আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বিরোধপূর্ন জমিতে দোকানের ভাড়াটিয়া ও মালিককে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে ভাঙচুর ও দখলের অভিযোগ উঠেছে নালিতাবাড়ি পৌরসভার মেয়র আবু বাক্কারের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনার একটি সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়।
এদিকে, মেয়রের হুমকিতে প্রাণের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে জানিয়েছেন দোকানের ভাড়াটিয়া। ভুক্তভোগী পরিবার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানালেও পৌর মেয়র তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, শেরপুরের নালিতাবাড়ি পৌরসভার সিটপাড়া এলাকার একটি দোকান ভাড়া নিয়ে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে দোকান করে আসছিল আলামিন বেকারির মালিক সফিকুল ইসলাম। কিন্তু সম্প্রতি জনৈক আব্দুল আওয়াল ওই জমির মালিকানা দাবি করেন।
আওয়ালের দাবি, সরকারি খাস জমি দিয়ে তার বাবা হাবিবুল্লাহর কাছ থেকে শমসের পানচাত নামে এক ব্যাক্তি ওই জমি এওয়াজ বদল করেছিলেন। তাই ওই এওয়াজ বদল দলিল অবৈধ।
অন্যদিকে জমিটি ভোগ দখল করা দীনবন্ধু ঘোষসহ তাদের তিন ভাই দাবি করছেন, তারা শমসের পানচাতের কাছ থেকে ওই জমিটি কিনেছেন।
এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সম্প্রতি দ্বন্দ্ব শুরু হয়। মালিকানার দ্বন্দ্বে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও একটি পক্ষে অবস্থান নিয়ে দোকানের ভাড়াটিয়া ও মালিককে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে ভাঙচুর করেন নালিতাবাড়ী পৌর মেয়র আবু বাক্কার।
গত মঙ্গলবার রাতের এ ঘটনাটির সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। আর এ ঘটনায় পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবিসহ দুটি পৃথক মামলাও হয়।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, মালামাল বের করে দোকান ও জমি দখলের পর এক সপ্তাহের মধ্যে শহর ছাড়তে ওই দোকানের ভাড়াটিয়া ও তার পরিবারকে হুমকি দিয়েছেন মেয়র বাক্কার। প্রাণের ভয়ে ভাড়াটিয়া সফিকুল ইসলাম এখন আত্মগোপনে থাকলেও, ভাড়া বাসায় আতঙ্কে আছে তার পরিবার।
বিরোধপূর্ণ জমির দোকান থেকে বের করে দেয়া মালামাল
এ ঘটনায় মেয়র ইতোপূর্বে শালিস বৈঠক করেছেন বলে দাবি করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এ জন্য তারা সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
তবে ঘটনাটিকে নিছক মিথ্যা ও বানোয়াট দাবি করেছেন মেয়র আবু বাক্কার। শালিস বৈঠকের সিদ্ধান্ত না মানায় তাদেরকে ঘর থেকে বের করে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
ভাড়াটিয়া সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ওই ঘর নিয়ে দুই মালিকের দ্বন্দ্ব। উভয় পক্ষই আমার কাছে ভাড়া দাবি করছে। মেয়র একটি পক্ষ নিয়ে আমার কাছে চাঁদা না পেয়ে মালামাল বের করে দিয়েছেন। আমাকে হুমকি দিয়েছেন। প্রাণের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আমার পরিবারের সদস্যরা চরম আতঙ্কে আছে।’
আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘এ জমির মালিক আমরা। এ জন্য আমরা আদালতে মামলাও করেছি। তরা অবৈধভাবে জমিতে আছে।’
অপরদিকে জমিটি ভোগ দখল করা মিঠু ঘোষ বলেন, ‘এ জমি আমরা শমসের পানচাতের কাছ থেকে সাবকবলা দলিল করে ক্রয় করেছি। এখন সফিকুল ভাড়া নিয়ে তা পরিশোধ করতে না পারায় এ ঝামেলার সষ্টি হয়েছে।’
ব্যবসায়ী হাবলু দত্ত জানান, ‘মেয়র সাহেব আমাদের আপদে বিপদে থাকেন। তিনি শালিস বৈঠক করেছেন। তা না মানার কারণেই তাদেরকে বের করে দিয়েছেন। এ সময় পুলিশও ছিল।’
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বছির আহাম্মেদ বাদল বলেন, ‘এটা জমির ব্যাপার। এ বিষয়ে আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন। এখানে কারোর কিছু করার নাই। এ ছাড়া সফিকের পরিবারকেও আমরা নিরাপত্তা দিয়েছি।’
পৌর মেয়র আবু বাক্কার বলেন, ‘আমি সেখানে ব্যবসায়ীদের আহ্বানে গিয়েছিলাম। ইতোপূর্বে ভাড়া দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সফিকুলকে বের করে দেয়ার পর তালা দেয়া হয়েছিল। পরে জোর করে ঘরে অবস্থান নিলে তাকে আবারও বের করে দেয়া হয়। এ ঘটনার জন্য আমি দায়ী নই।’