খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের কোনো অবনতি হলে এর জন্য বিএনপিই দায়ী থাকবে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
সচিবালয়ে সোমবার সমসাময়িক ইস্যুতে সাংবাদিকেদের সঙ্গে মত বিনিময়ের সময় তিনি এ কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির তত্ত্বাবধানে যেহেতু তার চিকিৎসা হচ্ছে এখন যদি বেগম জিয়ার স্বাস্থ্যের কোনো হানি হয় সেজন্য বিএনপি এবং তার চিকিৎসার দায়িত্বে যারা আছেন তারাই দায়ী থাকবেন। কারণ, তাদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা হচ্ছে, সরকারের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা হচ্ছে না। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি হয় বা যদি কিছু হয় তাহলে তারাই দায়ী থাকবেন।
‘বেগম খালেদা জিয়াকে দেশের অভ্যন্তরে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। তিনি যেভাবে চেয়েছিলেন সেভাবেই চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। যে হাসপাতালে চেয়েছেন সে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।’
খালেদাকে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তার চিকিৎসা সাধারণভাবে হওয়ার কথা ছিল, সরকারে তত্ত্বাবধানে কোনো সরকারি হাসপাতালে। সেটি বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালেই হোক বা অন্য কোনো হাসপাতালে হোক। কিন্তু সরকারের তত্ত্বাবধানে নয়, তারা যেভাবে চাচ্ছে সেভাবে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা হচ্ছে।
‘অর্থাৎ দেশের অভ্যন্তরে তিনি সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হওয়ার পরেও। আমার মনে হয় বাংলাদেশে এর আগে এরকম কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না আমার জানা নেই। দেশ বিভাগের পর বা স্বাধীনতার পূর্বেও এমন হয়েছে কি না জানা নেই। দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার পরেও বেগম জিয়া মুক্তভাবে জীবনযাপন করছেন। তিনি পরিবার পরিজনের সঙ্গে থাকছেন।’
গত ১৩ নভেম্বর বিকেলে খালেদা জিয়াকে গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে এভারকেয়ারে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় পরের দিন ভোরে তাকে সিসিইউতে নেয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসা চলছে তার।
এ অবস্থায় তাকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার দাবি জানিয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেন তার ভাই। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বরাবরই বলা হচ্ছে, প্রচলিত আইনে কোনো দন্ডপ্রাপ্ত আসামিকে বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
বিএনপি নেত্রীকে বিদেশ পাঠানোর বিষয়ে আইনমন্ত্রী সরকারের অবস্থান একাধিকবার পরিষ্কার করেছেন বলেও জানান তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘তাকে বিদেশ পাঠানোর বিষয়ে আইনমন্ত্রী আগেও ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আইনিভাবে যে তাকে বিদেশ পাঠানো যায় না এটা আইনমন্ত্রী ব্যাখ্যা দিয়েছেন।’
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে কারাগারে যাওয়া খালেদা জিয়ার দণ্ড পরে আপিলে দ্বিগুণ হয়। পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় তার হয় ৭ বছরের কারাদণ্ড।
উচ্চ আদালতে জামিন করাতে ব্যর্থ হওয়ার পর খালেদা জিয়ার স্বজনরা গত বছর প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন নিয়ে যান। সরকার প্রধানের নির্বাহী আদেশে দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত হওয়ার পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফেরেন খালেদা। এরপর তার সাময়িক মুক্তির মেয়াদ দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে।
তবে মুক্ত হওয়ার পর বিএনপি নেত্রীর স্বজনরা সরকারের কাছে একাধিকবার তাকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। গত এপ্রিলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর এক দফা সেই দাবি নাকচ করে সরকার।
সম্প্রতি খালেদা জিয়াকে আবার হাসপাতালে নেয়া হলে খালেদাকে ফের বিদেশ নিতে ফের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে তার পরিবার। এবারও এ বিষয়ে সরকার থেকে কোনো সবুজ সংকেত পাওয়া যাচ্ছে না।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মাঝে দাবি করেছেন, তাদের নেত্রী জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন। বিদেশে পাঠাতে দেরি হলে তাকে বাঁচানো কঠিন হয়ে যাবে।