বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সূচক বাড়ল টানা দুই দিন, ৭ ডিসেম্বরের পর প্রথম

  •    
  • ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৪:৫৬

গত ৭ ডিসেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের বৈঠক শেষে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আবার পর আবার শুরু হয় পতন। সোমবার পর্যন্ত ১৩ কর্মদিবসের মধ্যে তিন দিন কেবল সূচক বাড়ে। কমে বাকি ১০ দিন। ৯ ডিসেস্বর ৩২ পয়েন্ট আর ১৫ ডিসেম্বর ৩২ পয়েন্ট এবং ২১ ডিসেম্বর সূচক বাড়ে ৩৯ পয়েন্ট। বাকি প্রতি দিনই সূচক কমে। ফলে সোমবার সূচক বাড়লেও বিনিয়োগকারীরা আশাবাদী ছিল না। তবে মঙ্গলবারের লেনদেন কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে তাদের।

পুঁজিবাজার নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে বৈঠক থেকে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসার পর টানা দরপতনের মধ্যে প্রথমবারের মতো পর পর দুই দিন বাড়ল সূচক। কিছুটা বেড়েছে লেনদেনও। তবে তা এক হাজার কোটি টাকার নিচেই রয়ে গেছে।

বছর শেষ হতে বাকি আর তিন কর্মদিবস। এই অবস্থায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নতুন করে শেয়ার কেনা শুরু করেনি। বড় বিনিয়োগকারীরাও হাত গুটিয়ে বসে।

গত কয়েক সপ্তাহের ধারাবাহিকতায় এবারও সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার লেনদেন শুরু হয় বড় পতনের মধ্য দিয়ে। সেদিন ৭২ পয়েন্ট সূচক হারালেও সোমবার বাড়ে ৩৯ পয়েন্ট। সপ্তাহের তৃতীয় কর্মদিবস মঙ্গলবার তা বাড়ে আরও ৭৩ পয়েন্ট।

নিঃসন্দেহে বাজারের এই চিত্র বিনিয়োগকারীদেরকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে।

রোববার লেনদেনের শুরুর পর শেষ পর্যন্ত সূচক ক্রমেই যেভাবে পড়েছিল, তার বিপরীত চিত্র দেখা গেল দুই দিন পর। লেনদেনের শুরুতে সূচক যতটা বাড়ে, বেলা বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ে আরও বেশি। শেষ সময়ে উঠে আরও উচ্চতায়।

গত ৭ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বৈঠক শেষে জানানো হয়, ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারির শুরুতে আবার বৈঠক করে দৃশ্যমান একটি ঘোষণা আসবে।

মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র

গত ১২ সেপ্টেম্বরের থেকে শুরু হওয়া দর সংশোধন এক মাস চলার পর শুরু হয় পতন। সে সময় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিএসইসির মধ্যে মতভিন্নতার বিষয়টি সামনে আসে। বন্ডে বিনিয়োগ ব্যাংকের বিনিয়োগসীমার মধ্যে থাকবে কি না, পুঁজিবাজারের বিনিয়োগসীমা শেয়ারের ক্রয়মূল্যে না কি বাজার মূল্যে হবে- এ নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে দুই সংস্থা। সঙ্গে আরও বেশি কিছু ইস্যু চলে আসে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরেক আদেশ দিয়ে জানায়, ব্যাংকের ইস্যু করা পারপেচুয়াল বন্ড দিয়ে ব্যাসেল-থ্রি এর শর্ত পূরণ হবে না।

দুই সংস্থার মধ্যে এই মতবিরোধের বিষয়টি সামনে আসার পর পুঁজিবাজারে লেনদেন ও সূচক কমতে থাকে। এর মধ্যে গত ৩০ নভেম্বর দুই পক্ষের বৈঠকে ইতিবাচক সিদ্ধান্তে আসার কথা জানায় বিএসইসি। পরদিন সূচক দেয় লাফ। কিন্তু সেই রাতেই বাংলাদেশ ব্যাংক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ছড়ায় আতঙ্ক। পরদিন সকালে বড় পতনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় লেনদেন। সেদিনই অর্থ মন্ত্রণালয় দুই পক্ষকে বৈঠকে ডাকার বিষয়টি প্রকাশ পায়, আর এরপর হারানো সূচক পুনরুদ্ধার করে বড় বড় উত্থান।

কিন্তু মন্ত্রণালয়ের সেই বৈঠক শেষে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আবার পর আবার শুরু হয় পতন। সোমবার পর্যন্ত ১৩ কর্মদিবসের মধ্যে তিন দিন কেবল সূচক বাড়ে। কমে বাকি ১০ দিন।

সেই বৈঠক শেষে গত ৯ ডিসেস্বর ৩২ পয়েন্ট আর ১৫ ডিসেম্বর ৩২ পয়েন্ট এবং ২১ ডিসেম্বর সূচক বাড়ে ৩৯ পয়েন্ট। বাকি প্রতি দিনই সূচক কমে।

ফলে সোমবার সূচক বাড়লেও তা নিয়ে বিনিয়োগকারীরা আশাবাদী হয়ে উঠার মতো কিছু দেখেনি। এর মধ্যে মঙ্গলবার লেনদেন শুরুই হয় ২৭ পয়েন্ট বেড়ে। বেলা সোয়া ১০টা পর্যন্ত বাড়ে ৩৯ পয়েন্ট। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ সেখান থেকে কমে আরও ১৬ পয়েন্ট। এরপর থেকে সময় যত গড়িয়েছে সূচক বেড়েছে তত বেশি।

বেলা আড়াইটা বাজার চার মিনিট আগে সূচক বাড়ে আগের দিনের তুলনায় ৮০ পয়েন্ট। পরের চার মিনিটে সমন্বয়ের কারণে শেষ পর্যন্ত ৭ পয়েন্ট কমে শেষ হয় লেনদেন।

আগের দিনের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে প্রায় দেড়শ কোটি টাকা। সোমবার হাতবদল হয়েছিল ৭৪৫ কোটি ১০ লাখ ১৮ হাজার টাকার শেয়ার। সেটি বেড়ে হয়েছে ৮৭২ কোটি ৩৯ লাখ ১১ হাজার টাকা।

বেড়েছে ২৮৬টি কোম্পানির শেয়ারদর। বিপরীতে কমেছে ৬৯টির। অপরিবর্তিত ছিল ২৩টির দর।সবচেয়ে ভালো দিন গেছে বস্ত্র খাতে। টানা সংশোধনের মধ্যে হাতে গোড়া দুই একটি ছাড়া বাকিগুলোর দাম বেড়েছে। ভালো দিন গেছে ব্যাংক, আর্থিক, বিমা, প্রকৌশল, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ও ওষুধ এবং রসায়ন খাতেও।

লেনদেনে সেরা বিমা খাত। এরপরের অবস্থান যথাক্রমে বিবিধ, ব্যাংক, ওষুধ ও রসায়ন এবং বস্ত্র।

উত্থানের নেপথ্যে যেসব কোম্পানি

সূচক বৃদ্ধিতে সূচক সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো কোম্পানি। শেয়ারদর ২.১৫ শতাংশ বৃদ্ধির কারণে কোম্পানিটি সূচকে যোগ করেছে ১০.২২ পয়েন্ট।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭.০৬ পয়েন্ট বাড়িয়েছে ওয়ালটন। কোম্পানিটির দর বেড়েছে ১.৪৫ শতাংশ।

সূচকের উত্থানে প্রধান ভূমিকায় ছিল এই ১০ কোম্পানি

লাফার্জ হোলসিম, রবি, পাওয়ারগ্রিড, ব্র্যাক ব্যাংক, গ্রামীণ ফোন, আইএফআইসি ব্যাংক, বিএসআরএম স্টিল ও বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন সূচক বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে।

এই ১০ টি কোম্পানির কারণেই সূচকে যোগ হয়েছে ৩১.০৫ পয়েন্ট।

বিপরীতে বেক্সিমকো লিমিটেডের কারণ সূচক কমেছে সবচেয়ে বেশি। কোম্পানিটি ২.৫৭ শতাংশ দর হারানোর কারণে সূচক কমেছে ৪.৮৩ পয়েন্ট।

ইউনিলিভার, রেকিড বেনকিনজার, বার্জার পেইন্টস, পূবালী ব্যাংক, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ওরিয়ন ফার্মা, এশিয়ান ইন্স্যুরেন্স, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ ও প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সও সূচক কমিয়েছে।

সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানির কারণে সূচক কমেছে ৯.৫৪ পয়েন্ট।

এই ১০টি কোম্পানি সূচক নিচে টানার চেষ্টা করেছে

দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় বস্ত্রের প্রাধান্য

বেশ কয়েক মাস পর এই চিত্র দেখা গেল পুঁজিবাজারে। সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে এমন ১০টি কোম্পানির ৬টিই এই একটি খাতের। গত তিন মাসের দরপতনে এই খাতটি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১০ শতাংশ দর বেড়েছে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের দর। ৩৮ টাকার শেয়ার বেড়ে বেড়ে হয়েছে ৪১ টাকা ৮০ পয়সা। লেনদেন হয়েছে ৭৩ লাখ ১২ হাজার, হাতবদল হয়েছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ২৪ পয়সা।

সাত বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় আর চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অভাবনীয় আয়ের তথ্য জানানোর পর রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের দর বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। লভ্যাংশ ঘোষণার পর রোববার ১২ শতাংশের বেশি এবং পরের দুই দিনে আরও ২০ শতাংশের বেশি দাম বাড়ল।

উত্থানের তৃতীয় দিনে শেয়ার দর ৬১ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৭ টাকা ১০ পয়সা। এ নিয়ে তিন দিনে শেয়ারদর ৪৯ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বাড়ল ১৭ টাকা ৭০ পয়সা।

তৃতীয় অবস্থানে থাকা বস্ত্র খাতের আরেক কোম্পানি হামিদ ফেব্রিক্সের দর বেড়েছে ৯.৯০ শতাংশ।

আরও তিনটি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে নয় শতাংশের বেশি। এগুলো হচ্ছে ঢাকা ডাইং, সালভো ক্যামিকেল এবং আইসিবি এএমসিএল ফার্স্ট অগ্রণী ব্যাংক মিউচ্যুয়াল ফান্ড।

এক সপ্তাহের মধ্যে দুই দিন লেনদেনে বিমার শীর্ষ অবস্থান দেখা গেল

আট শতাংশের বেশি শেয়ার দর বেড়েছে দুটি কোম্পানির। এগুলোর মধ্যে আইসিবি ইমপ্লয়ি প্রভিডেন্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ৮.৬৯ শতাংশ এবং ড্রাগন সোয়েটারের শেয়ার দর বেড়েছে ৮ শতাংশ।

দশম অবস্থানে থাকা আমান কটনের শেয়ার দর বেড়েছে ৭.৭১ শতাংশ। কোম্পানিটির শেয়ার ২৮ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩০ টাকা ৭০ পয়সা।

আরও তিনটি কোম্পানির দর ছয় শতাংশের বেশি, ১৪টির দর ৫ শতাংশের বেশি, ২৪টির দর ৪ শতাংশের বেশি, ৩৭টির দর ৩ শতাংশের বেশি, ৪৮টির দর ২ শতাংশের বেশি, ৯৪টির দর বেড়েছে এক শতাংশের বেশি।

দর পতনের ১০ কোম্পানি

এই তালিকার শীর্ষে ছিল এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, যার দর কমেছে ৪.৪৭ শতাংশ। ১২৩ টাকার শেয়ার নেমে এসেছে ১১৭ টাকা ৫০ পয়সায়।

দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা এএমসিএল প্রাণ এর দর কমেছে ৩.৭৪ শতাংশ। এছাড়া ইস্টার্ন ক্যাবলসের দর কমেছে ৩.৬০ শতাংশ। ৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকার মোট ৬ হাজার ৫৬৯টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।

প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৩.৫০ শতাংশ। ২ কোটি ৫৯ লাখ টাকার হাতবদল হয়েছে ২ লাখ ৯ হাজার ৭৬৭টি শেয়ার।

ফার্মা এইডের দর ৩.৩৯ শতাংশ, এশিয়া প্যাসিফিক ইন্সুরেন্সের শেয়ার দর ৩.২৪ শতাংশ, আইএফআইসি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট প্রতি ৩.১২ শতাংশ, জুট স্পিনার্সের দর ৩.০৩ শতাংশ কমেছে।

প্রধান প্রায় সব খাতেই শেয়ারদর বেড়েছে

নবম স্থানে থাকা কে অ্যান্ড কিউয়ের দর ২.৯০ শতাংশ এবং দশম অবস্থানে থাকা এটলাস বাংলাদেশ দর হারিয়েছে ২.৬৩ শতাংশ।

আরও ৯টি কোম্পানির দর ২ শতাংশের বেশি, ১৩টির দর এক শতাংশের বেশি কমেছে।

লেনদেনে শীর্ষ ১০

শীর্ষে থাকা বেক্সিমকো লিমিটেডে লেনদেন হয়েছে ৭১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। ৪৮ লাখ ১৯ হাজার ৬টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে কোম্পানিটির।

দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনে লেনদেন হয়েছে ৫৫ কোটি ৭২ লাখ টাকার। শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৮৪ লাখ ৬০ হাজার ৭৮৮টি ।

তৃতীয় অবস্থানে থাকা এশিয়া ইন্স্যুরেন্সে লেনদেন হয়েছে ৪৬ কোটি ৮ লাখ টাকা। হাতবদল হয়েছে ৩৭ লাখ ৫৫ হাজার ৫৯১টি শেয়ার।

চতুর্থ অবস্থানে থাকা সোনালী পেপারের লেনদেন হয়েছে ৪৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা, হাতবদল হয়েছে ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৬৩৬টি শেয়ার।

২১ কোটি ২৯ লাখ টাকায় ওয়ান ব্যাংকে হাতবদল হয়েছে ১ কোটি ৫২ লাখ ২১ হাজার ১৪০টি শেয়ার। ১৯ কোটি ২৩ লাখ টাকায় ফরচুন সুজে হাতবদল হয়েছে ২০ লাখ ১৯ হাজার ৪৯৬টি শেয়ার।

এছাড়া বেক্সিমকো ফার্মায় ১৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, বিকন ফার্মায় ১৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলে ১১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর