প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই নিয়োগ দিতে পারেন বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বলেছেন, এক্ষেত্রে সরকারের কোনো ভূমিকা নেই।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ক্র্যাব) বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি নিয়োগে কোনো বিষয়ে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে কি না, তা জানতে চেয়ে অনুষ্ঠানে চিরকুট পাঠানো হয়ে আইনমন্ত্রীর কাছে।
জবাবে তিনি বলেন, ‘দুইটা জিনিস মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাউকে জিজ্ঞাসা করতে হয় না। এটা তার সর্বময় ক্ষমতা। একটা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করা, আরেকটা হচ্ছে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করা।’
ফলে প্রধান বিচারপতি হিসেবে কাকে নিয়োগ দেয়া হবে, সে বিষয়ে অবগত নন বলেও জানান আনিসুল হক। বলেন, ‘আমি হচ্ছি, সরকারের একজন মন্ত্রী। যে ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির সেটা কী আমি জানি? আমি জানি না। তো মহামান্য রাষ্ট্রপতি নিশ্চয় তার সুবিবেচনায় তাকে যিনি যোগ্য মনে করবেন এবং সংবিধানের পরিধির মধ্যে তার যে ক্ষমতা সেটা ব্যবহার করবেন।’
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি আজকে আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে যারা বিচারপতি আছেন, তারা অত্যন্ত যোগ্য। আপিল বিভাগে যারা আছেন, তারা প্রত্যেকেই হয়তো প্রধান বিচারপতি হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি সেই যোগ্যতা অনুসারে তার বিবেচনায় যিনি প্রধান বিচারপতি হতে পারবেন, তাকে প্রধান বিচারপতি করবেন, তার সেই ক্ষমতা ব্যবহার করে।’
এ বিষয়ে সরকারের কোনো মতামত নেই বলেও জানান আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এটার ব্যাপারে আমি যেটুকু বুঝি সরকার এই চিন্তা ভাবনার মধ্যেই নেই। তো সেজন্য কোনটাকে প্রাধান্য দিচ্ছি, কোনটাকে প্রাধান্য দিচ্ছি না, সেই প্রশ্নের উত্তরের প্রয়োজনও নেই।’
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ শুরু করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। আইন না থাকায়, রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিক ক্ষমতা বলে সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করে থাকেন।
২০১২ সালে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের যে ধারা তৈরি করেছেন সেটি অব্যাহত রেখেছেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
এ প্রক্রিয়ার নির্বাচন কমিশন গঠনে কোনো বিতর্কের অবকাশ দেখছেন না আইনমন্ত্রীও।
তিনি বলেন, ‘সবার (রাজনৈতিক দলের) নাম দেয়ার ক্ষমতা আছে, সবার নাম দেয়ার অধিকার আছে। সেক্ষেত্রে আমার মনে হয় না ইলেকশন কমিশন গঠন নিয়ে কোনো বিতর্ক করার কোনো অবকাশ আছে।’
সাংবাদিকদের পেশাদারত্ব নিয়েও কথা বলেন আইনমন্ত্রী। তার মতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পেশাদার সাংবাদিকদের চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলেছে।
তিনি বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়া আপনাদের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করে ফেলেছে। এখন কিন্তু সকলেই সাংবাদিক হয়ে গেছে। এই যে সবার সাংবাদিক হয়ে যাওয়া, আপনারা কিন্তু লেখাপড়া করে এই পেশায় এসেছেন।
‘একজন সাংবাদিক হতে হলে তার যে মানসিকতা প্রয়োজন, তার যে কাজের প্রয়োজন, সে নিজেকে কীভাবে প্লেস করবে, এসব কিন্তু জেনে বুঝেই আপনারা এ পেশায় এসেছেন। কিন্তু অপেশাদারদের এসব চিন্তা-ভাবনা নেই।’
‘সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় সব করবে সরকার’
সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা সরকার সব করবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এ সময় ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়েও কথা বলেন তিনি।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের ব্যাপারে, যাতে এটা আপনাদেরকে কোনো ক্ষতি না করে সেই ব্যাপারটা দেখা হচ্ছে। সেজন্যই আমি বলছি, সরকার আপনাদেরকে বাকস্বাধীনতা এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার্থে সব রকম সহযোগিতা করে যাবে। এই ব্যাপারে সরকার কোনো রকম আপস করবে না। আপনাদের কোনো অত্যাচারও হবে না।’
দেশের স্বার্থে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করা সাংবাদিকদের দায়িত্ব হওয়াও উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। গণমাধ্যম কর্মী আইনটি পাসের জন্য তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সংসদের আগামী অধিবেশনে নিয়ে যাবেন বলেও জানান আইনমন্ত্রী।
সাংবাদিকদের পেশাদারত্ব নিয়েও কথা বলেন আইনমন্ত্রী। তার মতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পেশাদার সাংবাদিকদের চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলেছে।
আনিসুল হক বলেন, ‘যারা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছেন, তারা ঘরের মধ্যে বসে সাংবাদিক হয়ে গেছেন। এই যে পার্থক্য, এই পার্থক্যের সঙ্গে আপনাদের লড়াই করে বেঁচে থাকতে হবে। আপনারাই কিন্তু আসল সাংবাদিকতা করার জন্য শিক্ষিত, প্রশিক্ষিত। সেজন্য আপনাদের জায়গা থেকে, পেশাদারত্বে যেন অ্যামেচারিজম চলে না আসে সেটা দেখার দায়িত্ব কিন্তু আপনাদের।’