বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কার গুলিতে মারা যান সালাম

  •    
  • ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৬:৩৭

পুলিশ বলছে, সংঘাতকারী চেয়ারম্যান প্রার্থী এমরান হোসেনের সমর্থকদের গুলিতেই সালাম মারা যান। এ ঘটনায় এমরান হোসেনসহ চারশ’ জনকে আসামি করে মামলাও করেছে পুলিশ। তবে এমরানের অনুসারীদের দাবি, পুলিশের গুলিতেই মারা গেছেন সালাম।

ভোট শেষ হয়েছিল শান্তিপূর্ণভাবেই। গণনার শেষদিকেই বাঁধে সংঘাত। মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সড়কে জড়ো হয় এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকরা। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় তারা। এতে প্রাণ হারান আব্দুস সালাম নামের ষাটোর্ধ এক বৃদ্ধ।

এই ঘটনা রোববার রাতের। সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের বৈটিকর বাজারের।

নিহত আব্দুস সালাম সংঘর্ষে ছিলেন না। লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়নের রামপা গ্রামের বাসিন্দা এই বৃদ্ধ পেশায় সাইকেল মেকানিক। বৈটিকর বাজারেই তার দোকান।

দোকান বন্ধ করে বাড়ির ফেরার পথেই সংঘর্ষের মাঝখানে পড়ে যান তিনি। গুলি লাগে তার শরীরে। আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে ওই রাতেই মারা যান সালাম।

কার গুলিতে সালাম মারা গেছেন এই নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। যদিও পুলিশ বলছে, সংঘাতকারী চেয়ারম্যান প্রার্থী এমরান হোসেনের সমর্থকদের গুলিতেই সালাম মারা যান।

এ ঘটনায় এমরান হোসেনসহ চারশ’ জনকে আসামি করে মামলাও করেছে পুলিশ। তবে এমরানের অনুসারীদের দাবি, পুলিশের গুলিতেই মারা গেছেন সালাম। সালামের গায়ে পুলিশের একাধিক রাবার বুলেট ছিল বলেও দাবি তাদের।

ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে

রোববার নির্বাচন ছিল ফুলবাড়ি ইউনিয়নের। এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন এমরান হোসেন। কোনো পদে না থাকলেও জামায়াতের নেতা হিসেবে পরিচিত তিনি। সকাল থেকে ভোট হলেও সন্ধ্যার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

ইউনিয়নের ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ফল নিয়ে আপত্তি তোলেন এমরানের অনুসারীরা। এতে জামায়াতের স্থানীয় নেতা-কর্মীরাও অংশ নেন। রাত ৮টার দিকে বৈটিকর বাজারে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়ক অবরোধ করেন তারা।

পুলিশ অবরোধকারীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে চায়। এ সময় দুপক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি, এ সময় বৈটিকর বাজারের মসজিদে ঘোষণা দেয়া হয়, পুলিশ গ্রামবাসীর ওপর হামলা চালিয়েছে। সবাইকে বাজারে এসে হামলা ঠেকানোর জন্যও আহ্বান জানানো হয়।

এই ঘোষণার পর গ্রামের লোকজন এসেও সংঘর্ষে যোগ দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে পুলিশ টিয়ার সেল ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে। হামলাকারীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছে বলে অভিযোগ পুলিশের। দুপক্ষের ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে আহত হন অন্তত ২০ জন।

গুলিতে প্রাণ হারানো আব্দুস সালাম। ছবি: নিউজবাংলা

গুরুতর আহত অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় সালামকে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর মৃত্যু হয় তার।

বাজারের সংঘর্ষ থামার পর এই ইউনিয়নের ফল ঘেষণা করে রিটার্নিং কর্মকর্তা। এতে নৌকার প্রার্থী আবুদল হানিফ খান চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

কার গুলিতে মৃত্যু

হাসপাতালে নেয়া সালামের বুক পেটসহ শরীরে বিভিন্ন স্থানে রাবার বুলেটের চিহ্ন পেয়েছেন চিকিৎসকরা।

ফলে পুলিশের গুলিতেই সালাম মারা গেছেন বলে প্রথমদিন অভিযোগ করেছিল পরিবার। যদিও মঙ্গলবার তারা এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

রোববার রাতের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সালামের ছেলে আবুল কালাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাবা রোববার বিকেল চারটার দিকে নিজ কেন্দ্রে ভোট দেন। এরপর বাজারে গিয়েছিলেন দোকানের তালা পরিবর্তন করতে।

তিনি বলেন, ‘রাত ৯টার দিকে এক প্রতিবেশির মাধ্যমে বাবার গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাই। এরপর বাজারে গিয়ে একটি মুদিদোকান থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই। হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন।’

রোববার ঘটনার পর কালাম জানিয়েছিলেন পুলিশের গুলিতে তার বাবা মারা গেছেন। এ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘আমি ঘটাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের মুখে শুনেছিলাম পুলিশের গুলি লেগেছে। কিন্তু আমি তো দেখিনি। তাই কার গুলিতে মারা গেছেন তা নিশ্চিত করে বলতে পারব না।’

গোলাপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদ চৌধুরীর বলেন, ‘ফুলবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী এমরান হোসেন জাময়াত নেতা। নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর পরই তিনি জামায়াতের নেতা-কর্মীদের নিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।

মামলায় পরাজিত চেয়ারম্যান এমরান হোসেনকে আসামি করা হয়েছে। ছবি: নিউজবাংলা

‘পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এ সময় জামায়াতের নেতা-কর্মীদের ছোড়া গুলিতে সালাম গুরুতর আহত হন। পরে মৃত্যু হয় তার। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন।’

সংঘর্ষের সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে পুলিশ ২৬৭ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছুড়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি হারুনুর রশিদ চৌধুরী।

এ ব্যাপারে এমরান হোসেনের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পুলিশও বলছে তিনি পলাতক আছেন।

তবে এমরান আহমদের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সেদিন আমরা কোনো গুলি করিনি। আমরা সড়কে জড়ো হয়ে ভোট গণনায় অনিয়মের প্রতিবাদ করছিলাম। আমাদের কয়েকজনের হাতে লাঠিসোঁটা ছিল। পুলিশই গুলি করেছে।’

পুলিশের মামলায় আসামি চার শতাধিক

সোমবার রাতে গোলাপগঞ্জ থানার ৪০০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। থানার এসআই মহরম আলী বাদী হয়ে ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে এ মামলা করেন। মামলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী এমরাহ হোসেনকেও আসামি করা হয়েছে। অভিযুক্ত ৪ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা হলেন ফলিক আহমদ, মিরন আহমদ, আব্দুর রহিম ও কামরান আহমদ।

ওসি হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, হত্যা সংঘর্ষে ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা হয়নি।

ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার বিকেলে আব্দুস সালামের দাফন হয়েছে বলে জানান তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর