বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘দুবাই বসে ঢাকায় চাঁদাবাজি-হত্যা’

  •    
  • ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৬:৪৪

ডিবি কর্মকর্তা এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘কুখ্যাত সন্ত্রাসী জিসান ও তার ভাই শামীম দুবাইয়ে পালিয়ে আছেন। সেখানে বসে তিনি দেশের বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করেন। এসব কাজে তাকে সহযোগিতা করেন কাশিমপুর কারাগারে থাকা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি মুন্না এবং মামুন ওরফে ছক্কা মামুন। কারাগারে বসে মোবাইল ফোনে এই দুজন আবার তাদের অনুসারী ক্যাডারদের দিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি ও হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।’

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে পালিয়ে থেকে কুখ্যাত সন্ত্রাসী জিসান কাশিমপুর কারাগারে থাকা দুই দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির যোগসাজশে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি ও ‘টার্গেটেড হত্যাকাণ্ড’ চালাচ্ছেন।

অর্থের প্রয়োজন হলে দুবাই ও কারাগারে থাকা এসব সন্ত্রাসী মোবাইল ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করে দেশে টার্গেট নির্ধারণ করেন। সন্ত্রাসীদের নির্দেশ অনুযায়ী টার্গেটেড ব্যক্তির ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে গিয়ে চাঁদা দাবি করেন স্থানীয় ছিঁচকে মাস্তানরা। চাঁদা না পেলে এসব মাস্তান গুলি করে তাদের হত্যা করেন।

সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘কুখ্যাত সন্ত্রাসী জিসান ও তার ভাই শামীম দুবাইয়ে পালিয়ে আছেন। সেখানে বসে তিনি দেশের বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করেন। এসব কাজে তাকে সহযোগিতা করেন কাশিমপুর কারাগারে থাকা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি মুন্না এবং মামুন ওরফে ছক্কা মামুন। কারাগারে বসে মোবাইল ফোনে এই দুজন আবার তাদের অনুসারী ক্যাডারদের দিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি ও হত্যাকাণ্ড করে থাকেন।’

কারাগারে থাকা এই দুই সন্ত্রাসীর সঙ্গে তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী জিসানের এবং দেশে থাকা মাস্তানদের যোগাযোগের প্রমাণ পেয়েছে ডিবি।

গত ১৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় পূর্ব বাড্ডার আলিফ নগর এলাকায় জেনারেটর ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম খান টুটুলকে গুলি করে হত্যার হুমকি দিয়ে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন মাস্তানরা। সন্ত্রাসী জিসানের নামে এই চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা না দিলে তার সন্তানকে খুন করার হুমকি দেন মাস্তানরা। এই ঘটনায় বাড্ডা থানায় একটি মামলা করেন ব্যবসায়ী।

ডিবি পুলিশ কর্মকর্তারা এই ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ উদ্ধার করেন। ফুটেজ পর্যালোচনা করে গত ২১ ডিসেম্বর ওই ঘটনায় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী মো. নাসিরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২২ ডিসেম্বর তিনি আদালতে জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি ওমর খৈয়াম নিরু, জীবন হোসেন, ফারহান মাসুদ সোহান, নাঈম, রানা ও কাওছার আহমেদ ইমনসহ বিভিন্ন অপরাধীর নাম উল্লেখ করেন।

নাসিরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ডিবির গুলশান জোনের টিম পার্বত্য বান্দরবান জেলার দুর্গম এলাকা থেকে গত ২৬ ডিসেম্বর দুপুরে কাওছার আহমেদ ইমনকে গ্রেপ্তার করে। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী বাড্ডার বেরাইদ এলাকায় সন্ত্রাসীদের ভাড়া করা বাসা থেকে সেই দিন রাতে মোহাম্মদ জীবন হোসেনকে একটি পিস্তল, চার রাউন্ড গুলিসহ একটি ম্যাগাজিন ও এক হাজার ইয়াবা, ওমর খৈয়াম নিরুকে একটি রিভলবার, চারটি ২২ বোরের রিভলভারের গুলিসহ একটি ম্যাগাজিন ও ৪০০ ইয়াবা, ফারহান মাসুদ সোহানকে একটি বিদেশি পিস্তল, ৫ রাউন্ড গুলি এবং ৬০০ ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয়।

ইমনের তথ্য অনুযায়ী তার ঘরের একটি ব্যাকপ্যাকের ভেতর থেকে দুই হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয় এবং একই ঘরে থাকা মো. আসলামকেও দুই হাজার ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয়।

ডিবি কর্মকর্তা হাফিজ আক্তার বলেন, ‘দুবাইয়ে অবস্থানরত জিসান ও তার ভাই শামিম এবং কাশিমপুর কারাগারে থাকা ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মামুনের ক্যাডার সোহান, ইমন, জীবন এবং নিরুর টাকার প্রয়োজন হলে তারা এলাকার বড় ভাই মো. মহিন উদ্দিন জালালের কাছে যান এবং একটি কাজ বা টার্গেট দেয়ার জন্য বলেন। পরবর্তী সময়ে মো. মহিন উদ্দিন জালাল জেনারেটর ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম টুটুলের খোঁজ দেন। নীরু, জীবন ইমন কাজটি করার জন্য নাসিরকে ঠিক করেন।

কীভাবে গুলি করতে হবে অর্থাৎ পিস্তল চালাতে হয় তা বাসের হেলপার নাসিরকে শিখিয়ে দেন ক্যাডার জীবন হোসেন।

২০ ডিসেম্বর সকালে জীবন এবং নাঈম নাসিরকে অস্ত্র দিলেও ওই দিন নাসির গুলি করতে যেতে পারেননি। পরের দিন বিকেলে নাসির তার সহযোগী রানাকে নিয়ে টুটুলের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে হত্যার হুমকি দেন এবং চাঁদা দেয়ার কথা বলেন। এতে ব্যবসায়ী রাজি না হলে তাকে গুলি করে চলে যান। গুলি করার পর নাসির অস্ত্রটি রামপুরা ব্রিজের কাছে গিয়ে জীবনের কাছে ফেরত দেন।

যে অস্ত্র ব্যবহার করে ব্যবসায়ী টুটুলের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে গুলি করা হয়, সেই অস্ত্রটি আসামি জীবনের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদকালে তারা সবাই দুবাই প্রবাসী চিহ্নিত সন্ত্রাসী জিসানের ক্যাডার বলে স্বীকার করেন। তথ্যপ্রযুক্তির উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দুবাই প্রবাসী সন্ত্রাসী জিসানের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত হওয়া গেছে।

দক্ষিণ বাড্ডায় ২০০৬ সালের ফোর মার্ডার মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত এবং বর্তমানে কাশিমপুর কারাগারে অবস্থানরত মামুন ওরফে ছক্কা মামুনের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া গেছে। মূলত মামুন ও ছক্কা মামুনের মাধ্যমে জিসানের সঙ্গে ক্যাডার জীবনের পরিচয় হয়।

দুবাইয়ে অবস্থানরত জিসান কাশিমপুর কারাগারে অবস্থানরত আসামি মামুনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। পরবর্তী সময়ে জীবনের মাধ্যমে সন্ত্রাসী জিসানের সঙ্গে সোহান এবং অন্যদের পরিচয় হয়। তারা হোয়াটসঅ্যাপে তাদের যোগাযোগ রক্ষা করতেন।

এ ছাড়া অস্ত্র মামলায় কাশিমপুর কারাগারে থাকা আসামি মুন্নাও গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতেন এবং নির্দেশনা দিতেন।

জিসান একাধিকবার বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে সোহানকে অস্ত্র সরবরাহ করেন বলে সোহান স্বীকার করেন। প্রথম দিকে জীবন হোসেনের মাধ্যমে সন্ত্রাসী জিসান সোহানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করলেও পরবর্তী সময়ে সোহানসহ অন্যদের সঙ্গে জিসান সরাসরি যোগাযোগ রক্ষা করেন।

জিসান, মামুন, এবং মাহফুজ (মামুনের ভাই হত্যা মামলায় কাশিমপুর কারাগারে অবস্থানরত) বিভিন্ন সময়ে নিরু, জীবন, সোহান, আসলামসহ অন্যদের মামলায় হাজির হওয়াসহ অন্যান্য খরচ বিকাশের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেন। এই ক্যাডাররা বিভিন্ন সময়ে চাঁদাবাজির টাকা তুলে মামুনকে দিয়েছেন বলে জানা যায়।

গ্রেপ্তার পিচ্চি আসলাম ওরফে ক্যাশিয়ার আসলাম ইতোমধ্যে অস্ত্র মামলায় ৯ বছর কারাগারে বন্দি ছিলেন। গ্রেপ্তার অন্যদের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

ডিবি কর্মকর্তা হাফিজ আক্তার বলেন, ‘ব্যবসায়ী টুটুলকে যারা গুলি করেছেন, তারা সবাই নিম্ন আয়ের মানুষ। কিছু সন্ত্রাসী তাদের ব্যবহার করেছেন। তারা টাকার বিনিময়ে গুলি করেন।’

এই সন্ত্রাসীর চারজনের রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে। তিনজন বিএনপি ও একজন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছে ডিবি।

হাফিজ আক্তার বলেন, যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেন তারা রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার চেষ্টা করেন। গ্রেপ্তার সাতজনের মধ্যে তিনজন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং একজন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

তিনি বলেন, সন্ত্রাসীরা সব সময় চেষ্টা করেন রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে তাদের অপরাধ কর্মকাণ্ড চালানোর। তবে তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে অপরাধ কর্মকাণ্ড করে অর্থ আদায় করা।

জিসানকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর