দেশে কর্মরত বিদেশিদের আয়ের প্রায় পুরোটা নিজ দেশে পাঠাতে বাংলাদেশ ব্যাংক যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা ইতিবাচক বলছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। তবে বিদেশি কর্মী নিয়োগে নৈরাজ্য দূর করতে একটি সমন্বিত কৌশলগত নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের আহ্বানও জানিয়েছে সংস্থাটি।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার এ কথা জানিয়েছে তারা।
এতে বলা হয়েছে, ‘এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক বিদেশি কর্মীদের প্রায় সম্পূর্ণ আয় নিজ দেশে পাঠানোর যে সুযোগ দিয়েছে, তা একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। এ ক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত করতে এবং অর্থ পাচার ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের অংশগ্রহণে একটি সমন্বিত কৌশলগত নীতিমালা প্রণয়ন ও যথাযথ বাস্তবায়নকে পূর্বশর্ত হিসেবে দেখছে সংস্থাটি।’
এর ফলে অবৈধ পন্থায় রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধের পাশাপাশি সরকারের বিপুল রাজস্ব ক্ষতি এড়ানো সম্ভব বলেও মনে করছে সংস্থাটি।
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দেশে বিভিন্ন খাতে কাজ করা বিদেশি কর্মীদের বড় অংশই অবৈধভাবে কাজ করেন এবং অর্জিত আয় হুন্ডির মাধ্যমে নিজ দেশে পাঠান। যার ন্যূনতম বার্ষিক পরিমাণ ২৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি।’
এতে কর ফাঁকির কারণে বার্ষিক রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা বলেও জানান তিনি।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সুযোগ গ্রহণ করে বিদেশি কর্মীরা যদি তাদের অর্জিত আয় বৈধ পথে নিজ দেশে পাঠায়, তাহলেই কেবল এই সিদ্ধান্তের ইতিবাচক ফলাফল আশা করা যেতে পারে।’
তা না হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই প্রজ্ঞাপন একটি কাগুজে সিদ্ধান্ত হিসেবে পরিগণিত হবে বলেও মন্তব্য করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের একাংশের অসাধু ও দুর্নীতিপরায়ণ মনোবৃত্তি এবং যথাযথ তদারকির ঘাটতি থাকায় বিদেশি কর্মী নিয়োগ এবং তাদের এ দেশে অবস্থান নিয়ে এক ধরনের নৈরাজ্য চলছে বলে মনে করে টিআইবি।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘অধিকাংশ বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে আগমন, অবস্থান ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেন না। বাংলাদেশে আগমনের মূল উদ্দেশ্য কর্মসংস্থান হলেও এ ক্ষেত্রে তারা সাধারণত ট্যুরিস্ট ভিসা বা ভিসা অন অ্যারাইভাল অথবা বিজনেস ভিসায় এসে থাকেন। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় নিয়োগদাতাদের যোগসাজশে কর্মানুমতি ছাড়াই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজে যোগ দেন, যাদের কোনো হদিস সরকারিভাবে রাখা হয় না।’
সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম মাসিক বেতনসীমা হালনাগাদ না করায়, কর ফাঁকি দিতে এসব বিদেশিদের সঠিক বেতনও নিয়োগদাতারা ঘোষণা করেন বা বলেও জানান তিনি।
এর ফলে একদিকে সরকার যেমন বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে একশ্রেণির অসাধু চক্র বিদ্যমান পদ্ধতিকে বিদেশে অর্থ পাচার করার সুর্বণ সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করছে বলেও জানান ইফতেখারুজ্জামান।
তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের নেয়া সিদ্ধান্তের পাশাপাশি বিদেশি কর্মী নিয়োগে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে একটি সমন্বিত কৌশলগত নীতিমালা প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে সংস্থাটি।
বিদেশি নাগরিকদের সব তথ্য কার্যকর উপায়ে সংরক্ষণ ও ব্যবহারে আগমন ও প্রত্যাগমনে সমন্বিত তথ্য ব্যবস্থাপনা চালু, বিদেশি কর্মীদের মাসিক বেতনসীমা হালনাগাদ করা এবং বিদেশি কর্মীদের তথ্যানুসন্ধানে বিভিন্ন অফিস ও কারখানায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরো ও পুলিশের বিশেষ শাখার সমন্বয়ে নিয়মিত যৌথ টাস্কফোর্স অভিযান পরিচালনা করার আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।