বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সেন্ট মার্টিনফেরত পর্যটকদের সাগরে রুদ্ধশ্বাস কয়েক ঘণ্টা

  •    
  • ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১ ১০:১২

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন যেতে পর্যটকদের প্রধান মাধ্যম জাহাজ। টেকনাফ থেকে পাঁচটি ও কক্সবাজার থেকে একটি জাহাজে প্রতি বছর লক্ষাধিক পর্যটক সেন্ট মার্টিন যায়। তবে দিন দিন এই জাহাজ ভ্রমণ রীতিমতো দুর্ভোগ হয়ে উঠেছে।

সেন্ট মার্টিন থেকে কক্সবাজার আসার পথে বুধবার উপকূলের নাজিরারটেক চ্যানেলে প্রায় ৬ ঘণ্টা আটকা ছিল পর্যটকবাহী জাহাজ কর্ণফুলী এক্সপ্রেস।

বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টায় রওনা দেয়া ছয় শতাধিক পর্যটকবাহী জাহাজটি রাত সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার পৌঁছানোর কথা থাকলেও তীরে ভেড়ে ভোর ৪টার দিকে। ওই কয়েক ঘণ্টা তাদের কেটেছে দুর্বিষহ।

কক্সবাজার পৌঁছানোর পর পর্যটকরা জানিয়েছেন তাদের দুর্ভোগের কথা। উঠে এসেছে কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার নানা বিষয়ও।

তারা জানান, দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন যেতে পর্যটকদের প্রধান মাধ্যম জাহাজ। টেকনাফ থেকে পাঁচটি ও কক্সবাজার থেকে একটি জাহাজে প্রতি বছর লক্ষাধিক পর্যটক সেন্ট মার্টিন যায়। তবে দিন দিন এই জাহাজ ভ্রমণ রীতিমতো দুর্ভোগ হয়ে উঠেছে।

পর্যটকরা জানান, মঙ্গলবার কক্সবাজার থেকে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার পথে ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে কর্ণফুলী এক্সপ্রেসের। পরে এমবি বে-ওয়ান নামের জাহাজে তাদের সেন্ট মার্টিন নেয়া হয়।

এরপর বুধবার বিকেল ৫টার দিকে সেন্ট মার্টিন থেকে এমবি বে-ওয়ানের মাধ্যমে ৬ শতাধিক পর্যটককে মাঝ সাগরে এনে তুলে দেয়া হয় কর্ণফুলী এক্সপ্রেসে। যদিও পর্যটকদের বলা হয়েছিল বে-ওয়ানে করে কক্সবাজার নেয়া হবে।

তবে কর্ণফুলী জাহাজে ওঠার কিছুক্ষণ পরই আটকা পড়ে জাহাজটি। সেই যাত্রা শেষ হয় ভোর ৪টা ১২ মিনিটের দিকে জাহাজ কক্সবাজারের নুনিয়াছড়ার বিআইডব্লিউটিএর ঘাটে ভিড়লে। ১৩ ঘণ্টা সাগরে ভেসে থাকার সময়ে নানা বিড়ম্বনা ও দুর্ভোগ পার করেছেন এসব যাত্রী।

জাহাজে আটকা পড়ায় অনেকেই শিশুসন্তান নিয়ে পোহান দুর্ভোগ

সিলেট থেকে আসা নাজিয়া বেগমের সঙ্গে ঘাটে কথা হয় নিউজবাংলার। তিনি বলেন, ‘যে দুর্ভোগ তার কোনো ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই। ছেলেমেয়ে নিয়ে কী যে একটা অবস্থা। জাহাজ আটকা পড়ছে, অথচ কর্তৃপক্ষের যে আচরণ তাতেই ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

‘খাবার দিয়েছে রাত দেড়টার সময়। এটা জাস্ট একটা ফর্মালিটি। যদি সঠিক সেবা দিতে না পারে, বন্ধ করে দিক। তারপরও যেন এমন সেবা নিয়ে কোনো জাহাজ না চলে।’

রাজশাহী থেকে পরিবারের ১৭ জন নিয়ে সেন্ট মার্টিন গিয়েছিলেন সানজিদুল আলম। রাজশাহী ফেরত যাবেন, তার জন্য বাসের টিকিটও কেটেছিলেন।

তিনি বলেন, ‘বেলা ২টার সময় সেন্ট মার্টিন থেকে লাইনে দাঁড় করানো হয় জাহাজে ওঠার জন্য। সে জাহাজ ছেড়েছে বিকেল ৫টায়। মাঝ সাগরে এনে আবার পরিবর্তন করে তোলা হলো কর্ণফুলীতে। তার কিছুদূর আসার পরই বলা হলো জাহাজ ডুবোচরে আটকেছে।

‘তাহলে তারা সঠিক টাইম মেইনটেইন করেনি। যার ফলে জোয়ার থেকে ভাটা হয়েছে। আমাদের বাসের টিকিট, ভোরবেলা কোথায় গিয়ে উঠব, সে টাকা কি তারা ফেরত দেবে। এসব দুর্ভোগ মানুষকে কক্সবাজারবিমুখ করবে।’

রাজধানীর একটি কলেজের শিক্ষার্থী নাজিয়া আক্তার বলেন, ‘বাবা-মায়ের সঙ্গে কক্সবাজার এসেছি। আজকে (বুধবার) সকালে গেলাম সেন্ট মার্টিন। পৌঁছানোর কথা ২টায়। পৌঁছালাম সাড়ে ৪টার দিকে। নেমে নাশতাও খেতে পারিনি, ৫টার দিকে জাহাজ ছেড়ে দিল।

‘সেই জাহাজ কক্সবাজারে আনল ভোর ৪টার দিকে। সাগরের মধ্যে অন্ধকারে কিছু দেখা যায় না। কী একটা ভীতিকর অবস্থা। কোনো খাওয়া নাই, কিচ্ছু নেই।’

দীর্ঘ ১৩ ঘণ্টা পর জাহাজ থেকে নামছেন যাত্রীরা

বগুড়া থেকে আসা ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘টিকিট কাটার সময় বলা হয় বে-ওয়ান আনবে। আবার মাঝপথে এনে তোলা হয় কর্ণফুলীতে। সেন্ট মার্টিন পৌঁছার কথা ২টার দিকে। সেখানে পৌঁছাই সাড়ে ৪টায়। কক্সবাজার পৌঁছার কথা রাত সাড়ে ৯টায়, সেই জায়গায় ফিরেছি পরদিন ভোরবেলায়। পুরাই ধোঁকাবাজ।’

কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সদস্যসচিব এইচ এম নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কক্সবাজারের পর্যটনশিল্পে যারা জড়িত তাদের সবার উচিত পর্যটকদের সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন রুটে কয়েকটা জাহাজ রয়েছে, যা সমুদ্রে চলাচলের উপযুক্ত নয়।

‘নদীর জাহাজ সমুদ্র অতিক্রম করার অনুমোদন দেয় কীভাবে প্রশাসন। সবকিছুতে শুভংকরের ফাঁকি যেন কক্সবাজারের পর্যটনশিল্প ঘিরে। কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন রুটে যত জাহাজ চলাচল করছে তার ফিটনেস ও সমুদ্রে চলাচলে উপযুক্ত কি না খতিয়ে দেখা জরুরি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্ণফুলী এক্সপ্রেসের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, মঙ্গলবার সেন্ট মার্টিন যাওয়ার পথে ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে জাহাজটির। পরে সেসব পর্যটককে এমবি বে-ওয়ানে করে সেন্ট মার্টিন নেয়া হয়।

সেই জাহাজকে কোনো রকমে মেরামত করে খরচ বাঁচানোর জন্য কর্তৃপক্ষ বে-ওয়ান থেকে যাত্রী নামিয়ে কর্ণফুলীতে তুলে দেয়। যেটি কিছু দূর আসার পর বিকল হয়ে পড়ে। সেটি কি ডুবোচরে আটকা পড়েছে, নাকি ইঞ্জিন বিকল হয়েছে, সঠিক তথ্য জানা যায়নি।

জাহাজ আটকা পড়ার বিষয়টি অবশ্য অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা হিসেবে দেখছে কর্ণফুলী এক্সপ্রেস কর্তৃপক্ষ। জাহাজটির কক্সবাজারের ব্যবস্থাপক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ডুবোচরে আটকে যাওয়ার ফলে জাহাজ বারবার আটকে পড়ছে। নাজিরার টেক পয়েন্ট নামে যে এলাকাটিতে এমন হচ্ছে, সেটি ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। যে ঘটনা ঘটেছে সে জন্য আমরা আজকে পর্যটকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।’

খাবারের বিষয়ে তিনি দাবি করেন, জাহাজে ৩০০ জনকে খাবার দেয়া হয়েছে। ঘাটে পৌঁছানোর পর বাকিদেরও খাবার দেয়া হয়েছে।

২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার থেকে সরাসরি সেন্ট মার্টিন রুটে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের মালিকানাধীন জাহাজটির। উদ্বোধনের দিনই নাজিরারটেক পয়েন্টে চরে সজোরে ধাক্কা লেগে আটকা পড়েছিল জাহাজটি। তখন কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিল, নাবিকের গতিপথ ভুলের কারণেই ওই ঘটনা ঘটে।

এ বিভাগের আরো খবর