ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে আগুন লাগার ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে এক পাড়ে পৌঁছায় বরগুনাগামী লঞ্চ এমভি অভিযান-১০। তবে এটি নোঙর না করে দ্রুত লঞ্চ থেকে নেমে পালিয়ে যান চালক ও সব স্টাফ। নোঙর না করায় জ্বলতে থাকা লঞ্চটি স্রোতের টানে আবার ভাসতে থাকে। এভাবে প্রায় ৪৫ মিনিট ভেসে লঞ্চটি অন্য পাড়ে গিয়ে থামে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। এর আগে সকালে লঞ্চটির অন্যতম মালিক হামজালাল শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘হামজালাল রাত ৩টার দিকে আগুন লাগার খবর পান। ঘটনার ১০-১৫ মিনিট পর চালক ও অন্যরা দ্রুত লঞ্চটিকে একটি পাড়ে নিয়ে যান। সব স্টাফ নেমে পালিয়ে যান। তারা নেমে যাওয়ার সময় কিছু যাত্রীও নেমে যান।
‘নোঙর না করে সবাই পালিয়ে যাওয়ায় জাহাজটি স্রোতে ভেসে যায়। আনুমানিক ৪৫ মিনিট পরে অন্য পাড়ে গিয়ে থামে। প্রথমে জাহাজটি পাড়ে আসার পর বেঁধে ফেললে অনেক যাত্রী নামতে পারতেন।’
তিনি বলেন, ‘হামজালাল রাত ৩টার দিকে আগুন লাগার খবর পেলেও কোনো কর্তৃপক্ষকে ফোনে বা অন্য কোনো মাধ্যমে খবরটি জানাননি।’
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘অতিরিক্ত যাত্রী চাহিদা তৈরি করতে লঞ্চটিতে গত নভেম্বরে অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়; যাতে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানো যায়। গ্রেপ্তার মালিকের তথ্য অনুযায়ী, দেরিতে ছেড়ে আগে পৌঁছানো গেলে লঞ্চে যাত্রী বেশি পাওয়া যায়।
‘লঞ্চটির ইঞ্জিন পরিবর্তন করেছিলেন একজন সাধারণ মিস্ত্রি। যথাযথ নিয়ম মেনে এটি পরিবর্তন করা হয়নি। এছাড়া কোন ট্রায়াল রান সম্পন্ন হয়নি। লঞ্চে কর্মরত তিনজন (মাষ্টার এবং ড্রাইভার) কর্মচারীর নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের কোনো অনুমোদন ছিল না।’
আগুন লাগা লঞ্চটিতে যাত্রীদের জন্য কোনো লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা ছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র তার কর্মচারীদের জন্য ২২টি লাইফ জ্যাকেট ছিল। যাত্রীদের জন্য ১২৭টি বয়া ছিল বলে গ্রেপ্তার মালিক জানিয়েছেন; তবে অধিকাংশ বয়াই যথাস্থানে ছিল না। এছাড়া লঞ্চটির কোন ইনসুরেন্স করা ছিল না বলে গ্রেপ্তার হামজালাল শেখ জানিয়েছেন।’
লঞ্চে আগুন লেগে প্রাণহানির ঘটনায় হামজালালসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
এর আগে ২৩ ডিসেম্বর রাত ৩টার দিকে ঝালকাঠির পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দেউরী এলাকায় সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে বিস্ফোরণের পর আগুন ধরে যায়। এতে এখন পর্যন্ত ৪০ জনের প্রাণহানির তথ্য জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস; নিখোঁজ অন্তত ৪০ জন।
পুড়ে যাওয়া লঞ্চটিতে কতজন যাত্রী ছিলেন, তার সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বলছে, লঞ্চটিতে অন্তত ৪০০ যাত্রী ছিলেন। তবে লঞ্চ থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের অনেকের দাবি, নৌযানটিতে যাত্রী ছিলেন ৮০০ থেকে এক হাজার।