দেশের গে বা পুরুষ সমকামী ও ট্রান্সজেন্ডার জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্তের হার বেড়েছে বলে সম্প্রতি একটি জরিপে উঠে এসেছে। দেশের ১২টি জেলায় এইচআইভি ভাইরাসের ঝুঁকিপূর্ণ চারটি জনগোষ্ঠীর ওপরে এই জরিপ চালানো হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের অধীনে পরিচালিত এ জরিপের শিরোনাম ‘এইচআইভি ভাইরাসের ইন্টিগ্রেটেড বায়ো বিহেভিয়ারেল সার্ভিল্যান্স’। সোমবার দুপুরে এটি প্রকাশ করা হয়।
জরিপে নারী যৌনকর্মী, পুরুষ সমকামী, ট্রান্সজেন্ডার এবং ইনজেকশনের মাধ্যমে রক্তের শিরায় মাদক গ্রহণকারী– এ চার জনগোষ্ঠীর ৯ হাজার লোকের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এদের মধ্যে ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক নেয়া জনগোষ্ঠী ৩ হাজার ৮০ জন, নারী যৌনকর্মী ৩ হাজার ১১ জন, পুরুষ সমকামী ২ হাজার ৭৮ জন ও ট্রান্সজেন্ডার ১ হাজার ৭২ জন। এদের বয়স ১৮ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে।
জরিপের ফলাফলে উঠে এসেছে ২০১৭ সালে পুরুষ সমকামীদের এইচআইভিতে আক্রান্ত হওয়ার হার ছিল শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ; তা ২০২০ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ১ শতাংশ। একই সঙ্গে ট্রান্সজেন্ডারদের মধ্যে ২০১৭ সালে এইচআইভি আক্রান্তের হার ছিল শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ; যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ২ শতাংশ।
জরিপের ফলাফল বলছে, নারী যৌনকর্মী ও শিরায় মাদক গ্রহণকারীদের মধ্যে গত জরিপের তুলনায় এইচআইভি আক্রান্তের হার কমেছে।
এ ছাড়া চার জনগোষ্ঠীর মধ্যে আগের তুলনায় সক্রিয় সিফিলিসের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। গত ২০১৭ সালে এ হার ৪ দশমিক ৮ শতাংশ থাকলেও তা বেড়ে ১১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এই হারকে উদ্বেগজনক বলছে বিশেষজ্ঞরা।
জরিপ দলের প্রধান ছিলেন বিএসএমএমইউর ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সাইফ উল্লাহ মুন্সি। তিনি জানান, আগের জরিপগুলোতে আমরা দেখেছি, ইনজেকশনের মাধ্যমে শিরায় মাদক গ্রহণকারীদের মধ্যে এইচআইভিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি ছিল। তবে এই জরিপে বিপরীত প্রবণতা লক্ষ করা গেছে।
তিনি আরও জানান, এইচআইভি ছাড়াও হেপাটাইটিস-বি ও হেপাটাইটিস-সি রোগের ওপরেও জরিপ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ইনজেকশনের মাধ্যমে রক্তের শিরায় মাদক গ্রহণকারীদের মধ্যে এখনও হেপাটাইটিস-বি ও হেপাটাইটিস-সি ভাইরাস বেশি লক্ষ করা গেছে।
তিনি বলেন, ‘উদ্বেগজনক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমাদের এইচআইভি ভাইরাস রুখতে যেসব কর্মসূচি চলমান রয়েছে, এগুলো আরও শক্তিশালী করতে হবে। সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, এগুলো আরও বেগবান করতে হবে।’
ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, শিরায় মাদক গ্রহণকারী, নারী যৌনকর্মী, সমকামী/পুরুষ যৌনকর্মী এবং ট্রান্সজেন্ডার – এই চার ধরনের জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভি/এইডসের ঝুঁকি বা যারা আক্রান্ত হচ্ছে তাদের মধ্যে এই রোগ সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। এটি নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হবে। স্বাভাবিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই রোগ যাতে না ছড়ায়, সেদিকে এখন থেকে নজর দিতে হবে।
দেশে এইডস পরিস্থিতি
বর্তমান বিশ্বে এইডস আক্রান্তের সংখ্যা ৩ কোটি ৮০ লাখ। এর মধ্যে নতুন আক্রান্ত ১ কোটি ৮০ লাখ। দেশে বর্তমানে এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার। চিকিৎসার আওতায় এসেছে মাত্র ৭ হাজার ৩৭৪ জন। এখনও শনাক্তের বাইরে রয়ে গেছে প্রায় ৭ হাজার। এদের মধ্যে রোহিঙ্গা ১০৫ জন।
বেশি ঝুঁকিতে চার জনগোষ্ঠী
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শিরায় মাদক গ্রহণকারী, নারী যৌনকর্মী, সমকামী/পুরুষ যৌনকর্মী এবং ট্রান্সজেন্ডার– এই চার ধরনের জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভি/এইডসের ঝুঁকি বেশি। ইউএনএইডসের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, সাধারণ মানুষের চেয়ে যৌনকর্মীদের এইচআইভি/এইডসের ঝুঁকি ২১ গুণ বেশি।