নতুন বছরের প্রথম মাসে আসতে পারে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের এমারেল্ড অয়েল কোম্পানির উৎপাদন শুরুর খবর। কোম্পানিটির পক্ষ থেকে এমনই আভাস পাওয়া গেছে।
২০১৭ সালে বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়া কোম্পানিটিতে প্রাণ ফেরাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয় চলতি বছরের শুরুর দিকে। মিনোরি বাংলাদেশ নামে একটি জাপানি প্রতিষ্ঠান এমারেল্ড অয়েল চালুর উদ্যোগ নিচ্ছে। এর অংশ হিসেবে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়।
সেপ্টেম্বরে একবার উৎপাদন চালুর ঘোষণা দিয়েও পারেনি কোম্পানিটি। আগের পর্ষদের শেয়ার হস্তান্তর জটিলতা, বেশ কিছু লাইসেন্স করতে না পারা, গ্যাস সংযোগ না পাওয়া এবং ব্যাংকের খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করতে না পারা এর কারণ।
গত প্রায় চার মাসে প্রয়োজনীয় লাইসেন্সগুলো নবায়ন হয়ে গেছে। গ্যাস সংযোগ পেয়েছে কারখানা, ভেঙে দেয়া পর্ষদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হাসিবুল গণি গালিব শেয়ার হস্তান্তরের কাগজে সই করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। এখন ব্যাংকের ঋণ পুনঃ তফসিল করার উদ্যোগ এগিয়ে যাবে বলে আশা করছে মিনোরি।
এরই মধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন মিনোরির নতুন পরিচালকরা। তারা উৎপাদন শুরুর প্রস্তুতির বিষয়টি জানিয়ে এসেছেন।
এমারেল্ড অয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উৎপাদন শুরুর সব বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যানকে অবহিত করা হয়েছে। আর কোনো জটিলতা না থাকলে নতুন বছরের শুরুতেই উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হবে।’
শেরপুরের শেরীপাড়ায় এমারেল্ডের কারখানা। ছবি: নিউজবাংলা
এমারেল্ডের কারখানাটি শেরপুরের শেরীপাড়ায় অবস্থিত। চার বছর বন্ধ থাকা কারখানাটির জং ধরা যন্ত্রপাতি মেরামত করে সেখানে মিনোরি বাংলাদেশের সাইনবোর্ডও টানিয়ে দেয়া হয়েছে।
এই উদ্যোগ নেয়ার পর নতুন একটি সমস্যার কথা জানতে পেরেছেন মিনোরির কর্মকর্তারা।
পরীক্ষামূলক উৎপাদনের জন্য গত রোববার কিছু মালামাল কারখানায় নেয়া হয়েছে। কিন্তু সে সময় স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি বাধা দেন।
আফজাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফ্যাক্টরির কিছু কর্মচারী মালামাল প্রবেশে বাধা দিয়েছিলেন। তাদের দাবি ছিল বকেয়া বেতন পরিশোধের। কিন্তু কারখানা বন্ধ হওয়ার আগে কারা কাজ করেছেন, কারা কাজ করেননি তার কোনো তালিকা আমাদের কাছে নেই। ফলে সেটিও সমাধান করতে হচ্ছে।’
খেলাপি ঋণের কী হবে
এমারেল্ডের আগের পর্ষদের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ সুদে-আসলে বেড়ে ১০০ কোটি টাকার মতো হয়ে গেছে। এখন ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে সুদ মওকুফের চেষ্টা চলছে।
আফজাল হোসেন বলেন, ‘ব্যাংকের বিষয়টি সমাধান হবে। উৎপাদন শুরু হলে অনেক সমস্যারই সমাধান সহজ হবে।’
তিনি বলেন, ‘এমারেল্ডের কারখানা সংস্কারে ইতিমধ্যে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা আছে।’
শেয়ার হস্তান্তরের নথিতে সাবেক এমডির সই
মিনোরি বাংলাদেশের কাছে কোম্পানির ৮ শতাংশ শেয়ার আছে। আর আগের মালিকদের ৩০ শতাংশ শেয়ারের বিনিময়ে তাদের ঋণের দায় নিতে রাজি তারা।
এমারেল্ড অয়েলের ধানের কুঁড়ার তেল স্পন্দন ছয় বছর আগে দেশের বাজারে সাড়া ফেলেছিল। এবারও একই নামে তেল আনবে তারা
সেই বিষয়টি চূড়ান্ত করতে কোম্পানিটির ভেঙে দেয়া পর্ষদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হাসিবুল গণি গালিবের কাছে শেয়ার হস্তান্তরের কাগজপত্র যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছে।
আফজাল হোসেন বলেন, ‘শেয়ার হস্তান্তরে তার সম্মতি আছে। স্বাক্ষরের ইমেজ পাওয়া গেছে। এখন সরাসরি কাগজপত্র হাতে এলে তা বিএসইসিতে জমা দেয়া হবে।’
কোম্পানির তথ্য
কোম্পানিটি ২০১৪ সালে ১০ টাকা করে অভিহিত মূল্যে দুই কোটি শেয়ার বিক্রি করে ২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে পুঁজিবাজার থেকে। কোম্পানিটি ধানের কুঁড়া থেকে তেল উৎপাদন করত এবং সে সময় বাজারে তাদের ব্র্যান্ড স্পন্দন বেশ সাড়া জাগিয়েছিল।
তবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার দুই বছর পর রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি মামলার কারণে ২০১৬ সালের ২৭ জুন থেকে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় কোম্পানিটির। মামলার আসামি হয়ে মালিকপক্ষ উধাও হয়ে যায়।
শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের নেতৃত্বাধীন বিএসইসি এ রকম রুগ্ণ বেশ কিছু কোম্পানিকে বাঁচানোর উদ্যোগ নিয়েছে। পর্ষদ পুনর্গঠন করে স্বাধীন পরিচালক নিয়োগের পর এরই মধ্যে উৎপাদন শুরু হয়েছে আলহাজ টেক্সটাইলে, ডুবে যাওয়া রিংসাইন টেক্সটাইলেও শুরু হয়েছে পরীক্ষামূলক উৎপাদন।
এমারেল্ড উৎপাদনে এলে এটা হবে তৃতীয় কোম্পানি, যেটিকে ডুবে যাওয়া থেকে টেনে তোলা হয়েছে। এ ছাড়া আলিফ গ্রুপের মাধ্যমে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল কোম্পানিকে চালু করারও অনুমোদন দিয়েছে বিএসইসি।