চতুর্থ ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অন্যতম ঘাঁটি ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ৯ ইউনিয়নে হেরেছেন নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। নৌকা জিতেছে মাত্র এক ইউপিতে।
দলের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের এমন হারের পর উঠেছে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের অভিযোগ। বুধবার নৌকার পরাজিত পাঁচ প্রার্থীর সংবাদ সম্মেলনে ফের উঠে এসেছে সেই অভিযোগ। হারের জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদেরই দুষেছেন তারা।
পৌর সদরের ওয়াপদা মোড়ে কাজী হারুন শপিং কমপ্লেক্সে বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনটি করেন ওই প্রার্থীরা।
সেখানে বক্তব্য দেন নৌকার পরাজিত প্রার্থী চতুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খন্দকার আবুল বাশার, রূপাপাত ইউনিয়নের জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি মহব্বত আলী, ময়না ইউনিয়নের জেলা মৎস্যজীবী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পলাশ বিশ্বাস, দাদপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ সাজ্জাদুর রহমান হাই ও বোয়ালমারী সদর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল ওহাব মোল্যা।
পরাজিত ওই পাঁচ প্রার্থীর অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউপি নির্বাচনে তাদের মনোনয়ন দেয়ার পর পরই তারা উপজেলা আওয়ামী লীগ ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
এরপর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এম এম মোশাররফ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মীরদাহ পিকুল নির্বাচনি সভা-সমাবেশ করলেও বিভিন্ন ইউনিয়নে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরানোর তেমন কোনো ব্যবস্থা নেননি। এতেই নৌকার ভরাডুবি হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বোয়ালমারী সদর ইউনিয়নে নৌকার পরাজিত প্রার্থী আবদুল ওহাব মোল্যা অভিযোগ করেন, তার ইউপিতে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের প্রার্থী ছিলেন ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল হক শেখ।
এ জন্য বারবার বলার পরও উপজেলা আওয়ামী লীগের ওই দুই নেতা আব্দুল হককে বসানোর কোনো চেষ্টা করেননি। তাকেও নির্বাচনে সার্বিক সহযোগিতা করেননি। শুধু কয়েকবার নির্বাচনি সভা-সমাবেশ করে দিয়েছেন।
চতুল ইউনিয়নের প্রার্থী খন্দকার আবুল বাশারের অভিযোগ, চতুল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা ভোট পেয়েছে পাঁচটি। অথচ ওই কেন্দ্রের পাশে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাজাহান মীরদাহ ও সহসভাপতি মলয় বোসের বাড়ি।
এ ছাড়া ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. জালাল সিকদারসহ কোনো ওয়ার্ডের নেতাকর্মীই নৌকার পক্ষে ভোট চাননি। তারা বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলামের চশমা প্রতীকের পক্ষে কাজ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘তাদের কোনোরূপ সহযোগিতা আমি পাইনি। ওয়ার্ড কমিটির সদস্য সংখ্যা ৫১ জন। অথচ ওই সব ইউনিয়নের বিভিন্ন কেন্দ্রে নৌকার ভোট দুই অঙ্ক স্পর্শ করেনি। আমরা পরাজিত ৯ প্রার্থী এ বিষয়গুলো জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লিখিত অভিযোগ করব।’
রূপাপাত ইউনিয়নের প্রার্থী মাহব্বত আলী বলেন, ‘ইউনিয়নের সভাপতি কোবাদ হোসেন মোল্যা আমার পক্ষে কাজ না করে পাশের ইউনিয়নের চায়ের দোকানে বসে থাকতেন। আর তার ছেলে শহিদুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু মোল্যার ছেলে মিজানুর রহমান সোনার পক্ষে কাজ করেছেন।’
ময়না ইউনিয়নে নৌকার পরাজিত প্রার্থী পলাশ বিশ্বাসের অভিযোগ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসির মো. সেলিম, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা পরিষদ সদস্য আবু জাফর সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের প্রথম থেকে তারা আমাকে সহযোগিতা করেননি। পরে ওপরে ওপরে নৌকার ভোট চাইলেও ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা প্রতীকের পক্ষে কাজ করে নৌকাকে হারিয়ে দিয়েছেন।’
মনোনয়ন বাণিজ্য নিয়ে এ প্রার্থী বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে কি টাকা দিয়ে কেনা যায়? যায় না। জননেত্রী শেখ হাসিনা তৃণমূলের কর্মী হিসেবে আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন।’
দাদপুর ইউনিয়নের প্রার্থী শেখ সাজ্জাদুর রহমানের অভিযোগ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, সদস্য আবদুর রহমান মিটিং-মিছিলে থেকেও ভেতরে ভেতরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে নৌকাকে হারিয়েছেন।
পরাজিত প্রার্থীদের এসব অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন বোয়ালমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মীরদাহ পিকুল।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ইউনিয়নে বিদ্রোহীদের চিঠি দিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। পরে ৯ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে এবং চূড়ান্ত বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।
‘এমনকি নির্বাচনের কয়েক দিন আগে ময়না ইউনিয়নে বিদ্রোহীরা সরে দাঁড়ালেও ভেতরে ভেতরে নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এসব নেতাকে চিহ্নিত করে কেন্দ্রের কাছে শৃঙ্খলাভঙ্গের সাজা দেয়ার জন্য সুপারিশ পাঠানো হবে।’