মহামারি শুরুর আগে বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যগামী উড়োজাহাজের টিকিটের দাম ছিল গড়ে ৫০ হাজার টাকা। এখন তা দ্বিগুণ বেড়ে লাখ টাকার ওপরে চলে গেছে। অভিবাসী কর্মীদের পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন জনশক্তি রপ্তানিকারকরাও। দাম বৃদ্ধির পেছনে দায়ী ২৫ কোম্পানির সিন্ডিকেট।
জনশক্তি ও দক্ষতা উন্নয়নবিষয়ক এফবিসিসিআইয়ের স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রথম সভায় বুধবার এসব কথা বলেন জনশক্তি রপ্তানিকারকরা।
তারা বলেন, বিমান টিকিটের মতো মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়াকেও কুক্ষীগত করতে চাইছে সিন্ডিকেট চক্র। গত ১৯ ডিসেম্বর, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠাতে দুই দেশের মন্ত্রিপর্যায়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। শিগগিরই স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (এসওপি) প্রণয়নের কথা রয়েছে।
এফবিসিসিআইয়ের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মেদ ফারুক অভিযোগ করেন, বিগত সময়েও মালয়েশিয়ায় জনশক্তি পাঠানোর পুরো প্রক্রিয়াটি মাত্র ১০টি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছিল। ওই সব প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি-অনিয়মের কারণেই একপর্যায়ে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়া বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়া সরকার। এখন ওই একই চক্র ২৫টি কোম্পানির মাধ্যমে দেশটিতে অভিবাসী কর্মী পাঠানোর অপকৌশল করছে।
সভায় স্ট্যান্ডিং কমিটির অন্য সদস্যরাও জনশক্তি খাতে সিন্ডিকেটের ব্যাপারে তাদের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন। নেপাল, ভারত ও পাকিস্তানের উদাহরণ দিয়ে তারা জানান, প্রতিটি দেশে দেড় হাজারেরও বেশি রিক্রুটিং এজেন্ট মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি করছে। বাংলাদেশে এ সুবিধা গুটিকয়েক এজেন্টের হাতে রাখার তীব্র বিরোধিতা করেন তারা।
এ খাতে সিন্ডিকেট ভাঙতে মালয়েশিয়া-বাংলাদেশের যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে এফবিসিসিআইয়ের মনোনীত সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান জনশক্তি রপ্তানিকারকরা। এ ছাড়া মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন সংশোধন, রেমিট্যান্সের ওপর ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে প্রণোদনার হার ৩ শতাংশ করার বিষয়ে আলোচনা হয়।
জনশক্তি রপ্তানি খাতের বিদ্যমান সমস্যাগুলো এফবিসিসিআইয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংগঠনটির জনশক্তি ও দক্ষতা উন্নয়নবিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটি।
মহামারির মন্দা মোকাবিলায় জনশক্তি খাতকে সরকারি প্রণোদনার আওতায় আনার সুপারিশ করেন এফবিসিসিআই সহসভাপতি ও জনশক্তিবিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির ডিরেক্টর ইন-চার্জ মো. হাবীব উল্লাহ ডন।
তিনি জানান, দেশের জিডিপিতে ১২ শতাংশ অবদান রাখছে জনশক্তি খাত। তাই এ খাতটির ব্যাপারে সরকারের কাছ থেকে বাড়তি মনোযোগ আহ্বান করেন তিনি। একই সঙ্গে অর্থনীতিতে অবদান রাখা জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সরকারিভাবে সম্মানিত করার উদ্যোগ নেয়ারও তাগিদ দেন।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন স্ট্যান্ডিং কমিটির কো-চেয়ারম্যান রিয়াজ-উল-ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মাহমুদ, গোলাম মুস্তাফা (বাবুল), মোহাম্মেদ সেরাজ মিয়া, মফিজ উদ্দিন, মো. রেদওয়ান খান (বোরহান), কাজী এম এ কাশেমসহ অন্য সদস্যরা। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক আমজাদ হোসাইন ও মহাসচিব মোহাম্মদ মাহফুজুল হক।