‘রাত ৩টার দিকে বিকট এক শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই মানুষ আগুন আগুন বলে ছোটাছুটি শুরু করে। লঞ্চের সবাই এতটাই আতঙ্কিত ছিল যে কেউ আগুন নেভানোর ন্যূনতম চেষ্টা পর্যন্ত করেনি।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিউজবাংলার কাছে কথাগুলো বলছিলেন ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে আগুনের ঘটনায় বেঁচে ফিরে আসা মো. মহিউদ্দিন খান।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মহিউদ্দিন খান বলেন, ‘আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে লঞ্চের সব লাইট বন্ধ হয়ে যায়। মানুষ অন্ধকারে আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। আমি লঞ্চের দ্বিতীয় তলায় ছিলাম।
‘প্রাণে বাঁচতে নিচতলায় নামতে গিয়ে দেখি গেটে তালা ঝুলছে। আগুন লাগার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ডেক গরম হয়ে যায়। তাপের কারণে কেউ ঠিকভাবে দাঁড়াতে পারছিলাম না। লঞ্চের রেলিংগুলোও আগুনের তাপে প্রচুর গরম হয়ে গিয়েছিল।
‘একপর্যায়ে মানুষের ধাক্কাধাক্কিতে অন্ধকারে লঞ্চের ডেকে পড়ে যাই। এতে আমার পা, মুখ ও হাত আগুনের তাপে ঝলসে যায়। মনে হচ্ছিল কেউ জ্বলন্ত চুলার মধ্যে আমাকে ফেলে দিয়েছে। অনেক কষ্টে দোতলা থেকে নদীতে ঝাঁপ দিই।’
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার এই বাসিন্দা বলেন, ‘পানি সাঁতরে কীভাবে তীরে আসলাম, কীভাবে বাঁচলাম আমি জানি না। এরপর গ্রামবাসী আমাকে উদ্ধার করে একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
‘আল্লাহ নিজে বাঁচিয়েছে। সকালে ফায়ার সার্ভিসের লোকরা আমাকে উদ্ধার করে বরিশাল মেডিক্যালে নিয়ে আসে। লঞ্চের দ্বিতীয় তলার গেট আটকানো না থাকলে হয়তো অনেক মানুষ বেঁচে যেত।’
আহত মহিউদ্দিনের শ্যালক মিরাজ হোসেন জানান, ‘তার দুলাভাই ঢাকার মোহাম্মদপুরে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করেন। প্রায় পাঁচ মাস পর সাত দিনের ছুটি পেয়েছিলেন তিনি। বাড়িতে তার বোন আর দুই ভাগ্নে থাকে।
‘তাদের সঙ্গে দেখা করতেই তিনি একা বাড়িতে আসছিলেন। ঘটনা শোনার পর খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন তার দুলাভাই হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনা শোনার পর থেকেই তার বোন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।