ঠাকুরগাঁওয়ের একমাত্র চিনিকলটিতে এ বছর আখ মাড়াই মৌসুমে চালু হতে না হতেই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। এতে আখ নিয়ে বিপাকে পড়েছে সেতাবগঞ্জ, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁওয়ের আখচাষিরা।
ঠাকুরগাঁওয়ে চিনিকল ঘুরে দেখা যায়, আখের গাড়ি লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মাড়াইয়ের জন্য আখ নিচ্ছে না চিনিকল কর্তৃপক্ষ।
লোকসানের প্রহর গুনছে অনেক চাষি। অনেকে আবার ক্ষোভ প্রকাশ করে চিনিকলসংলগ্ন মাঠে আখ ফেলে দিয়ে বাসায় চলে যাচ্ছেন।
রহিমানপুর এলাকার আখচাষি ফয়েজ উদ্দীন বলেন, ‘আমি এবার ৮ একর জমিতে আখ চাষ করেছি। এ বছর আখ দেয়ার অনুমতিও আছে আমার কাছে। চিনিকলে দুই গাড়ি আখ নিয়ে এসেছি মাড়াইয়ের জন্য। এসে দেখি আখ নিচ্ছে না। কর্তৃপক্ষ বলছে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে আখ মাড়াই বন্ধ রয়েছে দুই দিন ধরে।’
এই চাষি আরও বলেন, ‘যান্ত্রিক ত্রুটি হতে পারে। যদি আগে থেকে মিল কর্তৃপক্ষ মাইকিং করত, তাহলে আমাদের আখ নিয়ে এত কান্নাকাটি করতে হতো না। আমরা ক্ষেত থেকে আখ মাড়াইয়ের জন্য মিলে আনতাম না।’
আরেক আখচাষি নুরুজ্জামান গোলাপ বলেন, ‘আমি ২০ একর জমিতে আখ চাষ করেছি। এত পরিমাণ আখ চাষ করে আমি বিপাকে পড়েছি এখন। আখচাষিরা লোকসানের প্রহর গুনতে গুনতে একদিন কোনো কৃষক আর আখ চাষ করবে না।’
ঠাকুরগাঁও চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাখাওয়াত হোসেন জানান, চলতি বছরের গত ২৪ ডিসেম্বর পঞ্চগড়, সেতাবগঞ্জ ও ঠাকুরগাঁওয়ের আখসহ ৫০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াইয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এ বছর মাড়াই মৌসুম উদ্বোধন হয়। তার পরদিন ভোর থেকে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়।
তিনি বলেন, এরপর থেকে দুয়েক ঘণ্টা করে চিনিকল চললেও বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকে। এখন যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মিলটি আর চলছে না। ফলে মিলে আখ মাড়াই কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ আছে। শিগগিরই সমস্যা সমাধান করা হবে। সমস্যাটি কৃষকদের জানাতে মাইকিং করা হচ্ছে।’
রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের জেলা আহ্বায়ক মাহাবুব আলম রুবেল বলেন, ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আজ অবদি মিলটির তেমন যন্ত্রপাতির আধুনিকায়ন করা হয়নি। একদিকে মিল কর্তৃপক্ষ আখচাষিদের আখ চাষে উদ্বুদ্ধ করার কথা বললেও যন্ত্রপাতি আধুনিকায়নের দিকে তেমন কোনো জোরালো ভূমিকা নেই। ফলে কৃষকরা এর কুফল ভোগ করছে। আখ মাড়াই করতে না পাড়ার কারণে আখ শুকিয়ে যাচ্ছে। লোকসানের মুখে আখচাষিরা। এমন চলতে থাকলে এই মিলটিও বন্ধ হবে।