বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শ্রমিকদের মজুরি বাড়ছে, রংপুরে বেশি

  •    
  • ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১ ২৩:১৩

বিবিএসের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত কয়েক মাস ধরে রংপুর অঞ্চলের শ্রমিক ও দিনমজুরদের মজুরি অন্য বিভাগের শ্রমিক ও দিনমজুরদের চেয়ে বেশি হারে বাড়ছে। অর্থনীতিবিদরা তা মানতে নারাজ। তারা বলছেন, আলাদাভাবে রংপুরে মজুরি অন্য জায়গার চেয়ে বেশি বাড়ার কারণ নেই।

মহামারি করোনার ধাক্কা সামলে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর প্রভাব পড়েছে দিনমজুর ও শ্রমিকদের মজুরিতে। গত পাঁচ মাস ধরে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মজুরি সূচক। মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশ ছুঁই ছুঁই করলেও মজুরি সূচক ৬ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।

সরকারি হিসাবে গত নভেম্বর মাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতের শ্রমিকদের গড়ে মজুরি বেড়েছে ৬ দশমিক ০২ শতাংশ। এর অর্থ হলো, গত বছরের নভেম্বরে শ্রমিক ও দিনমজুররা গড়ে ১০০ টাকা মজুরি পেলে এই বছরের নভেম্বর মাসে পেয়েছেন ১০৬ টাকা ২ পয়সা।

তবে অবিশ্বাস্য তথ্য হচ্ছে, অর্থনীতিসহ দেশের সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দু রাজধানী ঢাকার চেয়েও রংপুরের দিনমজুর ও শ্রমিকদের মজুরি বেশি বেড়েছে। তবে, এর কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না অর্থনীতিবিদরা।

সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) যে হিসাব দিচ্ছে, তাতে দেখা যায়, নভেম্বর মাসে এক সময়ের মঙ্গাকবলিত উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগের শ্রমিক-দিনমজুরদের মজুরি সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ৭ দশমিক ৮১ শতাংশ। আর কম বেড়েছে ঢাকায় ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

বিবিএসের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত কয়েক মাস ধরে রংপুর অঞ্চলের শ্রমিক ও দিনমজুরদের মজুরি অন্য বিভাগের শ্রমিক ও দিনমজুরদের চেয়ে বেশি হারে বাড়ছে।

তবে অর্থনীতির গবেষক সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান পরিসংখ্যান ব্যুরোর এই তথ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘এ তথ্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, কেউ বিশ্বাস করবে না।’

নিউজবাংলাকে সেলিম রায়হান বলেন, ‘ঢাকার চেয়ে রংপুরের শ্রমিক-দিনমজুরদের মজুরি বেশি হারে বাড়ছে, এটা কীভাবে সম্ভব? বিবিএসের গবেষণা পদ্ধতিতেই গোলমাল আছে। প্রথম কথা হচ্ছে, মহামারির ধকল কিন্তু এখনও পুরোপুরি সামলে ওঠেনি বাংলাদেশ। এর মধ্যে কোনো এলাকার শ্রমিক-দিনমজুরেরই মজুরি বাড়ার কথা নয়; তারপর আবার রংপুর বিভাগের দিনমজুর-শ্রমিকদের মজুরি বেশি বেড়েছে, এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।’

এ প্রসঙ্গে বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মাঠপর্যায় থেকে যে তথ্য পাই, সেটাই প্রকাশ করি।’

দেশে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নেই। নির্দিষ্ট কিছু খাতের জন্য পৃথক মজুরিকাঠামো আছে। অন্য সব খাতেই দরকষাকষি বা আলোচনা সাপেক্ষে মজুরি পেয়ে থাকেন শ্রমিক-দিনমজুররা।

২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও তছনছ হয়ে যায়; পাল্টে যায় সব হিশাব-নিকাশ। যার প্রভাব পড়ে মজুরি সূচকে।

পরিসংখ্যান ব্যুরো মজুরি সূচকের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, নভেম্বর মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে জাতীয় মজুরি বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ০২ শতাংশ। অক্টোবরে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ। আগের তিন মাস সেপ্টেম্বর, আগস্ট ও জুলাইয়ে এই হার ছিল যথাক্রমে ৫ দশমিক ৯১ শতাংশ, ৫ দশমিক ৮০ ও ৫ দশমিক ৭২ শতাংশ।

গত অর্থবছরের শেষ দুই মাস জুন ও মে মাসে এই হার ছিল যথাক্রমে ৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

বিবিএসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে গড় মজুরি সূচক ছিল ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা খানিকটা কমে ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশে নেমে আসে।

গত ২০২০-২১ অর্থবছরে তা আরও কমে ৬ দশমিক ১২ শতাংশে নেমে আসে।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এই সূচক ৬ শতাংশের নিচে নেমে এসে ৫ দশমিক ৭২ শতাংশে দাঁড়ায়। এর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে মজুরি সূচক।

অর্থনীতির পরিভাষায়, মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বৃদ্ধির হার বেশি হলে কারও কাছে হাত পাততে হয় না। নিজেদের ক্রয়ক্ষমতা দিয়েই বাজার থেকে বেশি দামে পণ্য কেনা যায়।

বিবিএসের হিসাবে নভেম্বর মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ। এতে দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে দেশে মজুরি বৃদ্ধির হার আর মূল্যস্ফীতি প্রায় সমান।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব ধরলে, দিনমজুরদের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজার থেকে বেশি দামে তাদের পণ্য কিনতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি; বরং কর্মহীন হয়ে যাওয়া গরিব মানুষের জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নানা ধরনের সহায়তা কর্মসূচি নিতে হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে সেলিম রায়হান বলেন, ‘এই সময়ে মজুরি হার বৃদ্ধির কোনো কারণ আমি খুঁজে পাই না। সাধারণত যখন শ্রমিকের চাহিদা বাড়ে, সরবরাহ কম থাকে, তখন মজুরি বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এই মহামারির সময়ে শ্রমিকের চাহিদা বেশ কমেছে। অনানুষ্ঠানিক খাতে বেকারের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। তাহলে মজুরি বাড়ল কোন ভিত্তিতে?’

বিবিএস প্রতি মাসে কৃষিশ্রমিক, পরিবহন কর্মী, বিড়িশ্রমিক, জেলে, দিনমজুর, নির্মাণশ্রমিকসহ ৪৪ ধরনের পেশাজীবীর মজুরির তথ্য সংগ্রহ করে মজুরি হার সূচক তৈরি করে। এসব পেশাজীবীর মজুরি খুব কম এবং দক্ষতাও কম। শুধু দৈনিক ভিত্তিতে মজুরি পান বা নগদ টাকার পরিবর্তে অন্য সহায়তা পান, তার ভিত্তিতে কোন মাসে মজুরি হার কত বাড়ল, তা প্রকাশ করে বিবিএস।

পরিসংখ্যান ব্যুরো যে ৪৪ ধরনের পেশাজীবীর মজুরির তথ্য নেয়, তার মধ্যে ২২টি শিল্প খাতের এবং ১১টি করে কৃষি ও সেবা খাতের পেশা। বেতনভোগী কিংবা উচ্চ আয়ের পেশাজীবীদের বিবিএসের মজুরি সূচকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৬-১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের কর্মসংস্থানের বড় অংশই হচ্ছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। মোট শ্রমশক্তির ৮৫ দশমিক ১ শতাংশই এ খাতে নিয়োজিত। আর ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে।

অন্যদিকে কৃষিক্ষেত্রে নিয়োজিত মোট শ্রমশক্তির ৯৫ দশমিক ৪ শতাংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত। শিল্প খাতের ৮৯ দশমিক ৯ শতাংশ, সেবা খাতের ৭১ দশমিক ৮ শতাংশ শ্রমিক অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত।

কোন বিভাগে মজুরি কত বাড়ল

বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে নভেম্বর মাসে ঢাকা বিভাগে মজুরি বেড়েছে ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ। অক্টোবর, সেপ্টেম্বর, আগস্ট ও জুলাইয়ে এই হার ছিল যথাক্রমে ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ, ৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ, ৫ দশমিক ৭২ ও ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

এই তথ্য বলছে, অর্থনীতি, ব্যবস্যা-বাণিজ্যসহ সব কিছুর কেন্দ্রস্থল রাজধানী ঢাকার দিনমজুর ও শ্রমিকদের মজুরি গত পাঁচ মাস ধরেই কমছে।

নভেম্বর চট্টগ্রামে মজুরি বাড়ার হার দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ। অক্টোবর, সেপ্টেম্বর, আগস্ট ও জুলাইয়ে ছিল যথাক্রমে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ, ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ, ৫ দশমিক ৮১ ও ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

রাজশাহীতে নভেম্বর মজুরি বাড়ার হার ছিল ৬ দশমিক ০৬ শতাংশ। অক্টোবরে ছিল ৫ দশমিক ৬০ শতাংশ; সেপ্টেম্বরে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আগস্টে ছিল ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ; জুলাইয়ে ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

রংপুর বিভাগে নভেম্বর মাসে মজুরি বেড়েছে ৭ দশমিক ৮১ শতাংশ। অক্টোবরে এই বৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ৭১ শতাংশ; সেপ্টেম্বরে ৭ দশমিক ৪১ শতাংশ। আগস্টে বেড়েছিল ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ; জুলাইয়ে বৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ২০ শতাংশ।

বরিশালে নভেম্বরে মজুরি সূচকের হার ছিল ৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ। অক্টোবর, সেপ্টেম্বর, আগস্ট ও জুলাইয়ে ছিল যথাক্রমে ৬ দশমিক ১০ শতাংশ, ৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ, ৫ দশমিক ৭৪ ও ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

খুলনায় নভেম্বরে মাসে মজুরি বেড়েছে ৬ দশমিক ১০ শতাংশ। অক্টোবরে বেড়েছিল ৬ দশমিক ১০ শতাংশ; সেপ্টেম্বরে ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ। আগস্ট ও জুলাই মাসে বেড়েছিল যথাক্রমে ৫ দশমিক ৫৪ ও ৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

আর সিলেট বিভাগে নভেম্বরে মজুরি সূচকের হার ছিল ৫ দশমিক ৮০ শতাংশ। অক্টোবর, সেপ্টেম্বর, আগস্ট ও জুলাইয়ে ছিল যথাক্রমে ৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ, ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ, ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ ও ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ।

এ বিভাগের আরো খবর