‘নো পাওয়ার নো পেমেন্ট’ পলিসিতে ভাড়াভিত্তিক চার বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বুধবার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে বিদ্যুৎ বিভাগের এসব প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে।
বৈঠক শেষে ভার্চুয়াল সংবাদ ব্রিফিংয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘সব কটি বিদ্যুৎকেন্দ্রই গ্যাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে থাকে। এগুলোর মেয়াদ এক থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। অনেক আগে স্থাপিত এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে যে বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছে, সেখানে কোনো ক্যাপাসিটি চার্জ নেই। যে পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে, কেবল তারই মূল্য পরিশোধ করা হবে। নো পাওয়ার নো পেমেন্ট পলিসিতে এসব চুক্তি করা হয়েছে। ফলে সরকার লোকসান করবে না।’
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলাসহ বিভিন্ন কারণে সরকার কয়লাভিত্তিক আটটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন থেকে সরে এসেছে। ফলে বিকল্প উৎস থেকে বিদ্যুৎ দরকার। এ কারণে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার নতুন একটি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনও অনুমোদন দিয়েছে ক্রয়সংক্রান্ত কমিটি।’
বৈঠকে এ ছাড়া অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সাতটি প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে।
মেয়াদ বাড়ল যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের
জানা গেছে, যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে সিলেটের কুমারগাঁও ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার গ্যাসভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। এনার্জি প্রাইমা লিমিটেডের মালিকানাধীন এই কেন্দ্রের মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়েছে। নতুন চুক্তি অনুযায়ী এই কেন্দ্র থেকে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ ১ টাকা ৯৭ পয়সা দরে কিনবে সরকার। এতে ব্যয় হবে ৮৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
একই কোম্পানির ফেঞ্চুগঞ্জ ৫০ মেগাওয়াট ও বগুড়ায় ২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার গ্যাসভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটির মেয়াদ তিন বছর করে বাড়ানো হয়েছে। ফেঞ্চুগঞ্জের কেন্দ্র থেকে ২ টাকা ১২ পয়সা দরে এবং বগুড়ার কেন্দ্র থেকে ২ টাকা ৩ পয়সা দরে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ নেয়ার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। এতে সরকারের ব্যয় হবে ৩৮৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।
এ ছাড়া ইউনাইটেড এনার্জি লিমিটেডের আশুগঞ্জ ৫৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার গ্যাসভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ পাঁচ বছর বাড়ানো হয়েছে। এই কেন্দ্র থেকে ২ টাকা ৪৩ পয়সা দরে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ কিনবে সরকার। এতে ব্যয় হবে ৪৫১ কোটি ২০ লাখ টাকা।
অনুমোদন পাওয়া অন্যান্য প্রস্তাব
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এটি হবে কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র। গ্যাস অথবা আরএলএনজি হবে এই কেন্দ্রের জ্বালানি। কনফিডেন্স পাওয়ার হোল্ডিংস লিমিটেড, জিই ক্যাপিটাল ইউএস হোল্ডিং ইনকরপোরেশন, কনফিডেন্স পাওয়ার লিমিটেড জিইএস এবং ইলেক্ট্রোপ্যাক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কনসোর্টিয়ামের ভিত্তিতে কেন্দ্রটি স্থাপন করবে। ২২ বছর মেয়াদে এতে ব্যয় হবে ৬৯ হাজার ১৫২ কোটি টাকা।
এ ছাড়া বৈঠকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের দুটি এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগের একটি করে প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে।
অন্যদিকে খুলনার মোংলা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণে ভেরিয়েশন বাবদ আরও একটি প্রস্তাবে ২৬৭ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানোর পক্ষে করা আবেদন অনুমোদন করা হয়। অন্য এক প্রস্তাবে ভেরিয়েশন কমানো হয়েছে।
খাদ্য অধিদপ্তরের ৫০ হাজার টন গম কেনার প্রস্তাবও অনুমোদন করেছে কমিটি। এ প্রক্রিয়ায় ভারতের মেসার্স বাগাদিয়া ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড থেকে এ গম কেনা হবে। প্রতি টন গম ৪০৪ দশমিক ১১ ডলারে কেনা হচ্ছে। এতে মোট ব্যয় হবে ১৭৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।