ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে আগুনের ঘটনার ছয় দিন পার হলেও নিশ্চিত করা যায়নি নিখোঁজ যাত্রীর সংখ্যা।
বরগুনা জেলা প্রশাসন, ঝালকাঠি পুলিশ প্রশাসন ও যুব রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকদের তালিকায় নিখোঁজদের সংখ্যার বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। এতে ঠিক কতজন নিখোঁজ আছেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না কোনোভাবেই।
ঘটনার পঞ্চম দিন মঙ্গলবার বরগুনার বুড়িরচর এলাকার বাসিন্দা হাকিম শরীফ এবং বুধবার ষষ্ঠ দিনে আরও দুজনের ভাসমান মরদেহ নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
বরগুনা জেলা প্রশাসনের তালিকা অনুযায়ী, এখন নিখোঁজের সংখ্যা ৩৩ জন। তবে ঝালকাঠি জেলা পুলিশের তালিকায় নিখোঁজ ৪০ জন। তার মধ্যে ১৬ জন নারী, ৮ জন পুরুষ ও ১৫ শিশু। আর ঝালকাঠি যুব রেড ক্রিসেন্টের তালিকায় নিখোঁজের সংখ্যা ৫১ জন।
ওই দিন দুর্ঘটনার সময় লঞ্চটিতে ঠিক কত যাত্রী ছিলেন এবং তাদের মধ্যে কতজন প্রাণে বেঁচেছেন, তারও কোনো তথ্য মেলেনি। এ জন্য পুরো বিষয়টি নিয়েই বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
তবে ঝালকাঠি ও বরগুনার দুই জেলা প্রশাসক বুধবার বিকেলে জানান, জেলা প্রশাসনের করা তালিকাটিই নিখোঁজদের চূড়ান্ত তালিকা। তবে এটির কাজ এখনও শেষ হয়নি।
যুব রেড ক্রিসেন্টের ঝালকাঠির স্বেচ্ছাসেবকদের সমন্বয়কারী রাজু আহমেদ জানান, ঘটনার পর থেকে তাদের ৩৫ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। পৌর মিনিপার্কে বুথ খুলে তারা নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদের কাছ থেকে যে তালিকা পেয়েছেন, তাতে সংখ্যা ৫১ জন।
লঞ্চটি থেকে বেঁচে ফেরা যাত্রী বরগুনার আইনজীবী ও সচেতন নাগরিক কমিটির বরগুনা জেলা সভাপতি আনিসুর রহমান এর আগে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের সময় স্ত্রীকে নিয়ে ওই লঞ্চের দ্বিতীয় তলার কেবিনে ছিলাম। আগুনের ধোঁয়ায় কেবিন থেকে বের হই। বের হতেই মানুষকে তাড়াহুড়া করতে দেখে দ্রুত নিচে নামি।
‘লঞ্চটি তীরের কাছাকাছি আসতেই সস্ত্রীক লাফ দিয়ে তীরে নামি। ওই সময় অন্তত দেড় শতাধিক যাত্রী লঞ্চ থেকে লাফিয়ে পড়েন। এর পরও প্রায় শতাধিক যাত্রীকে লাফিয়ে নামতে দেখেছি। তবে ঢাকা থেকে অভিযান-১০ ছাড়ার সময় লঞ্চে সহস্রাধিক যাত্রী ছিলেন।’আরেক যাত্রী লিংকন হোসেন বলেন, ‘ঢাকা থেকে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় যখন লঞ্চটি ছেড়ে আসে, তখন আনুমানিক ৭৫০-৮০০ যাত্রী ছিলেন। এরপর চাঁদপুর ঘাট থেকে আরও ২০০-২২৫ জন যাত্রী তোলা হয়। রাত ১টার দিকে বরিশাল নৌবন্দরে ভিড়লে সেখানে ১৫-২০ জন যাত্রী নেমে যান।’নিখোঁজের সংখ্যা নিয়ে এমন ভিন্ন তথ্যের বিষয়ে সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি আনিসুর রহমান বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি তথ্যের গরমিলের পেছনে দুটি কারণ থাকতে পারে। একটি সমন্বয়হীনতা এবং অন্যটি নিখোঁজের সংখ্যা হয়তো আরও বেশি।
‘প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, লঞ্চটিতে অন্তত এক হাজার যাত্রী ছিলেন। তদন্ত কমিটিও এমন তথ্যের মিল পেয়েছে বলে আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি। এটা সত্যি ধোঁয়াশার সৃষ্টি করেছে।’বরগুনা জেলা যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি সঞ্জিব দাস বলেন, ‘সবকিছুই ডিজিটালাইজেশনের আওতায় এনেছে সরকার। লঞ্চের টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়। লঞ্চগুলোকে যাত্রীদের ডিজিটাল পদ্ধতিতে ডাটা এন্ট্রি প্রক্রিয়ায় আনা জরুরি।
‘এতে কোন লঞ্চে কত যাত্রী ও তাদের বিস্তারিত তথ্য সংরক্ষণ থাকবে। আমার মনে হয়, এই দুর্ঘটনার পর সরকারের এটা নিয়ে ভাবা উচিত এবং বাস্তবায়ন করা উচিত।’