সম্প্রতি ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা-বরগুনা রুটের অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনার পর আতঙ্কে রয়েছেন বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী লঞ্চ যাত্রীরা।
২৩ ডিসেম্বর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর থেকে এই ৫ দিনে ঝালকাঠি-ঢাকা রুটের লঞ্চগুলোতে যাত্রীর চাপ অনেক কমেছে। গত বছরের এই সময়ের তুলনায় যাত্রীর সংখ্যা কমেছে ২৫ শতাংশ।
যাত্রী কমে যাওয়ার বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করছেন ঝালকাঠি ঢাকা রুটের এমভি সুন্দরবন-১২ লঞ্চের ঘাট ম্যানেজার মো. হানিফ হাওলাদার এবং এমভি ফারহান-৭ লঞ্চের ঘাট ম্যানেজার মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু।
এমভি ফারহান-৭ লঞ্চের সুপারভাইজার মো. আলী আশরাফ বলেন, ‘অভিযান-১০ লঞ্চের দুর্ঘটনার পর আমাদের লঞ্চে যাত্রীর সংখ্যা কমে গেছে। তবে আমরাও দুর্ঘটনা এড়াতে বেশ সতর্ক রয়েছি।’
লঞ্চের কেবিনের যাত্রী মেহজাবীন আয়শা বলেন, ‘বাধ্য হয়ে লঞ্চে চড়তে হয়। দুর্ঘটনার পর অনেকটা ভীতি নিয়ে রওনা হয়েছি।’
ডেকযাত্রী হালিম শেখ বলেন, ‘লঞ্চের যেখানে লাইফ বয়া থাকে তার নিচে জায়গা নিয়েছি।’ আরেক যাত্রী সাইফুল আলম বলেন, ‘স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বাসে ঢাকা যেতে অনেক খরচ, তাই ভয় নিয়ে লঞ্চেই উঠেছি।’
সমাজের প্রথম শ্রেণির যেসব যাত্রী লঞ্চে করে যাতায়াত করেন তাদের মধ্যে আতঙ্ক যেন আরও বেশি।
সুন্দরবন-১২ লঞ্চে চাঁদপুরের উদ্দেশে রওনা করা যাত্রী আবুল কাশেম বলেন, ‘দূরপাল্লার লঞ্চগুলোতে যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়ে সরকারের নজরদারি বাড়ানো উচিত।’
ইঞ্জিনরুমের পাশ থেকে চায়ের দোকান এবং খাবার ক্যানটিন অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার দাবি নিচতলার বেশির ভাগ ডেক যাত্রীর।
ঝালকাঠির পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দেউরী এলাকায় সুগন্ধা নদীতে ২৩ ডিসেম্বর রাত ৩টার দিকে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে বিস্ফোরণের পর আগুন ধরে যায়। এতে এখন পর্যন্ত ৪৩ জনের প্রাণহানির কথা জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস, নিখোঁজ অন্তত ৪০ জন।
সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে আগুন লেগে এখন পর্যন্ত ৪৩ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। ছবি: নিউজবাংলা
এদিকে বরগুনা সার্কিট হাউস মাঠে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে স্থানীয় পোটকাখালী গণকবরে ২৯ জনের মরদেহ দাফন করা হয়। এর মধ্যে ৬ জনের পরিচয় শনাক্ত করা গেলেও বাকি ২৩ জনকে শনাক্ত করা যায়নি।
মরদেহগুলোর ময়নাতদন্তের পাশাপাশি ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তাদের পরিচয় শনাক্তে নিহতদের স্বজনদেরও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন।
এদিকে হতাহতের ঘটনায় ২৭ ডিসেম্বর লঞ্চটির মালিক হামজালাল শেখকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
পুড়ে যাওয়া লঞ্চটিতে কতজন যাত্রী ছিল, তার সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বলছে, লঞ্চটিতে অন্তত ৪০০ যাত্রী ছিলেন।
তবে লঞ্চ থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের অনেকের দাবি, নৌযানটিতে যাত্রী ছিল ৮০০ থেকে এক হাজার।