বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হোঁচটের পরও ২২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স

  •    
  • ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০৩

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা আশা করছেন, ডিসেম্বর মাসের শেষ চার দিনে কমপক্ষে ২০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স আসবে। তাহলেই অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকের অঙ্ক ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। বর্তমান বিনিময়হার (৮৫ টাকা ৮০ পয়সা) হিসাবে টাকার অঙ্কে ওই অর্থের পরিমাণ হবে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা।

গত কয়েক মাস ধরে টানা কমলেও বিদায়ী বছরে ২ হাজার ২০০ কোটি (২২ বিলিয়ন) ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাবে বাংলাদেশ। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে যে কোনো বছরের চেয়ে বেশি।

এর আগে এক বছরে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০ সালে; ২১ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংক মঙ্গলবার রেমিট্যান্স প্রবাহের সবশেষ যে তথ্য দিয়েছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ডিসেম্বর মাসের ২৭ দিনে (১ থেকে ২৭ ডিসেম্বর) ১৪৩ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। সবমিলিয়ে শেষ হতে যাওয়া ২০২১ সালে ২ হাজার ১৮৭ কোটি ১৮ লাখ (২১.৮৭ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন তারা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা আশা করছেন, ডিসেম্বর মাসের শেষ চার দিনে (২৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বর) কমপক্ষে ২০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স আসবে দেশে। তাহলেই অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সূচকের অঙ্ক ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। বর্তমান বিনিময়হার (৮৫ টাকা ৮০ পয়সা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা।

২০১৯ সালে ১৮ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছিল দেশে।

অর্থবছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত (প্রায় ৬ মাস) ১ হাজার ৩ কোটি ৮০ লাখ (১০.০৩ বিলিয়ন) রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত বছরের একই সময়ে এসেছিল ১ হাজার ২৬৬ কোটি ৬০ লাখ (১২.৬৬ বিলিয়ন) ডলার।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এই ৬ মাসে দেশে রেমিট্যান্স কমেছে ২০ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

তবে নতুন বছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহ ফের বাড়বে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাশার।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মহামারির মধ্যে একটা ভিন্ন পেক্ষাপটে রেমিট্যান্সে উল্লম্ফন হয়েছিল। যার কাছে যা জমানো টাকা ছিল পরিবার-পরিজনের প্রয়োজনে সব দেশে পাঠিয়ে দিয়েছিল। করোনায় সব কিছু বন্ধ থাকায় অবৈধ পথে (হুন্ডি) কোনো রেমিট্যান্স আসেনি; সব এসেছিল ব্যাংকিং চ্যানেলে। সে কারণেই গত অর্থবছরে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।’

‘এরই মধ্যে একটি সুসংবাদ এসেছে। তিন বছর পর মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হয়েছে; ফের শ্রমিক যাবে সেখানে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় মধ্যপাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতি চাঙ্গা হয়েছে। সেখান থেকে বেশি রেমিট্যান্স আসবে। সবমিলিয়ে রেমিট্যান্সে একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমার বিশ্বাস জানুয়ারি থেকেই বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসবে।’

২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর রেমিট্যান্স প্রবাহেও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ওই বছরের এপ্রিলে মাত্র ১০৯ কোটি ২৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। মে মাসে তা বেড়ে ১৫০ কোটি ৪৬ লাখ ডলারে ওঠে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে রেমিট্যান্স বেড়ে দাঁড়ায় ১৮৩ কোটি ২৬ লাখ ডলার।

সবমিলিয়ে শেষ হতে যাওয়া ২০২১ সালে ২ হাজার ১৮৭ কোটি ১৮ লাখ (২১.৮৭ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

মহামারির মধ্যেও গত ২০২০-২১ অর্থবছরের পুরোটা সময় জুড়ে (২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন) রেমিট্যান্সের উল্লম্ফন লক্ষ্য করা যায়। ওই অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।

গত অর্থবছরের ১২ মাসের মধ্যে সাত মাসই ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে দেশে।

কিন্তু চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহে ভাটার টান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রতি মাসেই কমছে অর্থনীতির গুরুত্ব পূর্ণ এই সূচক। প্রথম মাস জুলাইয়ে আসে ১৮৭ কোটি ১৫ লাখ ডলার। আগস্টে আসে ১৮১ কোটি ডলার। সেপ্টেম্বরে আসে ১৭২ কোটি ৬২ লাখ ডলার। অক্টোবর মাসে এসেছে ১৬৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

নভেম্বর মাসে আসে আরও কম, ১৫৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। বিদায়ী বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরের শেষ চার দিনে যদি ২০ কোটি ডলার আসে, তাহলে অবশ্য এই মাসে নভেম্বরের চেয়ে কিছু বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসবে।

দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা সোয়া কোটি বাংলাদেশির পাঠানো অর্থ। দেশের জিডিপিতে সব মিলিয়ে রেমিট্যান্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো।

রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার।

রিজার্ভ ৪৫.৮০ বিলিয়ন ডলার

আমদানি বাড়ায় বাংলাদেশের বিদেশি রিজার্ভও কমছে, নেমে এসেছিল ৪৫ বিলিয়ন ডলারের নিচে। গত কয়েক দিনে তা তা খানিকটা বেড়েছে।

মঙ্গলবার দিন শেষে রিজার্ভ ছিল ৪৫ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। প্রতি মাসে ৭ বিলিয়ন ডলার হিসেবে বর্তমানের এই রিজার্ভ দিয়ে ছয় মাসের কিছু বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুত থাকতে হয়।

গত ৪ নভেম্বর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১১৩ কোটি ১০ লাখ ডলারের আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪৪ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে, যা ছিল সাত মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম।

বেশ কয়েক বছর ধরে রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকে। একের পর এক রেকর্ড হয়। করোনাকালে আমদানিতে ধীরগতি আর রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের ঊর্ধ্বগতির কারণে গত ২৪ আগস্ট বাংলাদেশের অর্থনীতির এই সূচক ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে, যা ছিল অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আকুর নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের আকুর বিল পরিশোধ করতে হবে। তখন রিজার্ভ ফের কমে যাবে।

দুই মাস পর পর আকুর দেনা পরিশোধ করে বাংলাদেশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) বিভিন্ন পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র বা এলসি খোলার পরিমাণ বেড়েছে ৫৩ দশমিক ২৩ শতাংশ।

আর রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) বলছে, এই পাঁচ মাসে রপ্তানি আয় বেড়েছে ২৪ দশমিক ৩০ শতাংশ।

এ বিভাগের আরো খবর