পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ইউপি চেয়ারম্যান, সাংবাদিকসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচজনকে গুরুতর অবস্থায় বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বাউফল পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে বিশেষ বর্ধিত সভায় সোমবার এক নেতার বক্তব্য দেয়াকে কেন্দ্র করে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, আগামী ৩১ জানুয়ারি বাউফল পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে দলীয় প্রার্থী বাছাই করতে বিশেষ বর্ধিত সভার আয়োজন করে উপজেলা আওয়ামী লীগ। সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটায় স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ স ম ফিরোজের সভাপতিত্বে সভাটি শুরু হয়।
পরে সভায় ফিরোজের ভাতিজা ও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক ওরফে আলকাচ মোল্লা বক্তব্য শুরু করেন। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার আলকাচকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি বক্তব্য দেয়ার কে? আপনাকে তো দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে ইউপি নির্বাচনে অংশ নেয়ায় বহিষ্কার করা হয়েছে।’
তখন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম ফারুকের অনুসারীরা সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেবকে গালাগাল করেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চেয়ার ছোড়াছুড়ি শুরু হয়।
এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ কর্মী সৌমিক, শামীম, আতিকুর রহমান ও কালাইয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মিজান মোল্লার নেতৃত্বে ৩০-৩৫ জনের একটি দল আবদুল মোতালেবের ছেলে বগা ইউপির চেয়ারম্যান হাসান মাহামুদকে টেনে হিঁচড়ে দলীয় কার্যালয় থেকে বাইরে নিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে।
এ সময় হাসানকে রক্ষা করতে তার অনুসারীরা এগিয়ে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এতে হাসান মাহামুদ ছাড়াও জসিম, ইসমাইল হোসেন, সুমন, ইমরান, মিজান মোল্লা, জগদিশসহ দুই পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হন। পরে বাউফল থানা পুলিশ আহত কয়েকজনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার ব্যবস্থা করে।
এদিকে, সংঘর্ষের ওই দৃশ্য ধারণ করতে গেলে সাংবাদিক অহিদুজ্জামানকে মারধর করে আহত করা হয় ও যুগান্তরের সাংবাদিক জিএম মশিউর রহমানের মুঠোফোন ছিনিয়ে নেয়া হয়। পরে সভা শেষ না করেই আবদুল মোতালেব হাওলাদার সভাস্থল ত্যাগ করেন।
এ ব্যপারে সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব হাওলাদার বলেন, ‘ঘটনার সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর সাহেব আমার মুঠোফোনে ফোন দিয়ে সবার উদ্দেশে বক্তব্য দিতে চান। তাই আমি আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেতা আলকাচ মোল্লাকে বলি, আপনিতো বহিস্কৃত নেতা। আপনার বক্তব্য দেওয়ার প্রয়োজন নাই। আর এতেই বিএনপি ও জাতীয় পার্টি থেকে আসা আরেক নেতা ইব্রাহিম ফারুকের অনুসারীরা বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করে আমাকে গালাগাল করে। আমার ছেলে সহ আমার নেতাকর্মীদের পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। এর জন্য সাংসদ আ স ম ফিরোজ সাহেব দায়ী।’
তবে এ ব্যপারে জানার জন্য সাংসদ আ স ম ফিরোজের মুঠোফোনে কল করলে তিনি ধরেননি।
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আল মামুন জানান, ‘বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’