির সময়সীমা না মেনে ট্রাকভর্তি মালপত্র নিয়ে আসে। ওই প্রতিষ্ঠানের এসব কাজের জন্য তাদের কথা শুনতে হয়।
রাঙ্গামাটির পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বনরূপা সমতাঘাটে ইট-বালু রেখে বিক্রির বিষয়টি আমার জানা নেই। এসব বিষয়ে বাজার সমিতি ও জেলা প্রশাসন মুখ্য ভূমিকা রাখে। বাজার সমিতি যদি সমাধান দিতে না পারে তাহলে লিখিতভাবে পৌরসভায় অভিযোগ দিলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বন্ধ করা যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে ট্রাক টার্মিনালে যে ইট, বালু ও পাথর রাখা হয় তা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য। এরপরও মাসিক সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। তারা যদি সময় না মানে তাহলে অবশ্যই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে বলা হবে।’