জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি কমাতে করণীয় নির্ধারণে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা বা ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্ল্যান (ন্যাপ) প্রণয়ন জরুরি হয়ে পড়েছে। কিন্তু ন্যাপ প্রণয়নে অদক্ষতা ও অস্বচ্ছতা পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের পথে বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
বুধবার রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টারে জলবায়ু পরির্বতনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় অঞ্চলভিত্তিক সমস্যাগুলো চিহ্নিতকরণ এবং জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্তকরণ বিষয়ে অংশীজন সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি)-এর আয়োজনে এবং অ্যাওসেড, ব্রেড ফর দ্য ওয়ার্ল্ড, সিসিবিভিও, ডিয়াকোনিয়া এবং এসডিএসের সহযোগিতায় এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিসিএএসের নির্বাহী পরিচালক আতিক রহমান। প্রধান বক্তা ছিলেন সিপিআরডি’র প্রধান নির্বাহী মো. শামছুদ্দোহা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘স্বাধীনতার সঙ্গে কোনও কিছুরই তুলনা হয় না। কিন্তু স্বাধীনতার মূল আকাঙ্ক্ষার সঠিক বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। আর টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে একটি যথাযথ ন্যাপ প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।
ন্যাপ প্রণয়নে আমাদের প্রয়োজন অতীতের সফলতা ও ব্যর্থতাগুলোর সঠিক মূল্যায়ন করা। অতীতের ব্যর্থতাগুলো থেকে শিক্ষা না নিলে ন্যাপ কখনোই সফল হবে না। সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনায় নিয়ে ন্যাপকে অবশ্যই একটি ‘লিভিং ডকুমেন্ট’ হিসেবে প্রস্তুত করতে হবে। প্রক্রিয়াটি হতে হবে বটম-আপ (নিচ থেকে উপরে)।’
আতিক রহমান বলেন, ‘ন্যাপ প্রক্রিয়াটি ধীরে ধীরে এগোচ্ছে, ২০২২ সালের এপ্রিলে শেষ হতে পারে। দেশের সব অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব স্পষ্টভাবেই পরিলক্ষিত হচ্ছে। ন্যাপ প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অঞ্চলগুলোর নিজস্ব বাস্তবতা বিবেচনায় নিতে হবে। সুশাসন শুধু দুর্নীতি বন্ধ করা নয়, সঠিক সময়ে সঠিক নীতি প্রণয়ন এবং তার যথাযথ বাস্তবায়নও সুশাসনের অংশ। ন্যাপ প্রণয়নের ক্ষেত্রেও বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে।’
মো. শামছুদ্দোহা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত মোকাবেলা ও অভিযোজন কার্যক্রমে সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা বা ন্যাপ প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে। ইউএনএফসিসিসি নির্দেশিত গাইডলাইন অনুসারে ন্যাপ তৈরির প্রক্রিয়াটি অবশ্যই অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ হতে হবে। এটি নারী, আদিবাসী, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বিশেষ ঝুঁকি ও একইসঙ্গে স্থানীয় দুর্যোগ ঝুঁকি ও ঝুঁকি হ্রাসে করণীয় বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রণীত হতে হবে।
‘উন্নয়নশীল দেশের বড় চ্যালেঞ্জ হলো প্রকল্পগুলোর অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা। ন্যাপের ক্ষেত্রেও এই শঙ্কা থেকে যায়। কাজেই ন্যাপের সঙ্গে ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠী, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, স্থানীয় সরকার, জনপ্রতিনিধি, সংসদ সদস্য, বিশেষজ্ঞ এবং বিভিন্ন অংশীজনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।’